Home রাজনীতি বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে : ফখরুল

বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে : ফখরুল

35

স্টাফ রিপোটার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এতো নির্যাতন, এতো নিপীড়ন, এতো হত্যা, এতো গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে- এটাই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে রাগের কারণ, ভয়ের কারণ।

মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশ-র‌্যাব কর্তৃক গুম-খুন-ক্রসফায়ারে হতাহত নেতা-কর্মীদের পরিবারকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিসহ সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের ১৪ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

গত ৯ বছরে সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।

দমনপীড়নে বিএনপিকে দমানো যাবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রীকে বেগম খালেদা জিয়াকে তারা(সরকার) বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেনো? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন তাহলে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে-এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না।

তিনি বলেন, গতকাল(সোমবার) থেকে আমাদের আবার নতুন করে গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং সেটা হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে। গোটা দেশের মানুষ দেখছে যে, মানুষ কিভাবে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে কিন্তু বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা কেউ থেমে নেই। গতকাল লক্ষীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমন করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুব দল-ছাত্র দলের নেতাদেরকে ঘর থেকে ধরে এনে মারদোর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যারা দেশে আছি আমরাও তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে কিন্তু এখন জেগে উঠছি। জেগে উঠতে হবে- বিকল্প নেই্ আমাদের কাছে। এই জেগে উঠার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই দানবকে উপড়ে ফেলে জনগনের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, এই কথা আমরা দিতে পারি যে, আমরা যদি এই সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, একটা সত্যিকারের জনগনের পার্লামেন্ট আনতে পারি তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের পূর্ণবাসনের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, ভিক্টম হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই তাদের সকল প্রকার রাষ্ট্রের সিষ্টেমের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এতোটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আমরা নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারা যেন বাকি জীবনটা চালাতে পারে তারজন্য সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব।

টর্চার সেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন, এই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তারা তুলে নিয়ে যায়, তারপরে দেখেছেন, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে- তাদের সেই টর্চার সেল আছে। তার নাম দিয়েছে আয়না ঘর। সেই আয়না ঘরে নিয়ে যায়। যাদেরকে মেরে ফেলতে হয় তাদেরকে মেরে ফেলে, যাদেরকে রেখে দিতে হয় তাদের রাখে, টর্চার করে, বছরের পর বছর তাদেরকে রাখে। যারা কয়েকজন সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলো, তারা বিদেশে চলে গেছেন, গিয়ে সেখান থেকে বলছেন যে, এই ধরনের একটা সেলে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিলো।

আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তিনি নিজে বলেছেন, আমি নিজে একজন ভিকটিম। তাকে যখন ১/১১ সময়ে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময়ে তাকে রিমান্ডের নাম করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এমন টর্চার করা হয়েছিলো যে, তার কোমড় ভেঙে গিয়েছিলো।আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা কল্পনাও করিনি যে, এই বাংলাদেশ আমাদের দেখবে হবে। আজকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে এজন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।

মির্জা ফখরুল বলেন, এরা বড়াই করছে-সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিয়েছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের পার কেপিটাল ইনকাম নাকী ২৮‘শ টাকা হয়ে গেছে। আর এদিকে চা শ্রমিকেরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে।

ওই দিকে শতকরা ৪২ জন মানুষের জীবন দারিদ্য সীমার নিচে চলে গেছে, দুই বেলা খেতে পায় না। কিছুক্ষন আগে মোবাইলে দেখলাম একজন চা শ্রমিকের নেতা বক্তৃতায় তাদের খাবারের হিসাব দিচ্ছেন। সকালে একটা রুটি চা দিয়ে ডুবিয়ে, দুপুরে রুটি এবং রাত্রে একটু ভাত আর ডাল অথবা একটু সবজি। এখনো এই ৫০ বছর স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশে শ্রমিকদের এই অবস্থা। তারপরে তারা বলেন, আমরা নাকী তাদের উন্নয়ন দেখতে পাই না।আপনারা তো আওয়ামী লীগের যতজন মানুষ আছেন আপনারা জনগনের পকেট করে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন আর উন্নত হয়েছেন, ধনী হয়েছেন। সবাই দেখছেন প্রতিমুহুর্তে।

জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য যুব দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং হেল্প সেলের সদস্য মামুন খান, ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দিন শাওনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা কাকন, হেল্প সেলের সুমন আহসান, ওবায়দুর রহমান, কাজী এমদাদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম রাসেল, এমদাদুল হক লিমন প্রমুখ।

গত ১ আগস্টে ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ছাত্র দলের নুরে আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম, ছাত্র দলের লিখন, সানাউল্লাহ, সুমন এবং নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে পঙ্গু মঞ্জুরুল আলম তাদের ওপরে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।