Home রাজনীতি এইচটি ইমামের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে

এইচটি ইমামের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে

45

ডেস্ক রিপাের্ট: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে থেকে টানা তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন এইচটি ইমাম। অথচ তিনি কখনো সংসদ সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বিশ্বস্ততার সঙ্গে নিভৃতে আওয়ামী লীগের হয়ে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের প্রয়াত সদস্য এইচটি ইমাম। আগামী সংসদ নির্বাচন পরিচালনার গুরুদায়িত্ব দিতে এখন নতুন একজনকে খুঁজতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যে প্রয়াত এই নেতার মতো দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বটি পালন করতে পারেন। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩৩ সদস্যের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার মূল কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম ছাড়াও দুই প্রভাবশালী সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা গেছেন। এই তিনজনের জায়গায় আসতে পারেন তিন নতুন মুখ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদের তিন বছর পূর্ণ করবে এ বছরের ৩০ ডিসেম্বর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি হাতে পাচ্ছে দুই বছরেরও বেশি সময়। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবারের প্রেক্ষাপট অন্যরকম। করোনা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিয়েছে। এর মধ্যেই ‘জীবন ও জীবিকা’-এ দুটো বিষয়কে প্রাধান্য নিয়ে পথ চলছে ক্ষমতাসীন দলটি। করোনায় সর্বাত্মকভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সব রকম সহায়তা দিয়ে তাদের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘রোডম্যাপ’ প্রণয়ন নিয়েও ভাবছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। বরাবরই আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এই কমিটির চেয়ারম্যান থাকেন। ভেতরে ভেতরে সেই প্রস্তুতিও চলছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এইচটি ইমাম। এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে দলটি। এই কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রথমবারের মতো পরিচালনা কমিটিতে যুক্ত করা। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। যদিও সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলেন। দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নির্বাচনি মহাযজ্ঞে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। দলের নেতাকর্র্মীদের বিশ্বাস, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায়ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যাবে।
দলের একাধিক নেতার মতে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এইচটি ইমাম। গত ৪ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় কো-চেয়ারম্যান পদে বিকল্প একজনকে খুঁজতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। দিনশেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কাকে এই পদে বসাবেন-তিনিই ঠিক করবেন।
এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান শনিবার বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে করোনা মোকাবিলাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। আগে মানুষের জীবন, তারপর অন্যকিছু। তবে এটাও ঠিক- আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে বিশ্বাস করে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। তাই নির্বাচনের ভাবনাটাও আমাদের নেতাকর্মীদের মাথায় থাকে। কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের বাইরে তো আর কোনো পথ আমাদের জানা নেই। তিনি আরও বলেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঠিক করবেন।
এর আগে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় শেখ হাসিনার সঙ্গে থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি পরাজিত হয়, ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন এইচটি ইমাম। শাহ এএমএস কিবরিয়া সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হলে পরে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে কো-চেয়ারম্যান করা হয় তাকে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইচটি ইমামকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদান রাখার পাশাপাশি এইচটি ইমাম ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব। পুরো নাম হোসেন তৌফিক ইমাম হলেও পরে তিনি এইচটি ইমাম নামেই দেশে-বিদেশে সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন।-যুগান্তর