Home জাতীয় শর্ত যদি কেউ না মানে, মোবাইল কোর্টের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে–তথ্যমন্ত্রী

শর্ত যদি কেউ না মানে, মোবাইল কোর্টের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে–তথ্যমন্ত্রী

37

স্টাফ রিপোটার : বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের বৃহত্তম সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মতবিনিময়কালে বিজেসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এসময় উপস্থিত ছিলেন। বিজেসি ট্রাষ্ট্রি বোর্ড চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক ও সদস্যদের মধ্যে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, রাশেদ আহমেদ, দীপ আজাদ, মানস ঘোষ, হারুন অর রশীদ, সাইফ ইসলাম দিলাল, ফাহিম আহমেদ, নূর সাফা জুলহাস, রাহুল রাহা, মামুনুর রহমান খান প্রমুখ বৈঠকে যোগ দেন।

তথ্যমন্ত্রী এসময় বিজেসিকে তাদের অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘আমরা দেশের স্বার্থে আইন কার্যকর করেছি, গণমাধ্যমের স্বার্থে, গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত সাংবাদিক, শিল্পী-কলাকুশলী সবার স্বার্থে, এবং এ আইন সমগ্র পৃথিবীতে আছে। প্রতিবেশী সকল দেশে এই আইন অনেক আগেই কার্যকর হয়েছে। আমাদের দেশে একটি মহল নানা অজুহাতে এ আইন কার্যকর করতে দেয়নি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশির ভাগ মন্তব্যই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দেখি।’

ড. হাছান বলেন, ‘সকল সাংবাদিক এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যারা টেলিভিশনের মালিক তারা দাঁড়িয়েছেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। সুতরাং কেউ এটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র একটি পক্ষই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তা নয়, সেটিকে পুঁজি করে আরো কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছিল। সেগুলো হালে পানি পায়নি।’

ক্লিনফিড নিয়ে অন্যান্য দেশগুলো কত যত্নবান সেই উদাহরণ তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিভিশন ভারতে এবং দূরদর্শন এদেশে সম্প্রচার হয়। ভুলক্রমে একবার বিটিভি’র ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ফিডে একটি বিজ্ঞাপন ছিল, সাথে সাথে তারা সম্প্রচার থামিয়ে আমাদেরকে নোটিশ করেছিল। নেপালে এ আইন কার্যকর করার সময় নানা পক্ষ বিরোধিতা করেছিল, এখন নেপালের মতো দেশেও সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলো ক্লিনফিড পাঠায় আর আমাদের এখানে পাঠাতো না।আমাদের এখানে তাদের পক্ষে ওকালতি করার একটা পক্ষ ছিল। কিন্তু এখন সেটি করতে হবেই।’

আইন কার্যকর করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এনিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালে সেটির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, দেশে অনেক চ্যানেলে ক্লিনফিড আসে, সেগুলো প্রথমে কেউ চালায়নি, এখন অনেকেই চালানো শুরু করেছেন। আমরা আজকেও সময় দিচ্ছি সেগুলো চালানোর জন্য। আগামীকাল থেকে ক্লিনফিড আসা সত্ত্বেও চালানো না হলে, সেটার জন্য মোবাইল কোর্ট চলবে। অন্যান্য ক্যাবল অপারেটিংয়ের শর্তও যদি কেউ না মানে, মোবাইল কোর্টের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ক্যাবল অপারেটিং লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু চালানো যায় না স্মরণ করিয়ে ড. হাছান বলেন, কেউ ক্লিনফিড পাঠালেও এমন কিছু যা সমাজ ও পরিবারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বা ছেলেমেয়েদের বিপথে ঠেলে দিতে পারে এই ধরণের কনটেন্ট যাতে না যায় সেবিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

মন্ত্রী এসময় গণমাধ্যমকর্মী আইন দ্রুত পাশ করা এবং ওটিটি প্লাটফর্ম নীতিমালা ও আইপিটিভি নির্দেশিকা দ্রুত প্রণয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান।

বিজেসি সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যে আইন কার্যকর করা যায়নি তা এখন করার মতো দৃঢ় ভূমিকার জন্য আমরা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অকুন্ঠ অভিনন্দন জানাই। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আমরা আছি। আমরা সংবাদ, টক শো, ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আমরা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটা রাউন্ড টেবিলও করছি।

অপরদিকে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য জনস্বার্থ সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রকল্প ‘প্রটেকটিং ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ফর ইফেক্টিভ ডিভালপমেন্ট’-প্রাইমড উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের প্রধান নির্বাহী ক্যারোলিন নার্সির ভিডিও বক্তব্যের পাশাপাশি বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আল-মামুন সমাপনী বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রকল্পটির সাফল্য কামনা করে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ভালো সংবাদের গুরুত্ব উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, আশাহীন মানুষ যেমন স্বপ্ন দেখতে পারে না, আশাহীন জাতিও এগুতে পারে না। গণমাধ্যমের অন্যতম দায়িত্ব মানুষকে, জাতিকে আশাবাদী করে তোলা, ভবিষ্যতের পথ দেখানো। আশা করি, সমাজের ত্রুটি-বিচ্যূতির পাশাপাশি গণমাধ্যম ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরবে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বাংলাদেশের ক্রমপ্রসারমান গণমাধ্যম ক্ষেত্রের সাথে কাজ করতে পেরে যুক্তরাজ্য সরকার আনন্দিত। প্রাইমড প্রকল্প দু’দেশের সম্পর্কেও আরো নৈকট্য নিয়ে আসবে।

প্রাইমড প্রকল্পের অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, যমুনা টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোল এবং ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজী টিভি’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ এন্ড ডিভালপমেন্ট অফিস-এফসিডিও এর অর্থায়নে প্রাইমড প্রকল্পের আওতায় গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা বিষয়ে যমুনা টেলিভিশন, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক গ্রামের কাগজ এবং ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সাথে কাজ করছে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।