Home রাজনীতি কলার ধরায় কৃষকলীগ নেতার পা ভেঙ্গে দিলো চেয়ারম্যানের লোকেরা ॥

কলার ধরায় কৃষকলীগ নেতার পা ভেঙ্গে দিলো চেয়ারম্যানের লোকেরা ॥

109

বরিশাল অফিস: দুপুরে খাবার ও পানি চাওয়ার অপরাধে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক স্কুল শিক্ষক ও কৃষকলীগ নেতাকে মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এই সাথে তার দুই চাচাকে মেরে আহত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে এমভি জামাল-৫ লঞ্চে বানারীপাড়ায় ফেরোর পথে। আহত মোস্তাফিজুর রহমান বিশারকান্দির ইউবিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ও ৯নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক। আহত তার দুই চাচা বানারীপাড়া উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাৎ হোসেন রানা ও বিশারকান্দি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিবুল্লাহ আকন। মোস্তাফিজকে গতকাল রবিবার স্বরুপকাঠী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
প্রতক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমভি জামাল-৫ লঞ্চে বানারীপাড়া উপজেলা থেকে প্রায় দুই হাজার দুইশত মানুষ যোগ দেয়। তাদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না শেষে বিকেলে পরিবেশন করে। কিন্তু মানুষের সংখ্যার চেয়ে খাবার ও পানি কম থাকায় হৈ-চৈ হট্টগোল হয়। ওই দিন সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় খাবার খেতে যায় মোস্তাফিজুর রহমানসহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী।
কিন্তু সেখানে খাবার ও পানি না থাকায় খবারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের সাথে বাকবিতান্ডার এক পর্যায়ে মোস্তাফিজুরের গালে কষে চর মরেন তিনি। এ সময়ে মোস্তাফিজ উপজেলা চেয়াম্যানের কলার ধরে টান দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হলে চেয়ারম্যানে ক্যাডার হিসেবে পরিচিত অস্ত্র মামলায় ১১বছরের সাজাপ্রপ্ত আসামী তপু এবং মোহাসিন ও জুয়েলসহ ৫/৬জনের মিলে মোস্তাফিজকে টেনে হিচড়ে লঞ্চের দুই তলা থেকে কিল ঘুষি এবং লাথি মারতে মারতে লঞ্চের নিচতলা এবং তিন তলার ভিআইপি কেবিন জোনে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে মোস্তাফিজকে মারধোর করা হয়। খবর শুনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা, বিশারকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ালীলীগের প্রচার ও প্রচারনা সম্পাদক সাইফুল ইসালাম শান্তসহ জেষ্ঠ্য নেতা কর্মীরা গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে।
এ কথা শুনে মোস্তাফিজের চাচা উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাৎ হোসেন রানা ও অপর চাচা বিশারকান্দি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ সেখানে গেলে তপু ও মোহাসি মারধর শুরু করে। বিষয়টি দেখে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা তাদের উদ্ধার করে।
আহত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্ধোধনীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় আমরা লঞ্চে উঠি। ওই দিন রাতে নেতা কর্মীদের খাবার সরবারাহ করেননি। পরের দিন শনিবার সকালের নাস্তার জন্য একটি বন রুটি, একটি কলা এবং একটি ডিম সরবারাহ করে। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ করা হয়নি। দুপুরে খাবার আয়েজন করা হলেও ৪ থেকে ৫শত মানুষ খাবার পায়নি। সন্ধ্যার আগে আমিসহ বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা খাবারের জন্য গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান সকলের সাথে খারাপ আচারন করেন। খাবার না থাকায় আমি পানি চেয়ে ছিলাম। তাও দেওয়া হয়নি। এর পরে সেখান থেকে নেমে আসতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজনে বাধা দেয়। এ নিয়ে বাকবিতান্ডা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক থাপ্পর মারে। তার লোকাজন পেছন থেকে ধাক্কা দিলে আমি চেয়ারম্যানে গায়ের উপরে পরে যাই এবং আমার হাত তার গায়ে থাকা গেঞ্জির কলারে গিয়ে পরে। পরে সেখান থেকে টেনে হিচড়ে আমাকে মারতে মারতে তিনতলার ভিআইপি কেবিনে নিয়ে মেরে আমার ডান পা ভেঙ্গে দেয়।
ইউটি সদস্য মহিবুল্লাহ্ আকন বলেন, লঞ্চের দোতলার ডেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে মোস্তাফিজের ঝামেলা হয়েছে এবং তাকে ভিআইপি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে শুনে সেখানে যাই। লঞ্চের কেবিন জোনে প্রবেশ কারা মাত্রই ও মোহাসি উপজেলা চেয়ারম্যানের সমানেই আমাকে মারধোর করে।
শাহাদাৎ হোসেন রানা জানান, ঘটনা শুনে ওই কেবিনে গেলে মোহাসিন ও তপু আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সামনে বসেই মারধোর শুরু করে। এ সময়ে চেয়ারম্যান কোন ধরনের বাধা দেয়নি।
এ বিষয় বানারীপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, মোস্তাফিজ জামায়ত শিবিরের লোক হওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে লঞ্চে বসে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের সাথে ঝামেলার সৃস্টি করছিলো। এ সময়ে নেতা কর্মীরা তাকে কয়েকটা কিল থাপ্পর মেরেছে। সে যে শিবির করতো তার প্রমান আমার কাছে রয়েছে।
বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত বলেন, লঞ্চে যে ঘটনাটি ঘটেছে তারা রীতিমত পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বানারীপাড়া থেকে যোগদানকারী সকলকেই আহত করেছে। এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠানে আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সে যদি জেষ্ঠ্য নেতাদের সাথে অন্যায় কিছু করে থাকে তার বিচার করা যেতো। পুলিশে দেওয়া যেত। তার বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থই ছিলো। কিন্তু তার দুই চাচা রানা ও মহিবুল্লাহ্ বলতে গেলে দূরসময়ে বিশারকান্দি আওয়ামীলীগকে ধরে রেখেছে। মোস্তাফিজের অপরাধের কারনে তাদের মারধোর করার ঘটনায় সকল নেতা কর্মীর মনে আঘাত পেয়েছে।মোস্তাফিজের জন্ম আওয়ামীলীগ পরিবারে । তাকে কখানো শিবির করতে দেখিনি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধার সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা বলেন, মোস্তাফিজ জামাত শিবির করেছে এমন কোন তথ্য উপজেলা আওয়ামীলীগের কাছে নেই। মোস্তাফিজ ও তার পরিবার বাইবর্ন আওয়ামীলীগের। উপজেলা চেয়ারম্যান কিসের ভিত্ত্বিতে এ কথা বলেছেন, সে টা তার বিষয়। সে যদি উপজেলা চেয়ারম্যানে কলার ধরে থাকে তা রীতিমত অন্যায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গা করা। এ জন্য তার বিচার হতে পারে। তার দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা যেত। একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান সহনশীল ও ধর্য্যশীল হতে পারতেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।