Home জাতীয় ঢাকায় লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংহতি সমাবেশ

ঢাকায় লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংহতি সমাবেশ

102

মুক্তার হোসেন নাহিদ: রাবার বাগান স্বাভাবিকভাবে পরিবেশ বিরোধী। তাই প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার্থে লামা রাবার বাগানের সকল ইজারা বাতিল করার দাবি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। তিনি লামায় ভূমি রক্ষার আন্দোলনকারী জনগণের সংকটের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকাল ৪টায় রাজধানী ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে লামা সরই ভূমি রক্ষা কমিটির আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এই দাবি তোলেন।

‘প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী সকল রাবার বাগানের ইজারা বাতিল কর’ এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ভূমি দস্যুদের কোম্পানি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক রেংয়েন পাড়ার পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটিসহ গ্রামবাসীদের নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং ত্রিপুরা ও ম্রোদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উক্ত সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরার সভাপতিত্ব ও রূপসী চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডক্টর হারুনুর রশিদ, ব্যরিস্টার সাদিয়া আরমান, লামা সরই ভূমি রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সংলে ম্রো, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈন উদ্দিন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনে সৈকত আরিফ প্রমূখ। এসময় লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র সদস্য সচিব লাংকম ম্রো, রিংরং ম্রো, সদস্য রুইপাও ম্রো, সদস্য ইংচং ম্রো, সদস্য মথি ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে সংকটের মূল কারণ হচ্ছে এই রাষ্ট্র। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অধিবাসী পাহাড়িরা রয়েছেন তাদের কাছে এই রাষ্ট্র অনেক আগে হারিয়ে গেছে। এই হারিয়ে গেছে বলে সেখানে আমরা আর্মি ক্যাম্প দেখি, সেখানে জন মানুষের সাথে রাষ্ট্রের অনাস্থা সম্পর্ক দেখি এবং সেখানকার পাহাড়িরা নিজভূমে পরবাসী। আমাদের এই রাষ্ট্র এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছে এটি এখন একটি বাজারি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না থাকায় সংসদ সদস্যরা অনেক অর্থের বিনিময়ে পার্টি ও দল থেকে মনোনয়ন কিনে নিয়ে সংসদ সদস্য হচ্ছেন। এরা সকলে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে ব্যবসায়ী। তারা জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় না। এরাই এখন জনগণকে শাসন করছেন। তার একটি উদাহরণ হচ্ছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তারা পাহাড়িদের নিজ জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম, অন্যায়-অনাচার শুরু করেছে, সেই যে অনাচারটা তারা করেছে সেটা হচ্ছে পানিতে বিষ মিশে দেওয়া।
সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকরতা, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নিউএজ পত্রিকার সাংবাদিক সাইদিয়া গুলরুখ ও মাহতাব উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জহুর লাল রায়, সাবেক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা উৎপল খীসা, প্রকোশলী কল্লোল মোস্তফা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনে সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য দয়াসোনা চাকমা, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ঢাকা শাখার প্রতিনিধি চঙে ম্রো প্রমূখ।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার একই স্থানে শেষ হয়।