Home মতামত “রোহিঙ্গা গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়”

“রোহিঙ্গা গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়”

89

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার:
ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসের অনুচ্ছেদ ১৫ অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে। কাউকে নির্বিচারে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না বা তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মায়ানমারে বসবাস করলেও তারা আজ দেশ থেকে বিতাড়িত। তাদের কোন দেশ‌ নেই। নেই কোন অধিকার। লাখ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের কোন শিক্ষার অধিকার নেই। কাজ করার সুযোগ নেই। সরকার বা কোন‌ সংস্থার সাহায্যের দিকে ফেল ফেলিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। অথচ মায়ানমারে তাদের সম্পদ ছিল। ছিল ঘরবাড়ি। রোহিঙ্গা মুসলিমরা মায়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায় ১৯৮২ সালের নাগরিক আইনের কারণে। ওই আইনে তিন ধরনের সিটিজেনশিপের কথা বলা হয়। রোহিঙ্গাদের তাতে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এরফলে দেশের ভেতরে রোহিঙ্গারা পরাধীন হয়ে যায়। বাড়তে থাকে তাদের উপর নির্যাতন। মায়ানমারে দীর্ঘদিন সেনাশাসনের চরম অবিচারের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। তাদেরকে নির্মূলের সব পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে। দিন ম
যতোই যাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কথা বললেও মায়ানমারের উপর তেমন কোন চাপ সৃষ্টি করছে না। ফলে মায়ানমারের জান্তা সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবাই সহানুভূতি দেখালেও তাদের দেশে ফেরাতে কেউ যথাযথ সহায়তা করছে না । ১২ ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের ওপর অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলেও তাদের সাথে ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগ করছে। বহুপক্ষীয়ভাবে এই ইস্যুর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের উপর নিষ্ঠুরভাবে হামলা করা হয় ২০১৭ সালে।‌‌ অসংখ্য রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকার হয়। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নারীদের ধর্ষণ করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যু বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা দূর করতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্পেশাল রেজুলেশন করে স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে। কেননা রোম চুক্তির ১০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান আইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্পেশাল রেজুলেশন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমরা যাতে মায়ানমারে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিতে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এই দায়-দায়িত্ব নিতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। অন্যদিকে বাংলাদেশ‌ সরকার যেসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের নূন্যতম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

-লেখক পরিচিতি: ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কন ইনস ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ।