Home জাতীয় বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

30

গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা

স্টাফ রিপোটার: নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই দেশের উন্নতির স্বার্থে ও নারীর প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে কমাতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস কাবে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এ সব কথা বলেন তারা। বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তৃতা করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. হিলালউদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বনশ্রী মিত্র, মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া মোসলেম, ওয়াইডব্লিউসিএ’র সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার, ব্রাকের জেন্ডার জাস্টিস প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নবনীতা চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ফাতেমা আকতার ডলি, নেডস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারা খাতুন, অর্থনীতি পরিষদের সহ সভাপতি ড. হান্নানা বেগম, নারী আন্দোলন কর্মী নাজনীন পাপ্পু, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিগার সুলতানা নীপা, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান, বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমী প্রমুখ।
বৈঠকে রোকেয়া কবীর বলেন, স্বাধীন দেশে নারীরা কখনোই একটি বৈষম্যমুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অবস্থা পায়নি। কৃষি, শিল্পখাত থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে নারীর সবেতন-অবৈতনিক অবদানের কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মতায়নের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকার ফলে মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে নারীর প্রতি নির্যাতন-সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের বনশ্রী মিত্র বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতা নেই। সকল ক্ষমতার মূল উৎস হলো অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সম্পদ ও সম্পত্তিতে মালিকানা। সেখানে নারীরা অনেক পিছিয়ে। এই অবস্থায় নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সৃদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুনি। যা পরিবার, সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করবে।
অ্যাডভোকেট মো. হিলালউদ্দিন, রাষ্ট্রের অন্যান্য আইন বিভিন্ন সময়ে সংশোধন, পরিবর্তন হলেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন সেটা ধর্ম দ্বারা পরিচালিত। সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের অন্যতম ভিত্তি ‘বৈষম্যহীনতা’র সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন বহাল থাকার যৌক্তিক ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।
ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান নারী পুরুষের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য না করলেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আইন, কর্মসূচীতে বৈষম্য দেখা যায়। নারী কিছুটা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অধিকার ভোগ করতে করতে পারলেও ব্যক্তিগত অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে, যার মূলে আছে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা। ধর্মের ব্যবহারের মাধ্যমেও সমাজকে ভাগ করে ফেলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দেওয়া হচ্ছে। উত্তরাধিকারের আইনসহ নারীর সুরক্ষায় ইউনিফর্ম ফ্যামিলী কোড চালু করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
মণীষা সরকার বলেন, উত্তারাধিকারে নারীর সমান অধিকার কোনো দয়া দাক্ষিন্য নয়, এটা নারীর অধিকারের অংশ বা পাওনা। স্বাধীনতার মূলনীতি তথা সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকারসমূহ লঙ্ঘন করা থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির স্বার্থে বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে সকল ধর্ম ও লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য উত্তরাধিকারে সমান ব্যবস্থা প্রণয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে হলে সকল জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বা গার্মেন্টসের সস্তা শ্রমিক হিসেবে জনশক্তিকে রেখে দিলে অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না। সেজন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সমাজের সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা, দক্ষতা ও পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে। এর মূল ভিত তৈরি হবে উত্তরাধিকারে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।