Home স্বাস্থ্য তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

38

ক্যান্সার নির্মূলে সচেতনার খুবই প্রয়োজন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম সফল করতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যা ভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচি (ইপিসিবিসিএসপি)’ প্রকল্পের আওতায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত ‘জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্টানিং এবং প্রতিরোধ কর্মসূচি’ পর্যালোচনার লক্ষ্যে আজ ২ নভেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব রাশেদা আকতার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু, ইউএনএফপিএ’র হেলথ চীফ বিহাবেন্দ্র এস রঘুবংশী (ঠরনযধাবহফৎধ ঝ জধমযাঁধহংযর)। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলালসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এর প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক, এমপি বলেন, বছরের করোনার চাইতে ক্যান্সারে তিনগুণ বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ক্যান্সার নির্মূলে সচেতনার খুবই প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান না করা, তামাক সেবন না করা, ফ্যাটিফুড কম খাওয়া, ভেজাল খাবার না খাওয়াসহ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। দেশে বছরে দেড় লক্ষ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার সেন্টার থাকবে। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে। ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এপযর্ন্ত ডেঙ্গুতে দেড় শত মানুষ মারা গেছেন এবং চল্লিশ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে। এ পযর্ন্ত ৫০ টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম সফল করতে হবে। ক্যান্সারের আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আসেন ফলে তাদেরকে বেশিরভাগ রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু শুরুতে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে গত পাচ বছরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৪ লক্ষ মহিলার স্ক্রিনিং করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫.৭১ শতাংশ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৮ শত ৫৪ জনের ভায়া (জরায়ু মুখ ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল এবং ১.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার ২ শত ৩৪ জনের সিবিই (স্তন ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল। ভায়া পজেটিভ মহিলাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৯ শত ৫৩ জনের কল্পোসকপি, ১২ হাজার ৯ শত ৪৪ জনের হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়েছে এবং ২০ হাজার ৩০ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান এই রোগের বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে একটি এইচপিভি-ডিএনএ গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মহিলাদের জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারের হার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এর কার্যক্রমের ফলে ২০১২ সালে স্তন ক্যান্সারের হার ২৩.৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থাৎ ৪.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং একই সময়ে জরায়ু মুখ স্তন ক্যান্সারের হার ১৯.৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থা ৭.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে ৬২ হাজার ১৯ জনের স্ক্রিনিং করে ১৪ হাজার ৮ শত ৩৬ জনের (২৩.৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ১১ হাজার ৯ শত ৫৬ জনের (১৯.৩ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৭ শত জনের স্ক্রিনিং করে ১৩ হাজার ২৮ জনের (১৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ৮ হাজার ২ শত ৬৮ জনের (১২ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে স্ক্রিনিং করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লক্ষ মহিলাকে প্রি-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম, পপুলেশন কভারেজ বৃদ্ধি এবং স্ক্রীনিংকৃত পজিটিভ মহিলাদের চিকিৎসা, জনবল ও যন্ত্রপাতির সক্ষমতা বৃদ্ধি, রেডিওথেরাপি, অনকোসার্জারী, হসপিটাল প্যাথলজি সেবা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং ফ্যসিলিটি এবং ইলেক্রনিক ডাটা ট্র্যাকিং সেবা ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলঅর ২০০ হতে ৪৯২টি উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ এবং ৩১টি কল্পোস্কপি রেফারাল কেন্দ্র হতে ৩৭টি তে উন্নীতকরণ করণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কেন্দ্রের উদ্ধমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ম তলায় জরায়ু মুখ ক্যান্সার রোগীদের জন্য ৪৫ শয্যা এবং ১১তম তলায় ৪৫ শয্যা বিশিষ্ট ঙহব ঝঃড়ঢ় ইৎবধংঃ ঈষরহরপ স্থাপন ও স্তন ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। সিবিই স্ক্রীনিং পজিটিভ এবং স্তন ক্যান্সার রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৩৭টি ব্রেস্ট ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গবেষণা কর্ম সম্পাদন করা হবে। অনকোলজি বিল্ডিং (ব্লক-এফ) এ পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির জন্য নির্মাণাধীন ৮ম ও ৯ম তলার উপরে প্রকল্পের অধীনে ৩৩৫১২ বর্গফুট জায়াগার উপর দুটি তলা (১০ম ও ১১তম) নির্মাণ করা হবে।