Home রাজনীতি বরিশাল সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় বিএনপির ভোটে

বরিশাল সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় বিএনপির ভোটে

35

ডেস্ক রিপোর্ট: বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেই। শুধু তাই নয়, মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার কারনে ১৯ জনকে বিএনপি আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পদের হিসেবে ‘সাবেক বিএনপি’। আর মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন কখনোই বিএনপির কোন পদে ছিলেন না। বরিশালে তার পরিচয় সাবেক মেয়র মরহুম আহসান হাবিব কামালের পুত্র। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ছাত্র দলের কমিটিতে ছিলেন। এই পর্যন্তই তার রাজনীতির দৌড়।
সামগ্রিক অবস্থায় প্রমাণিত, বরিশাল সিটি নির্বাচনে কোন ভাবেই নেই বিএনপি। কিন্তু এরপরও বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে বিএনপি ঘরানার ভোটে। কারণ সাত জনের মধ্যে তিনজন খামাখা প্রর্থী হিসেবে বিবেচিত। বাকী চার মেয়র প্রার্থীর কারোই নিজস্ব ভোট ব্যাংক নেই। আর তাদের দলীয় ভোট ব্যাংকের আবস্থাও মাজুল। এ ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে আছে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকা বিএনপি। সবাই জানে, বিএনপির ভোট মানেই আওয়ামী বিরোধী ভোট। যা সত্তর থেকে ৭৫ শতাংশ। এবং এই ভোটের সিংহ ভাগই ধানের শীষ প্রতীক প্রভাবিত। বিগত সিটি নির্বাচনের ফলাফল এমনই বার্তা দেয়। খবর আমাদের সময়. কম

গত চারটি সিটি নির্বাচনের মধ্য ২০১৮ সালের ফলাফল বিবেচনার বাইরে রাখা প্রয়োজন। ২০১৮ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাসানাতপুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ ভোট। আর বহুবার নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং বরিশালের রাজনীতির অন্যতম নাটেরগুরু, সাবেক এমপি-হুইপ, বরিশালের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মজিবুর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪১ ভোট।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৩ সালে বরিশাল সিটির প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান সরোয়ার ৪২ হাজার ৬২১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের এনায়েত পীর পেয়েছেন, ৩২ হাজার ২৬৫ ভোট। মনে হতে পারে, বিএনপি-আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান মাত্র দশ হাজার। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। কারণ ওই নির্বাচনে বিএনপির আরো দুই নেতা প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ২০ হাজার ২৪৮ ভোট এবং এবাদুর রহমান চাঁন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৫৬ ভোট। বিএনপির তিন নেতার প্রাপ্ত সম্মিলিত ভোট ৭৬ হাজার ৭২৫। মানে আওয়ামী লীগের দ্বিগুণেরও বেশি।

বরিশাল সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। এ নির্বাচনে ছাত্রদল ও জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাধ্যমে গড়ে ওঠা বুদ্ধিদীপ্ত শওকত হোসেন হিরণ ৪৬ হাজার ৭৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মাত্র ৫শ’ ৮৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপি মনোনীত সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। তিনি বরিশাল ও বিএনপিতে বহিরাগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এখানেই হিসেব পর্ব শেষ নয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪১৬ ভোট এবং এবাদুর রহমান চান পেয়েছেন ১৯ হাজার ৬২৬ ভোট। মানে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট ২৪ শতাংশের বিপরীতে বিএনপির ভোট প্রায় সত্তর শতাংশ।

বরিশাল সিটির ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৬৬ হাজার ৭৭১ ভোট পেয়ে পরাজিত হনে আওয়ামী লীগের প্রার্থ, সিটিং মেয়র শওকত হোসেন হিরন। আর ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। ভোটের ব্যবধান ১৬ হাজার ৯৮০ ভোট। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।

এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ২০১৮ সালের পুনরাবৃত্তি হবার সুযোগ নেই। এদিকে বরিশালে আওয়ামী লীগের জন্য রেড সিগনাল দিচ্ছে গাজীপুরের ফলাফল। এর সঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে ৪ জুন বহিস্কৃত নেতা এবং কাউন্সিলর শরীফ মোঃ আনিসুর রহমানের অভিযোগ এবং অন্যান্য রটনা সত্য হলে বরিশাল সিটি নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীনদের জন্য হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।