Home জাতীয় মাস ব্যাপী একুশে বই মেলা সমাপ্ত, ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে

মাস ব্যাপী একুশে বই মেলা সমাপ্ত, ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে

20

স্টাফ রিপোটার: শনিবার (২ মার্চ ২০২৪) অমর একুশে বইমেলার ৩১তম দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ১৪৯টি। এ পর্যন্ত (০২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২রা মার্চ পর্যন্ত) নতুন বই এসেছে ৩৭৫১টি।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠান
বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের লিখিত প্রতিবেদন তাঁর পক্ষে পাঠ করেন একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। বক্তব্য প্রদান করেন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড-এর সিএমও মীর নওবত আলী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এবার ছিল অধিবর্ষের বইমেলা। নির্ধারিত ২৯ দিনের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনায় অতিরিক্ত ০২ দিন যুক্ত হয়ে ৩১ দিনের দীর্ঘ বইমেলার আজ শেষ দিন। ২০২৪-এর বইমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। শীতে শুরু হয়ে বইমেলা স্পর্শ করেছে বসন্ত-বাতাস। একুশের রক্তপলাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চের চেতনার রং।
সদস্য-সচিব তাঁর প্রতিবেদনে বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় (১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১লা মার্চ পর্যন্ত) প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এই বইমেলায় বাংলা একাডেমি (১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১লা মার্চ পর্যন্ত) ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, অমর একুশে বইমেলা আজ বাঙালির ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বইমেলার মাধ্যমে প্রতিবছর আমরা আমাদের সৃজনশীলতাকে উদ্যাপন করি। এই মেলা আমাদের আবেগের, জাতিসত্তার, ভাষা-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসার মেলা।
বেগম নাহিদ ইজাহার খান এমপি, বলেন, বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা দেখতে দেখতে চারদশক অতিক্রম করে এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববাঙালির কাছে যেমন ঠিক তেমনি বিশ্বের জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছেও একুশের বইমেলা এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
মীর নওবত আলী বলেন, বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে সহযোগিতায় থাকতে পেরে বিকাশ লিমিটেড আনন্দিত ও গর্বিত।
খলিল আহমদ বলেন, আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত এবারের বইমেলা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়; দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমন্ডিত হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের পরও মুদ্রিত বইয়ের আবেদন যে কোনোমতেই ফুরিয়ে যায়নি তার প্রমাণ একুশে বইমেলায় ক্রমবর্ধমান জনসমাগম।

অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট) এবং বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন এবং উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।