Home জাতীয় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের নামে প্রতারণা,আটক ৩ প্রতারক

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের নামে প্রতারণা,আটক ৩ প্রতারক

21

মো.পাভেল ইসলাম মিমুল, রাজশাহী অফিস: রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা শাখার অভিযানে চলমান ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে প্রতারণার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিনজন প্রতারককে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কনস্টেবল নিয়োগে প্রতারণার উদ্দেশ্যে নেয়া ৩২টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক এবং প্রায় ৫৬ কোটি টাকার এমাউন্ট বসানো স্বাক্ষর করা ১০টি চেক এবং ৫০টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, ৩টি স্মার্ট মোবাইল ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।

চলমান ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে একটি চক্র বিপুল অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে চাকরি দেয়ার কথা বলছে মর্মে অনেক প্রার্থীর অভিভাবকের মাধ্যমে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনের কাছে অভিযোগ আসে।

এরপর প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ রুহুল আমিনকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮ টার দিকে দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা শামসুলের ছেলে মারুফ শাহরিয়ারকে (৩৬) গ্রেফতার করে। এর পর তার ওই মেস থেকে ২টি চেক,৩টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও ১টি স্মার্ট মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ পুলিশে নিয়োগে চাকরি পাইয়ে দেবার কথা বলে প্রার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় অবস্থানকারী জড়িত আরেক জনের নাম বলে। ডিবি টিম ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বরিশালের মঙ্গলহাট এলাকার শাহাদত হোসেনকে (৩৩) গ্রেফতার করে।

এসময় তার হেফাজত থেকে ২০টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প,২০টি চেক এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করে।

শাহাদত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশ নিয়োগে প্রতারণার কথা স্বীকার করে এবং গাজিপুর জেলার কালিয়াকৈর এলাকার আরেক ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা জানায়। একই টিম অভিযান চালিয়ে গাজীপুর এলাকার আব্দুল আজিজকে (৪২) গ্রেফতার করে। এসময় তার হেফাজত থেকে ২৭টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, ২০টি চেক ও ১টি স্মার্ট মোবাইল উদ্ধার করে।

আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়,তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ভর্তিচ্ছুদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং নিজেদের কখনো পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা,আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছের লোক পরিচয় দিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা জেলা ভিত্তিতে কোনো জেলার জন্য ১৩ লক্ষ আবার কোনো জেলার জন্য ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকার চুক্তি করে।

প্রতারণার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কারো কাছ থেকেই তারা নগদ অর্থ গ্রহণ করেনি। সকলকেই বলেছে ফাঁকা চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্প দেওয়ার জন্য। চাকরি হওয়ার পর টাকা পরিশোধ করে স্বাক্ষর করা চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত নিতে হবে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্য নেওয়া স্বাক্ষর করা ফাঁকা ব্যাংক চেক এবং স্বাক্ষর করা ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।

চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই চক্রটি অন্তত ত্রিশ জনের কাছ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছিল। এই প্রতারক চক্র নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল।
আটক ব্যক্তিদের বিজ্ঞাদালতে সোপর্দ করে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়।