Home মতামত সিইসি’র “জয়বাংলা” শ্লোগান উচ্চারণ না করা কি নিরপেক্ষতার মাপকাঠি?

সিইসি’র “জয়বাংলা” শ্লোগান উচ্চারণ না করা কি নিরপেক্ষতার মাপকাঠি?

39

সোহেল সানি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণদান করেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভাষণটি নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ ও অসাধারণ। ভাষাশৈলী ও সংবেদনশীলতার দিক দিয়ে শ্রতিমধুরও বটে। একথায় গ্রহণযোগ্য ও দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূলে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে একটি প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণ শেষে রাষ্ট্রীয় শ্লোগান জয়বাংলা কেন বর্জন বা উপেক্ষা করলেন! নির্বাচন কমিশনও সংসদ, সরকার তথা সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় একটি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। ভোটার হিসাবে আমার বা অনেকের মনে এই মর্মে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে যে, জয়বাংলা শ্লোগান মুখে ধারণ না করা কি নিরপেক্ষতার মানদন্ড? যদি তা হয়ে থাকে , তাহলে তা রাষ্ট্রীয় একটি আত্মঘাতীমূলক কাজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা যে সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে , এ বর্জন সে বাতাসের অনুকূল নয়। আমরা কেন ভুলে যাই যে জয়বাংলা শ্লোগানটি মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান, আওয়ামী লীগের কোন শ্লোগান নয়। আমরা কেন ভুলে যাই এই শ্লোগানের মর্মমূলে গাঁথা আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ , ধর্মনিরপেক্ষতা , সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র নামক স্বাধীনতার মূলনীতি। কেন ভুলে যাই জয়বাংলা শ্লোগানটি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের থেকে জাতির পিতা আত্মস্থ করেছেন তাঁর জীবনের যৌবনে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অসাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি খুনী মোশতাক জয়বাংলা শ্লোগানটিকে নির্বাসনে পাঠান। পরবর্তীতে সায়েম-জিয়া-এরশাদ-খালেদা জমানায়ও আর দেখা মেলেনি জয়বাংলার। মোশতাকের সেই “জিন্দাবাদ” শ্লোগান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিতে সুবিশাল প্রভাব রেখেছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় উত্থানে ধীরে ধীরে প্রজন্মের সঙ্গে জয়বাংলার পরিচয় ঘটে। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “২০২০ সালে হাইকোর্টের একটা রায় আছে, যেখানে বলা হয়েছে যে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।” “আজ মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ,জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা প্রচার করে দিতে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।” বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান কীভাবে ব্যবহৃত হবে? জাতীয় স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’ কীভাবে ব্যবহৃত হবে, কোথায় বাধ্যতামূলকভাবে এটি বলতে হবে, সে বিষয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। “সব সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তি, রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে এটা বলবেন।” এছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোন ধরণের সভা-সেমিনার শেষে জয় বাংলা বলতে হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলিতেও অংশগ্রহণকারীদের জয় বাংলা স্লোগান দিতে হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “যে কোন ধরণের অ্যাসেম্বলি, অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি যে ব্যক্তিই থাকবেন, তিনি জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করবেন। এটা মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত।” জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বশির আহমেদ। ২০২০ সালে হাইকোর্ট যখন ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার নির্দেশনা দেন, সেসময় সরকারি একজন আইনজীবী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে দলমত নির্বিশেষে এই জয় বাংলা স্লোগান প্রধান স্লোগান হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। সে বিষয়টিই ছিল আবেদনের মূল ভিত্তি।

-লেখকঃ সহকারী সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন।