Home জাতীয় সারা দেশে ভয়ংকর ‘আইস’

সারা দেশে ভয়ংকর ‘আইস’

68

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রামসহ সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল ম্যাথ বা ‘আইস’। ঢাকা মহানগরীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে তৈরি হচ্ছে এ মাদকের চাহিদা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং সাগরে মাছ ধরায় নিয়োজিত জেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে এ মাদক পাচারে। এ অঞ্চলে বিদায়ি বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের ২৩ কেজি ১১ গ্রাম আইস উদ্ধার করেছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

টেকনাফে প্রতি কেজি আইসের দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হলেও ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রতি কেজির মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। মিয়ানমারের ইয়াবা কারবারিদের সহায়তায় দেশের ইয়াবা পাচারকারীরা সারা দেশে আইস ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, ইয়াবার মতো একই পদ্ধতি ও পথ ব্যবহার করে দেশে আনা হচ্ছে আইস। এতে মেথামফিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকায় আইস মাদক হিসাবে ইয়াবার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী নেশা সৃষ্টিকারী। মিয়ানমার থেকে আনা প্রতি কেজি আইস টেকনাফে আড়াই লাখ বা তিন লাখ টাকায় বিক্রি হলেও কক্সবাজারে এর দাম পড়ে ৭-৮ লাখ টাকা। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি অর্ধ কোটি টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশে আইসের বাজার সৃষ্টির লক্ষে প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে বাংলাদেশের পাচারকারীদের কাছে আইস দিচ্ছে মিয়ানমারের পাচারকারীরা। ২০২১ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ এবং উখিয়া এবং পিরোজপুরে বিপুল পরিমাণ আইস ধরা পড়ে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দেশে আইস পাচারে জড়িত। মিয়ানমার এবং টেকনাফ সীমান্তে ভাষাগত সুবিধার কারণে সেখানকার লোকজন ইয়াবাসহ আইস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিকভাবে আইস পাচারে রোহিঙ্গাসহ টেকনাফ ও কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাকারবারি এবং উখিয়া, টেকনাফের একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। ওই সিন্ডিকেটের অনেকেই চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে অবস্থান করে ইয়াবার সঙ্গে আইস পাচার নিয়ন্ত্রণ করছে।’

জানা গেছে, বিদায়ি বছরে সাড়ে ১১ কোটি টাকা মূল্যের ২৩ কেজি ১১ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩৩টি অভিযানে এসব মাদক উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে বিজিবি উদ্ধার করেছে ১১ কেজি ৮২১ গ্রাম, র‌্যাব ৫ কেজি ১১৫ গ্রাম, মাদকদ্রব্য দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২ কেজি ৪৬৫ কেজি, জেলা পুলিশ ২ কেজি ৯৫ গ্রাম, কোস্টগার্ড ১ কেজি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ৫১৫ গ্রাম আইস উদ্ধার করে। এসব আইস উদ্ধারের ঘটনায় ৪২ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দা। চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম ক্রিস্টাল ম্যাথ আইস ধরা পড়ে বিদায়ি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। নগরীর খুলশী থানার মোজাফ্ফর নগর বাইলেন থেকে ১৪০ গ্রাম নতুন ধরনের এ মাদক উদ্ধার করে র‌্যাব-৭। এ সময় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে শফিউল আজম (৩৪) ও ইয়াসিন রানা (৫০) নামে দুই ব্যক্তি। একের পর এক বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ছে এ মাদক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, নানা কৌশলে আইস চট্টগ্রামকে ব্যবহার করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জরুরি পণ্য পরিবহণের ট্রাক, লাশবাহী গাড়ি, তেলের লরি, অ্যাম্বুলেন্সে, প্যাকেটে করে, বিভিন্ন মোড়কে, ট্রাভেল ব্যাগে, বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস পার্শ্বেলে এবং মালামাল পরিবহণের বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এবং সড়কপথে বিভিন্ন স্থানের দূরপাল্লার যানবাহন এবং গণপরিবহণে করে এ মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কার্গো বিমানের বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে কাঁচা মালামাল, বিমানযাত্রীর লাগেজ এবং ট্রাভেল ব্যাগে সুকৌশলে আকাশপথেও আইস পাচার হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যাতি চাকমা বলেন, ‘ইতোমধ্যে আইস নামক মাদকের বেশ কটি চালান ধরা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি ইয়াবার সঙ্গে মিয়ানমার থেকে আসছে। ইয়াবার মূল উপাদান দিয়েই আইস তৈরি। ক্ষেত্র বিশেষে এ মাদকে নেশার তীব্রতাও বাড়ে। তাই এ মাদক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আগেই সর্বমহলকে সচেতন হতে হবে।-যুগান্তর