Home মতামত ক্রিকেট যতটা না স্কিলের খেলা, তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক

ক্রিকেট যতটা না স্কিলের খেলা, তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক

40

রিপন আল মামুন:

আমাদের অনেক সময় মানতে কষ্ট হয় পেশি শক্তি দিয়ে যা না করা যায়, মনস্তাত্ত্বিকভাবে তার চেয়ে বেশি কিছু করা যায়। পেশি শক্তি দিয়ে আপনি কারো মাথা ফাটিয়ে দিতে পারেন, হাত পা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে পারেন, হয়তো পেশি শক্তির জোরে এক ওভারে ১০০ মিটারের উপর দুইটা ছক্কা মারতে পারেন। কিন্তু তাতে লাভ কী দিনশেষে যদি আপনি হেরেই যান। জয় ছাড়া আপনার দক্ষতা দিয়ে কী করবেন! ইতিহাস তো সব সময় জয়ীকে মনে রাখে। তবে এটাও নিশ্চিত আপনি দক্ষতা ছাড়া পৃথিবীর কিছুই জয় করতে পারবেন না। তারমানে আপনার দক্ষতাকেই জয়ে রূপান্তর করতে হবে। আর এর জন্য আপনার মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন আবশ্যক।

ক্রিকেটের কথাই চিন্তা করুন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ক্রিকেটের দিকে আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখব যে বর্তমানে ক্রিকেট একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলায় পরিণত হয়েছে। দক্ষতায় সমান পারদর্শী হওয়া সত্বেও যারা ম্যাচ হেরে যাচ্ছে তাদের পরাজয়টা মূলত মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়ের কারণেই হচ্ছে। আর এজন্য ক্রিকেট বিশ্বের দলগুলো ক্রিকেটারদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটার উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানের মতো দলগুলো কোচের পাশাপাশি একজন মনোবিদকেও দলে নিয়োগ দিচ্ছে। এর উদ্দেশ্য একটাই ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখা। ক্রিকেটাররা তাদের অন্তর্নিহিত শক্তিটাকে যেন পাহাড় সমান চাপের মাঝেও দলের প্রয়োজনে যথাযথ সময়ে প্রয়োগ করতে পারে সেভাবে তাদের তৈরি করাই এই মনোবিদদের কাজ।

বাংলাদেশও ২০২৩ এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দলে একজন মনোবিদকে নিয়োগ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান মনোবিদ ফিল জন্সিকে সাকিব তামিমদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে দলে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। ২০১৫ বিশ্বকাপেও এই মনোবিদ কে দলে নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর সেবারই ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা অর্জনটাই করে। ইংল্যান্ডের মতো দলকে গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ।

মাঝে ২০১৮ সালেও কানাডাপ্রবাসী মনোবিদ আলী আজহার খানকে বাংলাদেশ দলে নিয়োগ দিয়েছিল বিসিবি। তিনিও দারুণভাবে বদলে ফেলেছিলেন সাকিব তামিম মুশফিকদের। বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করার সময় খুব কাছে গিয়ে হারের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটা তিনি করেছিলেন এভাবে, “আত্মবিশ্বাসটা আমরা (জয়ের) খুব কাছে এসে ধরে রাখতে পারি না। আমরা একে বলি তীরে এসে তরি ডোবা। এই তীরে আসতেও অনেক গুণ লাগে। তাঁরা যখন ওই চ্যালেঞ্জে আসছে, তীরে আসার পর নৌকার ওজন যখন বেশি হয়ে যাচ্ছে, তখন আর আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখতে পারছে না। আমাদের সুপ্ত প্রতিভাকে আরও বেশি বিকশিত করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে আমরা সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে সবকিছু ধরে রাখতে পারি। অবশ্যই এটা একটা স্কিল। এটা জাদু বা অন্য কিছু নয়। এটা অর্জন করার জন্য চর্চা করতে হবে। আমরা যখন মনস্তাত্ত্বিক স্কিল ট্রেনিং করব প্রতিদিন, তখন মস্তিষ্কের পেশি (মেন্টাল মাসল) উন্নত হবে।’

আর এই মনস্তাত্ত্বিক দিকটাতে যারা বেশি কাজ করছে ইদানিং সেই দলগুলোই সফলতা বেশি পাচ্ছে। পুরো দলের সফলতা ব্যর্থতা ১১ জন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করে অনেক সময় এই চাপটা দলের তরুণ খেলোয়াড়েরা নিতে পারে না। স্নায়ু চাপের কাছে হেরে নিজের সেরাটা দিতে না পারায় শেষে ম্যাচটাই হেরে যেতে হয়। আর যখন একজন খেলোয়াড় মানসিকভাবে শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী থাকে তখন তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে অনেক সময় প্রতিপক্ষ কাবু হয়ে যায়। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রুবেল হোসেনের সেই স্মরণীয় ওভারটার কথাই চিন্তা করুন। ওভারের প্রথম বলটা করতে যাওয়ার সময় রুবেলকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন ক্ষুধার্ত বাঘ শিকারির উপর আছড়ে পড়ছে। আর এই ক্ষুধার্ত বাঘ সেদিন ঠিকই দুটি শিকারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়।