জাকির হোসেন আজাদী: “হাওয়া” সিনেমা দেখলাম গতকাল সন্ধ্যায়। সিনেমার নামটি হাওয়া না দিয়ে “গালি বয়” বা “গালিগালাজ” দিলে ভালো হতো। কারণ সিনেমাটিতে এতো বেশি আপত্তিকর জঘণ্য গালি ব্যবহার করা হয়েছে। যা আমাদের জেলে মাঝিরা কখনোও ব্যবহার করে কি না সন্দেহ রয়েছে।
সিনেমা হলের মধ্যে অনেকে ফ্যামিলিসহ গিয়েছে। এক এক ফ্যামিলির ৮/১০ জন এক সঙ্গে টিকিট কেটেছে। নারী শিশুরা তাদের সাথে রয়েছে। মা বাবারা এসব গালি শুনে সন্তানের মুখের দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে। অনেকে বলছেন সিনেমা দেখতে আসলাম নাকি শুধু গালাগালি শুনতে আসলাম।
যুগ যুগ ধরে আমাদের জেলে মাঝিরা অত্যন্ত সংগ্রাম করে সাগরের বুকে অতি কষ্ঠে মৎস শিকার করে থাকে। যেসব সামুদ্রিক মাছ সারা দেশে পৌঁছায়। তাঁরা আমাদের একটি সম্মানিত সম্প্রদায়। অনেকেই বলছেন এই সিনেমায় জেলে মাঝি সম্প্রদায়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তাদের অসম্মানিত করা হয়েছে।
তাছাড়া সিনেমার মধ্যে তেমন কিছুই নেই। একটি মাছ ধরা বোটকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখায়। আর সাগরের পানি দেখায়। মাছ ধরা বোট আর সাগরের পানি বারবার দেখার কী আছে! দর্শকদের বক্তব্য।একটি মাত্র গান আছে তাও ভালো ভাবে চিত্রিত হয়নি। কারণ গানটি শুরুর সাথে সাথেই ক্যামেরা ঘুরে যায় মাঝির দিকে। যিনি বোটের নিচে নায়িকার পেছনে ঘুরঘুর করছে।
সিনেমায় নাকি আমাদের জেলে মাঝিদের জীবন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমাদের জেলে মাঝিদের বাস্তব জীবন চিত্র এই সিনেমায় ফুটে উঠেনি। কয়বার জাল টেনে মাছ ধরা, মধ্য সাগরে নায়িকার মাছ হয়ে জালে ওঠা এবং সাপ হয়ে দংশন করা, বোটের ইঞ্জিন নষ্ট হওয়া, একবার জাল হারিয়ে যাওয়া আর কথায় কথায় গালিগালি ও বোটের সবাইকে মাঝি কতৃক হত্যা করা এইটা আমাদের দেশের কোন এলাকার জেলে মাঝির জীবন চিত্র সিনেমার পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।
মাত্রাতিরিক্ত এতো জঘন্যতম গালাগালিসহ এই সিনেমা আমাদের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কিভাবে ছাড়পত্র দিল এই প্রশ্ম থেকেই যায়। সিনেমা দেখার সময় যখন বারবার মাত্রাতিরিক্ত গালি আসতে থাকলো। তখন আমি লিখতে থাকলাম। যেসব গালি ব্যবহার করা হয়েছে। সবগুলো লিখে নিয়ে আসছি। যা ফেসবুক ও কোনো পত্রপত্রিকায় বা কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশযোগ্য না। (কেউ চাইলে গালিগুলো আমি ইনবক্সে বা হোয়াটসআপে পাঠাতে পারি)। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের কোনো সিনেমায় এতো জঘণ্য গালি ব্যবহার হয়েছে কি না আমার জানা নেই। চলচ্চিত্রের মত একটি শক্তিশালী গণমাধ্যমে এতো জঘন্যতম গালি কিভাবে ছাড়পত্র পায় সেটা ভাববার বিষয়।
ঈদের তিনটি সিনেমাই দেখলাম। আমি বলবো পরাণ সিনেমাটি একটি কালত্তীর্ণ সিনেমা হয়েছে। যা এর প্রত্যেক অভিনয় শিল্পীকে অমরত্ব দেবে। অন্য দুটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারিনি। পরাণ সিনেমা যারা দেখেছে তারাই বেশিরভাগ হাওয়া সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। মনে করছে এটাও বোধহয় পরাণের মত একটি ভালো সিনেমা। কিন্তু হাওয়া দেখে অনেকেই স্তম্ভিত হতাশ যারপরনাই ত্যক্ত বিরক্ত। সেন্সরবোর্ডের ওপর অনেকেই ঝাড়ছেন ক্ষোভ।
বলছেন দর্শকদের হল বিমুখ করার জন্য হাওয়ার মত সিনেমাই যথেষ্ট।