Home জাতীয় স্বজনদের আহাজারি : দেশের ইতিহাসে এই প্রথম যাত্রীবাহী লঞ্চে এরকম ভয়াবহ...

স্বজনদের আহাজারি : দেশের ইতিহাসে এই প্রথম যাত্রীবাহী লঞ্চে এরকম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা!

103

আহমেদ জালাল : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের স্বজনদের আহাজারিতে নদীপাড়ের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ঘটনাস্থলে নদীতীরে স্বজনরা ভিড় করছেন। বাড়ছে নদীর তীরে স্বজনদের আহাজারি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে। ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ আছেন আরও অনেকেই। এরমধ্যে ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে ৩৬ জনের লাশ। বেশিরভাগ লাশ পুড়ে গেছে। শরীর ও মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা। বাকি পাঁচ জনের লাশ স্বজনরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে না পেরে ঘটনাস্থল ও বরিশাল হাসপাতালে গেছেন অনেক স্বজন। আহতদের মাঝে কেউ কেউ স্বজনদের খুঁজে পেলেও অনেকে পাননি।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথম যাত্রীবাহী লঞ্চে এরকম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা অতীতে এরকম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলের কাছে সুগন্ধা নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চটি। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে কতো যাত্রী ছিলেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে নিশ্চিত হওয়া যায়নি নিখোঁজের সংখ্যাও। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা যাত্রীদের অভিযোগ, অভিযান-১০ লঞ্চটি ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। লঞ্চে ছিল না অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা। অগ্নিনির্বাপণের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলো ছিল বিকল। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বছর দুয়েক আগে চালু হয় বিলাসবহুল এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ। বরিশালসহ, বরগুনার, বেতাগী কাঁকচিড়া ঘাটে যাত্রী বহন করতো নৌযানটি। মাত্র ১৫ দিন আগে মেরামতের কাজ হয় এটির। এরপর চারটি ট্রিপ সম্পন্ন করে।
লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জন দগ্ধ যাত্রীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান জানিয়েছেন, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা থেকে একটি দল বরিশালে আসছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে জানানো হয়েছে, ৩১০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল লঞ্চটি। যাত্রীরা বলছেন, প্রায় এক হাজারের মতো যাত্রী ছিল লঞ্চে। ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় ৩১০ যাত্রীর বহনের ঘোষণা দেয় অভিযান-১০। তবে এর ২/৩ গুণ বেশি যাত্রী ছিল লঞ্চটিতে, দাবি উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের। কর্তৃপক্ষের দাবি, লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ৯০০ জন।
স্থানীয়রা বলছেন, লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রীই বরগুনা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসতে সময় লাগছে। তাই নিখোঁজদের খবর এখনও তেমনভাবে মিলছে না। স্থানীয়রা বলছেন, লঞ্চে হাজার খানেক যাত্রী ছিলেন। লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকের যাত্রী ও বরগুনার বেতাগীর বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, এ লঞ্চে ৭০০-৮০০ যাত্রী ছিলেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগেই চেষ্টা করেছেন, লঞ্চ থেকে লাফিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে। আর যারা পারেননি, তারা পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন। বরিশাল নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক বরিশাল এসএম আজগর আলী জানান, ঢাকা সদরঘাটের হিসেব অনুযায়ী ৩১০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। যেটি ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ঠিক রয়েছে। যদিও লঞ্চের কাউকে না পাওয়ায় এর থেকে বেশি যাত্রী থাকার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বরগুনাগামী অপর একটি লঞ্চের স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, লঞ্চের মাস্টার-ড্রাইভাররা নিরাপদে লঞ্চ থেকে নামতে পেরেছেন। তবে তারা ভয়ে হয়তো আত্মগোপনে রয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ যাত্রীদের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, লঞ্চে আমাদের হিসেব মতে ৩৫০ এর মতো যাত্রী ছিল। তবে এর বেশি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে। তাছাড়া লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে বলে জানতে পেরেছি। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা দুর্ঘটনায় নিহত সব পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুসসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে আহতদের মেডিকেলে দেখতে যান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য,পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক(মন্ত্রী),আওয়ামীলীগ সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোডের্র সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি’, বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ,। এসময় তাদের সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব মোঃ লোকমান হোসেন সহ কর্মকর্তাবৃন্দ। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। এ-সময় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
অভিজ্ঞমহল বলছেন, দেশের প্রতিটি লঞ্চেই ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী বহন করে। লঞ্চে আপদকালীন সময়ে জীবন রক্ষার জন্য বেশকিছু সরঞ্জাম থাকার কথা। লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা অনুসারে এসব সরঞ্জাম থাকার কথা। এরমধ্যে লাইফ-বয়া, লঞ্চের ছাদে ছোট বোট অন্যতম। অতীতে যাত্রীবাহী কোনও লঞ্চ বা জাহাজে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনি। পানির উপরে আগুনে পুড়ে এতো মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় লঞ্চ মালিক, যাত্রী ও নৌ মন্ত্রণালয়সহ সবাই হতবিহব্বল। শীতের লেপ, কম্বল ও পোশাক থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা অনেকের; যা দাহ্য পদার্থ হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহের শেষ দিন থাকায় বৃহস্পতিবার লঞ্চটিতে অনেক যাত্রী ছিল। ঘটনার সময় সবাই ছিল ঘুমে। এজন্য প্রাণহানি বেশি হয়েছে, লঞ্চটিও ছিল মাঝনদীতে। তাছাড়া লঞ্চটি চলতে থাকায় বাতাসে আগুনে আরও ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অভিযান-১০ নামের এই লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষার সরঞ্জাম ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক (ট্রাফিক) রফিকুল ইসলাম এর ভাষ্য, ‘লঞ্চে জীবন রক্ষার সরঞ্জাম থাকার কথা। সেটা কতগুলো ছিল, যাত্রীরা সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল কিনা, তাও দেখার বিষয়।’ ‘আগুন দোতালায় সূত্রপাত হলে সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার ইস্টিংগুইসার ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে লঞ্চটির ছাদে কোন ছোট বোট ছিল না।’ দেশে এমন ঘটনা অতীতে আর ঘটেনি। ডক ইয়ার্ডে কাজ করার সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আছে। তবে যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুনের ঘটনা এবং প্রাণহানি এটাই প্রথম।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে ডর্ক ইয়ার্ডে মেরামতে থাকা লঞ্চে, যাত্রীবাহী লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষে, কোনও একটি কেবিন বা কক্ষে আগুনের ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও বড় কোনও আগুনের ঘটনা নেই, এটাই প্রথম।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত অনেকসময় ইঞ্জিন রুমে আগুনের ঘটনা ঘটে। সেখানে অগ্নিনির্বাপকের সকল ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু অভিযান-১০ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি আগুন দোতলা থেকে সূত্রপাত হয়েছে। কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত হলো, তা আমরা তদন্ত করে দেখবো।’ বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহীদুল হক বলেন, আমি লঞ্চে এমন অগ্নিকাণ্ডের কথা আর শুনিনি। ঘটনার পর আমিও খোঁজ নিয়েছি, এমন ঘটনা আর অতীতে ঘটেনি। এটি কেন ঘটলো, কীভাবে ঘটলো তা তদন্ত করে বের করতে হবে।’
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘দগ্ধ ৭০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। আমাদের পাঁচটি ইউনিট উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। পুরো লঞ্চটি পুড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘লঞ্চটির ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। লঞ্চে হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। পুরো লঞ্চে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।’ ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে বলেন, ‘লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী ছিলো বরগুনার। আগুন থেকে বাঁচতে এদের মধ্যে অনেকে নদীতে লাফ দিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুনের ঘটনায় দগ্ধ ৮০-৯০ জন বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বরিশালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখানে দগ্ধ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক যাত্রী ও তাদের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। আকস্মিকভাবে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের লেলিহান শিখা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন ও এর সঙ্গে ধোঁয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচাতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন। এ সময় লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। তাদের ধাক্কায় ও পায়ের নিচে পদদলিত হয়ে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে ডাক-চিৎকার দিতে থাকেন। যে যেভাবে পেরেছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছেন। অনেকেই স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন। নিচতলার ইঞ্জিন রুম সংলগ্ন এলাকায় যেসব যাত্রী ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা হন তারাই বেশি দগ্ধ হন। এ সময় কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা বরগুনার তালতলী উপজেলার মোস সোনিয়া বেগম (২৫) নামের এক যাত্রী আহাজারি কণ্ঠে জানান, লঞ্চে আগুন লাগার সময় তিনি ইঞ্জিন রুম ওপরে দোতলার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ডেক গরম হয়ে চারিদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চের সঙ্গে বাঁধা দড়ি বেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নেমে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তার মা রেখা বেগম এবং ৫ বছরের বড় ছেলে জুনায়েদ সিকদার এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। মুনুসুর নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ জানান, ‘নলছিটির পরপরই লঞ্চটিতে আগুন লাগে। তখনও এর মাত্রা প্রকট ছিল না। যাত্রীরা লঞ্চটিকে তীরে নিতে স্টাফদের গালমন্দও করেছে। তবে চালক কিছুটা তীরে নিয়ে আবার লঞ্চটিকে নদীর মধ্যে নিয়ে আসেন। এ সময় আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে, বেশিরভাগ নদীতে ঝাঁপ দেয়। লঞ্চের যাত্রী আব্দুল্লাহ বলেন, যারা ঝাঁপ দিতে পারেনি বা যারা সাঁতার জানেন না তারা পুড়েই অঙ্গার হয়ে গেছেন। যদি লঞ্চটিকে কোনোভাবে সঙ্গে সঙ্গে তীরে নেওয়া যেতো তাহলে এতো লোক মারা যেতো না। রিনা নামে অপর এক যাত্রী জানান, পুরো লঞ্চে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে কাউকে দেখা যায়নি। হয়তো তাদের আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত সরঞ্জামই ছিল না। ঘটনাস্থলে লঞ্চটি পরিদর্শনে এসে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চালকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তাতে চালকের অদক্ষ ছিল হয়তো। তবে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যারা আহত নিহত হয়েছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়। এরমধ্যে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। অপরদিকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক (ডিসি) জোহর আলী জানান, তাদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।