ডেস্ক রিপোর্ট: নিজ দেশের জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর দায়ে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং আয় থামিয়ে দিয়ে মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

গত বছর মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সূ চি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গণতন্ত্রপন্থি প্রতিরোধ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। সেনাবাহিনী হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। এরই মধ্যে দেশজুড়ে অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় চাপের মুখে অর্থনীতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক জান্তা।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে আরও বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা অর্থবহ ও টেকসই উপায়ে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা গভীর আর্থিক খাতের সংকট সমাধানেও তারা ব্যর্থ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জান্তা সরকার মিয়ানমারে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চলেছে। সেনাবাহিনী অর্থবহ ও টেকসই উপায়ে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আরও বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এ জন্য প্রথমেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যাতে তাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিদেশ থেকে আয় করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিও বন্ধ করতে হবে। প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমারের জনগণকে সমর্থন জানাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং দেশটির সামরিক বাহিনীকে আর্থিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। এমনকি অনেক দেশই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে যুদ্ধবিমান ও সাঁজোয়া যান দিয়েছে রাশিয়া। আর চীন যুদ্ধ ও পরিবহন বিমান সরবরাহ করেছে এবং সার্বিয়া রকেট ও গোলাগুলি দিয়েছে। এছাড়া ভারত একটি দূরবর্তী বিমান প্রতিরক্ষা স্টেশন তৈরিতে সহায়তা করেছে।

প্রতিবেদনে মিয়ানমার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক নীরবতার বিষয়টিকেও সামনে আনা হয়। এই বিষয়ে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মেরি লেলৌর বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার মুখেও সামরিক জান্তা কর্তৃক প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতে থাকার পরও মানবাধিকার রক্ষাকারীরা দেশটিতে নিপীড়িতদের সমর্থনে অটল।

মেরি লেলৌর আরও বলেন, আমাদের মিয়ানমারে যারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন তাদের পরিপূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সামরিক জান্তার ওপর যথাসময়ে উপযুক্ত চাপ বাড়াতে হবে এবং যারা দেশ ছেড়েছে কিংবা ছাড়তে চায় তাদের সরাসরি আর্থিক সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে।
আমাদের সময়.কম