Home মতামত রঙ্গিন টিভি এবং গাজরের কুচি

রঙ্গিন টিভি এবং গাজরের কুচি

51

সাইফুল ইসলাম শিশির:
ক্ষমা করুণ! আমার মেমোরি আমার সাথে বিট্রে করছে। সময় কালটা ঠিক মনে করতে পারছি না। সম্ভবত ‘৮০ সালের কথা। এক পড়ন্ত বিকেলে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে গিয়ে হাজির। ডক্টর বজলুল মোবিন চৌধুরী, যিনি বিএমসি নামে সমধিক পরিচিত। স্যার তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট এ্যডভাইজার। তাঁর কাছে একটা বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি। পিয়ন বললো, এইমাত্র স্যার বেরিয়ে গেলেন, এক মিনিটও হয়নি। আমি দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।

বিএমসি স্যার অসম্ভব কেতাদুরস্ত- স্টাইলিশ মানুষ। ছয় ফুটের মতো লম্বা, গৌর বর্ণ, এক স্বপ্নপুরুষ। চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে সেকেন্ড আর্টস বিল্ডিং থেকে গাড়ি পার্কিং এর দিকে যাচ্ছেন। আমি যখন তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম, ততক্ষণে স্যার গাড়ির দরজা খুলে স্টিয়ারিং ধরেছেন। আমাকে দেখে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলেন, “কী খবর শিশির? আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। এভাবে বলা ঠিক হবে কিনা। স্যার আমাকে ভ্রুপল্লবে গাড়িতে উঠতে বললেন। আমি পিছনের দরজার দিকে তাকাতেই, তিনি পাশের সীট দেখিয়ে দিলেন। সেদিন জেনে ছিলাম মালিক যখন গাড়ি চালায়, সহযাত্রীকে তার পাশে বসতে হয়। শানেনজুল টাও তিনি বলে দিলেন।

প্যারিস রোড হয়ে পশ্চিম পাড়া টিচার্স কোয়ার্টার-এ যাচ্ছি। মাত্র ৩/৪ মিনিটের পথ। হয়ত তাও হবে না। লং ড্রাইভ এর কথা জানি। দু’বছর আগেও টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে কক্সবাজার ফিরেছি। কিন্তু স্যারের সাথে সেদিন প্যারিস রোড হয়ে এক চিলতে পথ পাড়ি দেবার সেই দুর্লভ স্মৃতি আমার আজও মনে পড়ে। স্বপ্ন ড্রাইভ। গাড়িতে বসে আমার প্রয়োজনীয় কথা বলতে চেয়েছিলাম। স্যার বাধা দিয়ে বললেন, বাসায় গিয়ে শোনা যাবে।

স্যার বছর দুয়েক হলো বিলেত থেকে ডক্টরেট করে ফিরেছেন। ছিমছাম,পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন বসার ঘর। কয়েকটা মাত্র শোপিস কিন্তু কী পরিপাটী করে সাজানো। পরিমিত বোধ সৌন্দর্যশৈলীর আর এক মাত্রা- সুন্দর প্রকাশ।

স্যার ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে এলেন। ম্যাডাম নাস্তা পাঠিয়ে নিজেও এসে বসলেন। নুডলস এবং ভেজিটেবল রোল। ভেজিটেবল রোলের ভিতর গাজরের কুচিগুলো যেন সেদিন একটু বেশি লাল, বেশি রঙ্গিন মনে হচ্ছিল। ম্যাডাম বললেন, তোমার স্যারের কাছে তোমার কথা শুনেছি। অনেক কথাই যা প্রশংসা সূচক। খেয়াল করলে ম্যাডামের কথার ভিতর সিলেটি টান বোঝা যায়। প্রশংসা কার না ভালো লাগে? তার উপর সিলেটি টানে।

নাটরে টিভি রিলে স্টেশন বসেছে তাতো অনেক দিন হলো। সম্প্রতি টিভিতে রঙ্গিন সম্প্রচার চালু হয়েছে। হল গুলোতে ছাত্ররা তখনও টিভি সেটের সামনে রঙ্গিন গ্লাস সেট করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে। ইতোমধ্যে দাবী উঠেছে হলে হলে রঙ্গিন টিভি দিতে হবে।

ম্যাডাম বললেন টিভি ছেড়ে দেই? আমি তো থ। জীবনে প্রথম টিভিতে রঙ্গিন প্রোগ্রাম দেখছি। দারুণ ভালো লাগার বিষয়। যখন সারের বাসা থেকে ফিরছি, তখন চোখের সামনে টিভির রঙ্গিন দৃশ্য- ভেজিটেবল রোলে লাল গাজরের কুচি, সিলেটি টানে প্রশংসার ডালি সব যেন মাথার মধ্যে একাকার হয়ে গেছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, স্যারকে যে কথা বলতে গিয়েছিলাম তা আর বলাই হয়নি।


১৬ আগস্ট, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
থানা রোড, সিরাজগঞ্জ- ৬৭০০