Home সাহিত্য ও বিনোদন শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৬ দিনব্যাপী ‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব’ শুরু

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৬ দিনব্যাপী ‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব’ শুরু

35

স্টাফ রিপোটার: ‘আমরা সংস্কৃতি নিয়ে সবার ঘরে ঘরে পৌছে যেতে চাই, এই বার্তাই আমাদের গনজাগরণের বার্তা’- লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে’এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন’কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পের সকল শাখার সমন্বয়ে দেশব্যাপী বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞের বাস্তবায়িত রুপ ‘‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব’ও সংগীত উৎসব । এই সামগ্রিক উন্নয়ন পক্রিয়ায় সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করতে ৫ শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে ২-৭ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত আয়োজন করা হয়েছে ‘‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব’।

ঢাকা জেলার উদ্বোধনী আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ‘গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব’ শুরু:

ঢাকা জেলার উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ থেকে শুরু হলো সারাদেশে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩। আজ ২রা ডিসেম্বর ২০২৩ বিকাল ৫.৩০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী আলী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন – ‘আজ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিভাগগুলোকে কেন্দ্র করে সকল জেলায় এই উৎসব হবে। প্রায় ১০ হাজার শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছে। একই মঞ্চে গণজাগরণের সংগীত উৎসব হবে। এই উৎসবে সকল ক্ষেত্রের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করছে।’।

তিনি আরো বলেন- ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যাঁর জন্ম না হলে হতো না, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ একটি পরিবার যা ভেঙ্গে ফেলা হলো ১৯৭৫-এ। কিন্তু আবার হাজার বছর পেছনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এই সময়েও। আমাদের যে মনীষিরা ছিলেন, তারাও বলেছেন আমরা আগে বাঙালি তারপরে মানুষ। ধর্ম তারপরে’।

মহাপরিচালক বলেন- ‘সৃজনশলীলতা আবিস্কৃার করা দরকার। অনেকে অভিনব সৃজনশীলতা নিয়ে জন্মায় কিন্তু আবিস্কৃার করতে পারে না। সেই সৃষ্টিশীলতা আবিস্কৃার ও গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি’।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৫০ বছরে পূর্তিতে সারা বছর অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে বলেন – ‘আজ সারা বিশ্বে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ হত্যা করে কোন বিজয় অর্জিত হতে পারে না। বাংলাদেশ মানবতার দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ জঙ্গীবাদ বিরোধী দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই না বাউলদের চুল কেটে দেয়া, উদীচীর অনুষ্ঠান ও বৈশাখে রমনার বটমূলে হামলার সেই ভয়াবহ সময় আবার আসুক আমরা তা চাই না। আমরা সংস্কৃতি নিয়ে সবার ঘরে ঘরে পৌছে যেতে চাই, এই বার্তাই আমাদের গনজাগরণের বার্তা’।

আজকের শিল্পীরাই আগামীতে জাতীয় শিল্পী হিসেবে গড়ে ওঠবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহাপরিচালক। এর পরে সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা জেলার কালচারাল অফিসার আসফ উদ দৌলা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন মোহাম্মদ নেয়ামতউল্লাহ সহকারী কমিশনার ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। তিনি বলেন- ‘সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা আরো সমৃদ্ধ হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবো’।

আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই পরিবেশিত হয় ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা ‘ও আলোর পথ যাত্রী, এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার” সমবেত সংগীত। ‘জেগে থাক একাত্তর’ সমবেত আবৃত্তি পরিবেশন করে উদ্ভাসন, রচনায়: নরুল হুদা, নির্দেশনা ছিলেন মীর বরকত। এরপরে ওয়ার্দা রিহাব এর নির্দেশনায় ধৃতি নর্তনালয় পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘নোঙ্গর তোল তো’…। ‘মন সওদাগর সওদা করো থাকিতে বেলা’ ও ‘মন মানুষ হইতে চাও জাতি ধর্ম ছেড়ে’ পরিবেশন করেন কাজল দেওয়ান। ‘লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামটির দেশে যা’ সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে সাভার নৃত্যদল। অনিমা মুক্তি গোমেজ পরিবেশন করেন একক সঙ্গীত ‘আমার হার কালা কোরলাম রে’.. আনসার আলী পরিবেশন করেন একক সঙ্গীত ‘ভাবের তালা’ (লালন গীতি)। দিশা মনি পাল (সাভার) পরিবেশন করেন একক নৃত্য ‘নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায়’। কবি শান্তা মারিয়া পরিবেশন করেন কবিতা ‘জননী বাংলাদে’

এরপরে নবাবগঞ্জ নৃত্যদল পরিবেশন করে সমবেত সঙ্গীত- ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’.।

‘দেখে যাও, ওরে ও পথিক ভাই.. আমার পাড়ার গাঁও’… সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে কেরানীগঞ্জ সঙ্গীতদল। ধামরাই সংগীতদল পরিবেশন করে সমবেত সংগীত- ‘বল নাহি ভয় নাহি ভয়/কারার ঐ লৌহ কপাট’। সমবেত সংগীত পরিবেশন করে ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’.. সবশেষে আবারো নৃত্য পরিবেশনা, পরিবেশন করে ওয়ার্দা রিহাব এর নৃত্যদল, ধৃতি নর্তনালয় ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ.।’

‘‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব”

একই সাথে আজ থেকে শুরু হলো ৬ দিনব্যাপী গণজাগরণের সংগীত উৎসব ২০২৩। ঢাকা জেলার আয়োজনে সাংস্কৃতিক উৎসব শেষে নন্দনমঞ্চে শুরু হয় ২য় পর্বের আয়োজন গণজাগরণের সংগীত উৎসব। আয়োজিত ৬ দিনরব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকবে ১১ টি দলের পরিবেশনা। ১১ টি দল হলো- অন্তরা, সুরশ্রী, সঞ্চারী, রাগিনী, সুরধ্বনি, সুরসপ্তক, স্বরলিপি, গীতাঞ্জলি, গীতালি, সুরতরঙ্গ এবং সুরলহরী। প্রথম দিন পরিবেশনা উপস্থাপন করে অন্তরা সংগীত দল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুমা রায়, মিথিলা মল্লিক, আশা খন্দকার, অভিজিৎ দে, এম এ মোমিন, জি এম রহমান রনি, মৌসুমি আক্তার শ্রাবণী, শ্রীকৃষ্ণ গোপাল, তসলিমা আক্তার, ফাইজুর রহমান মিল্টন, সোহাইলা আফসানা ইকো, কাইফ মোহাম্মদ অয়ন, এনায়েত হোসেন রনি, সুমন রায় এবং সিদ্দিকুর রহমান।

রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীত, দেশের গান, ভাষার গান, গণজাগরণের গান, মুক্তিযুদ্ধের দলীয় ও একক গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।