Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প: ফিরে দেখা

অনুগল্প: ফিরে দেখা

26

পলাশ কলি হোসেন শোভা; তোমার কেন মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না? তোমাকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। হু বলছে তুমি ভাইয়াকে বেশি ভালবাসো। ওর জন্য সব সময় অস্হির হয়ে পড়ো। আমি সব বুঝি বুঝলা মা

মেয়ের সাথে ফোনে এরকমই কথা হচ্ছিলো। রানু ভেবে পায় না কেন মেয়েটা এমন ধারণা নিয়ে থাকে।
কবে আসবে ঢাকায়?
জানিনা। অনেক কাজ পরে গেছে আগামী তিন মাস তো পারবোই না। মা এসে যাবো জানুয়ারি তে। চিন্তা করো না। রইসাকে আনতে যাবে রাখি। বলেই ফেনটা রেখে দিলো মেয়ে।

রাত এগারোটা বেজে গেছে। বিছানায় শুয়ে পড়ে রানু। মনে পড়ে যায়, তার ছেলেবেলার কথা। রংপুরের অজো গ্রাম জলঢাকাতে একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছে। সেজ ফুপি র বিয়ের পরই চলে যায় নরওয়ে। ওখান থেকে কয়েক বছর পরপর দেশে আসতেন আর আনন্দে কেটে যেত এক মাস। অবস্হাপন্ন গেরস্থ ওরা। বাবা কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যবসাও করেন। মা কিছুটা লেখা পড়া জানতো। চাচারা বেশ প্রভাবশালী। ফুফুদের রুপের গুণে পাঁচ জনের খুব বড় ঘরে বিয়ে হয়। সেজ ফুপি সবচে সুন্দরী তাই বোধকরি তাকে দেশান্তরি হতে হয়। মানে ফুপা বিয়ে করে নরওয়ে তো সেটল হয়। দুই ছেলে। কোন মেয়ে নেই। আর রানু হয়েছেও একদম সেজফুপির মত।

তাই তো ফুপি ওকে বেশি আদর করতো সব সময়। কলেজে পড়ার সময় ফুপি জলঢাকায় আসে। সাথে দুই ছেলে। বড়টা নরওয়ে গবর্নমেন্ট এর উচ্চ পর্যায়ে জব করে। ছোট টা ভার্সিটিতে পড়ছে। এই আসাটাই রানুর জীবন টাকে বদলে দেয়। কলেজে যাবার জন্য শাড়ি পড়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ পড়তে গিয়ে দেখে আয়নার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে রবিন।
টিপ পড়লে তোমাকে খুব অন্য রকম লাগে।
কি রকম?
সেটা তো বলবো না। সব সময় পড়ো না কেন?
ইশ্! আর কাজ নেই, শাড়ি পড়লে টিপ পরি, এমনি এমনি পরবো কেন?
এমনিই পরবে। শাড়িও সব সময় পড়বে।
আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখেন কেন?
কে বলছে দেখি?
আমি দেখিনা বুঝি?

তাহলে তো তুমিও লুকিয়ে আমাকে দেখো.
যান্ আমার রুম থেকে বলেই রানু রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই হাতটা ধরে ফেলে রবিন। আজ কলেজে না গেলে হয় না?
না হয় না।
আচ্ছা যাও তবে শুনে যাও মেয়ে, আমি কিন্তু বেশি দিন লুকিয়ে দেখবো না। সামনে প্রতিমা বানিয়ে দেখবো।
যান্ আব্বা আমারে জবাই করে ফেলবে, বলেই এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে চলে যায় রানু।

তোর কথাটায় আমার মন সায় দেয় না রে সাজু, রানু তো একটাই মাইয়া আমার। দূরদেশে গেলে কেমন না কেমন হয়। না না সাজু তুই এই চিন্তা বাদ দে
ভাইজান বাদ দিমু ক্যান? আমারে তো আপনেই দূরদেশেই বিয়ে দিছিলেন। তখন তো না করেন নাই। অখন আমি ওরে নিতে চাই, এখন না করলে তো আমি শুনমু না

সাজুরে বয়স, বয়স একটা ব্যাপার। তখন বয়স কম ছিলো স্বপ্ন আছিলো এহন ডর করে, সাহস পাই না রে বইন সাহস পাইনা।
আমারে দেইখা তো ডরানের কথা না ভাই জান। তাছাড়া রবিনও ওরে পছন্দ করছে আপনে আর না কই রেন না

চারদিনের মাথায় বিয়ে হয়ে গেলো রানুর।
মানুষটা যে এত টা ভালো রানু ভাবতেই পারেনি। দশদিন পর ফুপিরা চলে যায়। একমাসের মধ্যেই রানু কে নিয়ে যাবে।
মাস কেন? দিন ক্ষণ ই যেন কাটেনা।
মা রান্না শেখায় চাচীরা আদর করে এটা ওটা শেখায়। শেষের দিকে কাজ শিখতে জানতে সময় এসে যায় নরওয়ে যাবার।
ভয় পেয়েছিলে প্লেনে? আমি কি ভীতু?
ওও খুব সাহসী দেখা যাবে কত সাহস।
দেখেন

ফুপির আদর রবিনের ভালবাসায় কিভাবে যে চারটি বছর চলে গেলো টেরই পায়নি রানু। বাড়ি যাবার কথা মনেও হয়নি। এর মাঝে চলে এসেছে জ্যাকি আর জিনিয়া।
পনেরো বছর পর।

এক রোড এক্সিডেন্টে রবিন এর মৃত্যু সংসারটাকে তচনচ করে দেয়। ছেলেটা পড়া শোনার সমস্যা হবে তাই ওকে রেখে জিনিয়াকে নিয়ে আবার চলে আসে জলঢাকায়। ফজরের আযান দিচ্ছে। সারাটা রাত ঘুম হয়নি রানুর। এবার উঠতেই হবে।
এখানেই মেয়েটা বড় হলো বিয়ে দিলো।

আর মেয়েটার ধারণা মা যদি আমায় ভালবাসতো তবে নরওয়েই থেকে যেতো। ভাইকে বেশি ভালবাসে তাই ওকে ওখানেই পড়াশোনা করিয়েছে। এই অভিযোগ থেকে রেহাই পেলো না এই জীবনে। কি করে বোঝাবে মেয়ে কে। রবিন কে ছাড়া অসহ্য হয়ে উঠে সব কিছু ।

তাইতো সে একরকম রবীন হীন জীবন থেকে পালিয়ে এসেছে। প্রাণের জল ঢাকায়।
জ্যাকি বছরে একবার এসে মাকে দেখে যায়। ফুপিও আর কখনো আসেনি। দিন লিপির পঞ্জিকা এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।

-লেখক : অধ্যাপক (অব) মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।