Home জাতীয় সফলতার সাথে দুই বছর দায়িত্ব পালন করলেন ঝিনাইগাতীর এসিল্যান্ড জয়নাল আবেদীন

সফলতার সাথে দুই বছর দায়িত্ব পালন করলেন ঝিনাইগাতীর এসিল্যান্ড জয়নাল আবেদীন

37

আনিছ আহমেদ (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন শেরপুর জেলার একটি উপজেলা ঝিনাইগাতী। গজনী অবকাশ ও পাহাড়ি বনভূমি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সংমিশ্রণে ঝিনাইগাতী উপজেলা খুবই মনোরম ও সৌন্দর্যমন্ডিত এবং বাংলাদেশের সকল প্রকৃতি প্রেমীদের নিকট একটি পরিচিত জায়গা। দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলা নাগরিক সুবিধা ও উন্নয়নের নানা সূচকে পশ্চাৎপদ থাকলেও সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ’সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উপজেলার উন্নয়নের ধারা সূচিত হচ্ছে। এই উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর হচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিস। নাগরিকদের সকল ভূমি বিষয়ক সেবা প্রদান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিরসন, সরকারি খাসজমি রক্ষণাবেক্ষণ, ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন, মিস মোকদ্দমা নিষ্পত্তি ও গণ-শুনানি গ্রহণ এবং ভূমির মালিকানা ও ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলী অত্র অফিসের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি), জয়নাল আবেদীন বিগত 10/05/2020 খ্রিস্টাব্দ তারিখে যোগদান করে তিনি সফলতার সাথে তার দায়িত্বের দুই বছর অতিবাহিত করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার কার্যকালীন সময়ে তিনি জনগণকে সঠিক সময়ে ও সরকারি ফি এর বিপরীতে যথাযথভাবে ভূমি সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। তার কার্যালয়ে সকল মানুষ যে কোন সময় প্রবেশ করে ব্যক্তিগত সমস্যা উপস্থাপন করে ভূমি সংক্রান্ত সেবা দ্রুত পেতে পারেন। কোন জটিলতা বা হয়রানির সুযোগ নেই। আরো জানা যায় যে, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি প্রায় 40 একর সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় 10 কোটি টাকা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুর্নবাসনের অংশ হিসেবে প্রায় 300 টি ভূমিহীন পরিবারকে খাস জমি তার অফিস থেকে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। যাদের অনেকেই পেয়েছেন গুচ্ছগ্রাম, পাকা ও টিনের ঘর এবং মুজিব বর্ষ উপলক্ষে পেয়েছেন পাকা গৃহ। বর্তমানে উপজেলা সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে শতভাগ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মোকদ্দমা তদন্ত প্রতিবেদন, উপজাতীদের জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন হচ্ছে।তিনি উপজেলার বিদ্যমান চারটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করছেন এবং ভবন না থাকায় কাংশা ও গৌরীপুর ইউনিয়নে নতুন ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। বর্তমানে অফিসগুলো পরিচ্ছন্ন, জনবান্ধব ও সেবামুখী। জনগণ নির্বিঘ্নে সেবা পাচ্ছেন। তিনি গত দুই বছর শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আদায়ের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত মিস মোকদ্দমা ও নামজারি জমা খারিজ মামলা যথাসময়ে সম্পন্ন হচ্ছে। উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মূল সূচনা হয় মূলত ভূমিকে কেন্দ্র করে। ফলে তার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহমদ নগর বধ্যভূমি নির্মাণের জমি বন্দোবস্ত প্রদান, রাংটিয়া মোড়ে মোটেল নির্মাণ, টুরিস্ট পুলিশের অফিস স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন, গুচ্ছগ্রাম স্থাপনের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত, ভূমিহীনদের মাঝে নীতিমালা অনুসারে খাস জমি প্রদানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ তিনি নিরলস ভাবে করে যাচ্ছেন। মুজিববর্ষে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণের কাজ ও উপকারভোগী নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সর্বদা সরেজমিনে কাজ করে যাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিসের নতুন ভবনের যাত্রা শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জনসেবার বিষয়টি মাথায় রেখে অতি সুন্দর ভাবে সেখানে সেবা প্রার্থীদের জন্য বসার স্থান, ফুলের বাগান, হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। যা অত্যন্ত নান্দনিক এবং উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি), জয়নাল আবেদীন বলেন যে, সরকার আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে আমি তা আস্থার সাথে যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। জনগণ যেন ভূমি সেবা নির্বিঘ্নে পেতে পারে তার জন্য আমরা দায়বদ্ধ। ভূমি সংক্রান্ত যেকোন সেবার জন্য সরাসরি তার অফিসে সেবা প্রার্থীদের তিনি আহ্বান জানান। তার অফিসে আসা একজন সেবা প্রার্থী বলেন, আমি একটা জমির খারিজের জন্য আবেদন করে সঠিক সময়ে আমার খারিজটা পাইছি। আমার খারিজের জন্য কোন অতিরিক্ত টাকা লাগে নাই এবং আমার কোন হয়রানী হয় নাই। আমার কথা স্যার মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। সেবা গ্রহীতাদের প্রতি স্যারের আন্তরিকতায় আমি অনেক খুশি। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক মোঃ আবুল হাশেম বলেন, বর্তমান এসিল্যান্ড অত্যন্ত জনবান্ধব এবং সেবামুখী কমকর্তা। তার সময়ে ভূমি সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ভূমি সেবায় জনগণকে কোন প্রকার হয়রানী হতে হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহি অফিসার জনাব ফারুক-আল-মাসুদ বলেন যে,বর্তমানে উপজেলার সকল অফিসার খুবই আন্তরিক ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। তারা জনগণকে সেবা প্রদানে যত্নশীল। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আন্তরিকতার সাথে তার কাজ করে যাচ্ছেন ফলে জনগণ ভূমি সেবা সুষ্ঠুভাবে পাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মোমিনুর রশীদ বলেন, জেলা রাজস্ব প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আমরা সকল জেলার জমির মালিকের তথ্য সমূহ ডিজিটাল করতে পেরেছি। ফলে তারা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে পারছেন। শতভাগ নামজারি অনলাইন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিষ্পত্তি হচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় ভূমি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। সর্বোপরি করোনা কালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত সরকারের সকল নির্দেশ বাস্তবায়নে এই কর্মকর্তা মাঠে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নিজেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিন্তু সাহস ও মনোবল হারাননি খবর পেলেই ছুটে যান বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার কাজে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ভোক্তাদের নিকট পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। মাদক ও ভূমিদস্যুদের জন্য তিনি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেন। মাদকসেবী কয়েকজনকে ইতিমধ্যে জেলে পাঠিয়েছেন। উপজেলার আইন-শৃংখলার স্বাভাবিক রাখতে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, খাস জমি দখলসহ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সরেজমিনে গিয়ে আন্তরিকতার সাথে নিষ্পত্তি করে থাকেন। ঝিনাইগাতী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পযন্ত সর্বমোট 36 জন কর্মকর্তা এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তন্মধ্যে রাশেদুল হাসান ও জয়নাল আবেদীন দুই বছরের অধিক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। উপজেলাবাসী ও সেবা প্রার্থীরা বলেন যে, একজন কর্মকর্তা 2/4/6 মাসে বদলি হয়ে গেলে জনগণ প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু তিনি দীর্ঘ দুই বছর দায়িত্ব পালন করে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং ভূমি সেবা নিশ্চিত করণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। উপজেলাবাসী তার সেবায় উপকৃত হচ্ছেন।