Home মতামত বিবেক পণ্য হলে, হয় কেনা বেচা! সুদিনের ময়না পাখি দুদিনের পেঁচা!!!

বিবেক পণ্য হলে, হয় কেনা বেচা! সুদিনের ময়না পাখি দুদিনের পেঁচা!!!

43

সরদার মোঃ শাহীন:

লক্ষণ ভাল কি মন্দ জানি না, তবে ভোল পাল্টানো শুরু হয়েছে। একটু ভাল করে চোখকান খোলা রেখে এদিক ওদিক তাকালেই আজকাল দেখা যায় ওদের। বোঝা যায় ওদের পাল্টে যাবার উদ্যোগ। সংখ্যায় ওরা এখনো কম হলেও বাড়তে সময় লাগবে না। ভিতরে ভিতরে মোচরামুচরি শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা অনুক‚লে মনে করলেই প্রকাশ্যে পাল্টানো শুরু করবে দলবেঁধে। বর্তমানে দল ছোট কিন্তু পাল্টানোটা যে শুরু হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
শুরু হয়েছে বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে। দেশের সব ক্রাইসিসে এসব ভন্ডামীটা সব সময় তারাই শুরু করে। তারা বরাবরই এমন। অবস্থা বেগতিক দেখলে এই শ্রেণীটাই সবার আগে লেজ গুটায়। অবস্থার গুরুত্ব ততটা বুঝতে চায় না। অবস্থা আসলেই বেগতিক কিনা সেটাও পরখ করে না। করে তড়িঘড়ি। তড়িঘড়ি করে নিজেকে বাঁচাতে চায়। এবারও তাদের বাঁচার চেষ্টা করতে দেখে আমি এমনটাই অনুমান করছি।
তাদের এমন আচরণ এই জীবনে তো আর কম দেখি নাই। হালের কলিমুল্লাহ মিয়া কিংবা সৈয়দ আনোয়ার হোসেনরা সব আমলেই থাকেন। সব আমলেই তারা দেখা দেন। প্রথমে রুটি হালুয়া খাওয়ায় দেখা দেন। ভাগ বসান। ইচ্ছেমত বসান। আর আশপাশে ভাল ভাল পোস্টিং খোঁজেন। এবারও তাই হলো। সব খাওয়া শেষে এবার ইউ টার্ন নিতে চাচ্ছেন। ইদানীংকার কথার ধরণ তো তাই বলে। কথা বলার সুযোগ পেলেই পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সরকার বিরোধী কথাবার্তা বলছেন। আড়ালে আবডালে তো হরহামেশা বলেনই, এখন মিডিয়াতেও বলা শুরু করেছেন।
বলেন বেশ সুন্দর করে। নিরপেক্ষতার চাদরে নিজেকে ঢেকে আস্তে আস্তে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন। সবই বলেন। বলতে কিছুই বাকী রাখেন না। কথা বলায় নিজেদের যত পান্ডিত্য আছে সব ঢেলে দেন। প্রচন্ড মুজিবপ্রেমী সেজে মুজিবকন্যা হাসিনাকে ধুয়ে দেবার চেষ্টা করেন। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে হাসিনা সরকারের যখন কঠিন বাজাবাজি চলছিল, তখন হিলারীর ক্ষমতার ভয়ে অবস্থা খারাপ ভেবে দেশীয় এই বুদ্ধিজীবিরা ঠিক এমনভাবেই ভোল পাল্টানো শুরু করেছিলেন।
এদের কাজই হলো এটা। সব সময় সুদিনের বন্ধু সেজে পাশে থাকে। আর চেটেপুটে সব খায়। উপরেরটা খায়, তলারটাও খায়। এমনইভাবে খাওয়ার সময় হঠাৎ করে বিশ্বব্যাংক যখন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলো, তখনো চাটাচাটি থামিয়ে দেশবিরোধী সকল অপশক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এরাও ভোল পাল্টানো শুরু করেছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে, দুর্নীতির অভিযোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়াই পদ্মা সেতু করে ফেলা শুরু করলেন, তখন এরা আবার পল্টি নেয়। হাসিনা বন্দনা শুরু করে।
বেশ ক’বছর পর ইদানীং আবার মোচরামুচরি শুরু করার কারণ আমেরিকার নড়াচড়া। আমেরিকার কোন চাপই যখন প্রধানমন্ত্রী আমলে নিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছেন না; তখন আমেরিকা তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে অন্যায়ভাবে ভিন্ন স্টাইল ধরলো। ভিন্নভাবে চাপ দেয়া শুরু করলো। যেটা বিশ্বমোড়ল হিসেবে সব জায়গায় করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও করলো। র‌্যাবের ক’জনকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসলো। আর যায় কোথায়! বুদ্ধিজীবিদের তো পিলে চমকে উঠার পালা। চারিদিকে হায় হায় রব পড়ে গেল। গেল গেল, হাসিনা সরকার বুঝি এবার তলিয়ে গেল।
আমেরিকার অভিযোগ বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে। শুনলে মনে হবে আমেরিকা ভুল কিছু বলছে না। কিন্তু এই মানবাধিকারের প্রশ্নে আমেরিকার বিরুদ্ধেও তো অভিযোগের কমতি নেই। বিস্তর অভিযোগ আছে। তাদের গণতন্ত্র নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। আজকেও আমেরিকার ৩৬ ভাগ মানুষ মনে করে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট চুরি করে ট্রাম্পকে হারানো হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, আড়াইশো বছর সুযোগ পেয়েও আমেরিকা আজো তাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ঠিক করতে পারলো না কেন?
বাংলাদেশের বয়স তো আড়াইশ নয়, সবেমাত্র ৫০ বছর। এর মধ্যে ষোলো বছর সামরিক শাসকেরা দেশ চালিয়েছেন। আমেরিকার সাপোর্ট নিয়েই চালিয়েছেন। আর বারো বছর চালিয়েছেন তাদের বানানো দলগুলো। ৫০ বছরের মাঝে ২৮ বছর তো তারাই চালালো। এই ২৮ বছরে কোনদিনও কিচ্ছু বলে নাই আমেরিকা। তাদেরকে মানবাধিকারের সবক দেয় নাই। গণতন্ত্রের সবক দেয় নাই। সব সবক এখন হাসিনাকে দিচ্ছে। হাসিনার গণতন্ত্রের সরকারকে দিচ্ছে। হতে পারে সেটা দুর্বল গণতন্ত্র।
এই ২৮ বছরে বাংলাদেশে অকর্ম তো আর কম হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ঘটলো। স্বপরিবারে হত্যা। শিশু রাসেলও রেহাই পেলনা। তখনও আমেরিকা চুপ। হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার সময়ও চুপ। খালেদার সময় মাইলকে মাইল হিন্দুবাড়িঘর পোড়াবার সময়ও চুপ। মানবাধিকার নাই বলে তারা তখন লাফিয়ে ওঠেনি। অথচ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিলো একাত্তরে; মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে। তখনও আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে একবারও বলেনি পাকিস্তানের উচিত মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেই হবে।
তখন নির্বাচন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকা মুখে কলুপ এঁটেছিল। আজ মুখ খুলেছে। আসলে এটাই আমেরিকা। আজো বদলায়নি তারা। তখন যেমন ছিল, আজো ঠিক তেমনই আছে। মাঝখানে কেটে গেছে কেবল সময়। অথচ সময় ওদের বদলাতে পারেনি। আজ ৫১ বছর পর স্বাধীনতা দিবসের এই ক্ষণে আমেরিকার অবস্থানের কথা খুব খুব করে মনে পড়ছে। মনে পড়ছে বাংলার স্বাধীনতা বিরোধিতার কথা। তারা যদি সেদিন গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতো তাহলে বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস হয়ত অন্যভাব লেখা হতো।
তারা তা করেনি এবং আজো তারা বদলায়নি। বদলায়নি এদেশে তাদের দোসররাত্ত। এরা আজো শুধু অন্তরে নয়, প্রকাশ্যেও পাকিস্তানকে লালন করে, ধারণ করে। ধারণ করে হাতেও। পাকিস্তানী পতাকা হাতে স্বাধীন বাংলার মাটিতে যায় খেলা দেখতে। চেতনার সরকারের আমলেও গেল। স্টেডিয়ামে বসে সারাক্ষণ পাকিস্তান পাকিস্তান বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললো। কতটা নির্লজ্জ আর দুঃসাহসী এরা তা এদের মুখভর্তি থুতু দেখলেই বোঝা যায়।
আজ সময় হয়েছে এদেরকে উল্টো থুথু দেবার। থুতু দিয়ে এদের মুখ পুরোটা ঢেকে দেয়া দরকার। দরকার বছরের বিশেষ কোন দিবসকে বিশেষ থুতু দিবস হিসেবে ঘোষণা করার। পুরো জাতি দিনভর সেদিন ঘটা করে প্রতিকী অর্থে ওদেরকে থুতু ছিটাবে। সারা দেশজুড়ে ছিটাবে। আবালবৃদ্ধবনিতা ছিটাবে। পাশাপাশি নব্য ভোল পাল্টানোওয়ালাদেরও ছিটাবে। নিঃসন্দেহে ওরা এটা ডিজার্ভ করে। এটা ওদেরও প্রাপ্য।
ওদের বোঝা দরকার, ওরা জন্মেছে এই মাটিতে। শিক্ষা নিয়েছে এই দেশে। দেশেরটা খেয়ে, দেশেরটা পড়ে ওরা বড় হয়েছে। দেশটা ওদের দিয়েছে জাতির জনক। বেইমানী করার জন্যে না, নেমক হারামী করার জন্যে না। ওদের উচিত এখন তাঁর মেয়ে হাসিনার পাশে থাকা। কেননা তাঁর বাবার নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন হয়েছে। আর তাঁর নেতৃত্বে দেশে অবিরত উন্নয়ন হচ্ছে। বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়েছে। হয়েছে আরো অনেক কিছু। এ দেশের প্রতি মায়া, ভালোবাসা শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি আর কারও নেই। থাকতে পারেও না।