Home জাতীয় চা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী গেজেট বাতিল চেয়ে স্বারকলিপি পেশ।

চা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী গেজেট বাতিল চেয়ে স্বারকলিপি পেশ।

31

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে অবিলম্বে চা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী গেজেট বাতিল, দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করাসহ ৬ দফা দাবিতে ৪ অক্টোবর, ২০২৩ বুধবার সকাল ১১ টায় ঢাকায় নিন্মতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর মাস ব্যাপী ৬টি ভ্যালীর বিভিন্ন চা বাগানে সংগ্রহীত গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি পেশ করার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের এর কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ও লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক বিরেন সিং, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মানস নন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রেজা, অর্থসম্পাদক রাজু আহমেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সংগঠক ও মালনিছড়া চা বাগানের শ্রমিক অজিত রায়, খান বাগানের শ্রমিক রতন বাউরি, হিলুয়াছড়া চা বাগানের শ্রমিক রবি মাল, জেলা উপদেষ্টা প্রসেনজিৎ রুদ্র প্রমুখ। গত সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ৬ টি ভ্যালির ৩৬ টি বাগানে প্রায় ৩০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহসহ মতবিনিময় সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন ১০ আগস্ট ‘২০২৩ তারিখে চা বাগান মালিক ও সরকার পক্ষ, নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা ছাড়া এক তরফা চা শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে মজুরি সহ বিভিন্ন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। এই গেজেট বাস্তবায়ন হলে তার সমস্যা কি তা বক্তারা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, গেজেটে দ্বি বার্ষিক চুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় মজুরির আলোচনা বাতিল করে ৫% ইনক্রিমেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। এ হিসেবে ১ বছর অতিক্রান্ত হলে মজুরি বাড়বে ৮ টাকা ৫০ পয়সা, যা দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা ২০০ গ্রাম আলুও কিনতে পারবে না। এই গেজেট অন্যায় ভাবে প্রণীত হয়েছে শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে চা শ্রমিক ইউনিয়নকেও অকার্যকর করে চা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার হরণ করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই গেজেট বাস্তবায়ন হলে মজুরি নির্ধারণের জন্য চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেটুকু ভূমিকা রাখত সে পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও চা শ্রমিক ইউনিয়নের অতীত আন্দোলনহীনতা ও আপোষকামী নেতৃত্বের কারণে মালিক পক্ষ ও নিম্নতম মজুরী বোর্ড শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছে। উৎসব বোনাস ৫২ দিনের পরিবর্তে ৪৭ দিনের করা হয়েছে (১৭০*৫=৮৫০ টাকা কম)। চুক্তিতে বোনাস দিন দিন বাড়ানোর কথা, কিন্তু এই গেজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এক বছরের নতুন চুক্তির বকেয়া টাকা থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত হবে। চা শ্রমিকদেরকে সারাজীবন গ্র্যাচুইটি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলা হলেও অনেক বাগানে শ্রমিকরা চিকিৎসা সেবা পায় না। বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৯৯ ধারা অনুযায়ী গ্রুপ বীমা চালুর কথা থাকলেও কোনো বাগানে এই আইন কার্যকর করা হয়নি। গেজেটেও এই বিষয়টি কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে। কোম্পানির মুনাফার অংশ চা শ্রমিকদের পাওয়ার কথা, তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করার কথা থাকলেও এখনো চা বাগানে ৪ মাস ছুটি বহাল রয়েছে। এই গেজেটের শ্রম আইনের অনেক ধারাও লংঘন করা হয়েছে। চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার, রেশন, আবাসন নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। সব বাগানে অত্যন্ত সুকৌশলে চা শ্রমিকদের নিরিখ বাড়িয়ে, পিএফ এর টাকা ফাঁকি দিয়ে, অন্যান্য সুবিধা কর্তন করে শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তুু পাওনা ও অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নামতে গেলে আইন শুধুমাত্র শ্রমিকদের বিরূদ্ধে প্রযোজ্য হয়। মালিকদের পক্ষে শোষণ করার অবাধ অধিকার রয়েছে আইনে, এরপরও মালিকপক্ষ ও নিন্মতম মজুরি বোর্ড এই গেজেটের মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট মাসের চা শ্রমিকদের আন্দোলনের আকাঙ্খাকে পদদলিত করে নগ্ন ভাবে মালিকদের পক্ষে গেজেট প্রকাশ করেছে। তাই এই গেজেট চা শ্রমিকদের স্বার্থের বিরোধী ।