Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

272

জাবি প্রতিনিধি: পদত্যাগকারী সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগপত্র গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

শুক্রবার (১০ই মার্চ) দুর্নীতি বিরোধী ঐক্য মঞ্চ প্রেরিত পত্রটি প্রকাশিত হয়। ‘গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস, দুর্নীতি, লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, ঠিকাদারী ব্যবসা এবং জামাত-শিবির করণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ’ শীর্ষক অভিযোগপত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম উল্লেখ করা হয়।
এতে দাবি করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস ও বিশেষ করে সিন্ডিকেটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতির সুযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পতিত স্বৈরাচারী উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে ক্রীড়নকে পরিণত করে নানা অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও ঠিকাদারী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শরীফ এনামুল উপাচার্য থাকাকালীন অধ্যাপক নূরুল ছিলেন তার সকল অপকর্মের সহযোগী। কয়েক বছর পূর্বে অবসরে গেলেও তিনি রসায়ন বিভাগে ছুটিতে থাকা এক শিক্ষকের অফিস রুমে এসি লাগিয়ে অবস্থান করে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও রাজনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে নিজের ফায়দা লুটছেন।’
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘উপাচার্য নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে শরীফ এনামূল কবীর কিশোরগঞ্জের আবদুল হক নামক এক মাফিয়াকে অর্থের বিনিময়ে নূরুল আলমের উপাচার্য হবার নেপথ্যে কাজে লাগিয়েছিলেন। এজন্যই বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম শরীফ এনামূল কবীরের অঙ্গুলী নির্দেশে হেলছেন ও দুলছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘স্পষ্ট লাম্পট্যের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যৌন নিপীড়ক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারণ মাহমুদুর রহমান জনিও অর্থের মাধ্যমে তার এলাকা কিশোরগঞ্জের আর এক প্রভাবশালী এমপির মাধ্যমে নূরুল আলমকে উপাচার্য হওয়ার তদবীর করেছিল। আর এসকল অর্থের উৎস ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে অধ্যাপক নূরুল আলম তার ভাই এ এ মামুনের মাধ্যমে ২২ কোটি টাকা ঠিকাদারদের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেন। বিনিময়ে ঠিকাদাররা চলমান প্রকল্পগুলোর শুধু বেজমেন্ট ঢালাইয়ে গোজামিল দিয়ে এর চেয়ে ৩ গুণ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে লাভ করে। এমনকি ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে শরীফ এনামূল কবীর একটি হেরিয়ার গাড়িও উপহার পান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য অব্যাহত আছে দাবি করে বলা হয়, ‘একাই উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দায়িত্বে থেকে অধ্যাপক নূরুল আলম উইকেন্ড প্রোগ্রাম অর্ডিন্যান্স-২০১৬ একাডেমিক কাউন্সিলে পাস না করে উক্ত প্রোগ্রাম থেকে প্রতি মাসে অবৈধ ভাবে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ সহ শরীফ এনামূল গং এর যোগসাজসে কর্মচারী-কর্মকর্তা ও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন। বোটানি ও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ৮০ লক্ষ টাকা লেন দেন হয়েছে। শুধু তাই নয় নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে ভূগোল, সরকার ও রাজনীতি ইতিহাস ও ইংরেজি সহ কয়েকটি বিভাগে জামাত শিবির কর্মী নিয়োগ প্ৰচেষ্টা সহ নিয়োগের আগেই ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা লেনদেন প্রায় সমাপ্ত।’
সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, ‘সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল কমিটির ২ জন সদস্যের ভাষ্য মতে ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে প্যান্ডেল ভাড়া করা হয় এবং মুখ বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে আরো ১০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। অথচ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। নাস্তার বাজেট থেকে প্যাকেট প্রতি ১৩৫ টাকা করে আত্মসাত করে নিম্নোমানের নাস্তা দেয়া হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কয়েকজন সাবেক শিক্ষক নেতা জানান, ‘বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলছে ছায়া উপাচার্য দ্বারা। এখানে ছায়া উপাচার্য হিসেবে কলকাঠি নাড়ছে দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগকারী সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির। সম্প্রতি কয়েকটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক পদের দায়িত্ববন্টণ দেখলেই তা স্পষ্ট হয়। এখন প্রশাসনের যেকোন পদে আসীন হতে শরীফ এনামুল কবীরের আশীর্বাদের প্রয়োজন হয়। বস্তুতপক্ষে উপাচার্য নূরুল আলম কাগজে কলমে দায়িত্ব পালন করলেও মূল কাজ করছেন শরীফ স্যার।’