Home জাতীয় যে সড়কে সারা বছর ‘বর্ষাকাল’

যে সড়কে সারা বছর ‘বর্ষাকাল’

40

ডেস্ক রিপোর্ট: জুরাইনের প্রতিভা স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিম হোসেন। সপ্তাহে দুই দিন মাত্র স্কুলে যেতে পারে সে। কারণ হিসেবে সে জানায়, হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে রিকশা দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ভাড়ার জোগান দিতে পারে না তার পরিবার। রিকশা ছাড়া স্কুলের রাস্তা খালি পায়ে হেঁটে পার হওয়া সম্ভব নয়। শুধু সে নয়, তার শ্রেণির অর্ধেক শিক্ষার্থীই প্রতিদিন উপস্থিত হতে পারছে না শুধু সড়কে হাঁটুসমান পানির কারণে। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুরাইন আলমবাগ সড়কের চিত্র। যেখানে সারা বছরেই বর্ষাকালের মতো হাঁটু সমান পানি থাকে।

কী শীত কী বর্ষা, এ যেন বড় কোনো ডোবা। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে এমন হাঁটু সমান পানির কারণে বেশ ভোগান্তিতে রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। ব্যবসা ছেড়েও চলে যাচ্ছেন দোকানিরা। এখানকার স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখাও কমছে দিন দিন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও হাজের উচ্চবিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বদরুল আলম লাবু জানান, ৪০ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। রয়েছে বহু স্কুল ও মাদ্রাসাও। সবাইকেই রিকশা দিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টি ছাড়াই পানি থাকে সারা বছর। বৃষ্টি হলে সে পানি চলে যায় স্কুলের কক্ষে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এই অবস্হা এই সড়কের। তবে সাত-আট বছর ধরে সমস্যা অনেক বেশি। মূলত পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্হা না থাকায় সড়কে এমন পানি জমে থাকে। এমনকি বাসাবাড়ির পানিও সড়কে আসে। এত বছর ধরে এখানে এমন অব্যবস্থাপনা থাকলেও তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি জানান, আমরা কয়েক বার ব্যক্তিউদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। এখন এখানে নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি ছাড়া এই পানি সরার কোনো জায়গা নেই।

এই সড়কের ব্যবসায়ী রিমু ইলেকট্রনিক্সের কর্ণধার জানান, ২৪ ঘণ্টা পানি থাকে সড়কে। ক্রেতা নেই বললেই চলে। পানি মাড়িয়ে কেন এখানে মানুষ কেনাকাটা করতে আসবে। এখানে দোকান বেশির ভাগই বন্ধ থাকে। জোরে ঢেউ খেলে পানি অনেকের দোকানেও প্রবেশ করে। বেশির ভাগ নোংরা পানি হওয়ায় তা কাপড়ে লেগে যায়। এতে অস্বস্তিতে পড়তে হয় সবাইকে। এখানকার শিক্ষার্থীরা মন চাইলে স্কুলে যায়, নয়তো যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক মুরব্বি জানান, পাশেই বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় কারখানার ক্যামিক্যালের পানিও এই সড়কে এসে পড়ে। যার কারণে পানি সামান্য শরীরে লাগলে চুলকানো শুরু হয়। রিকশাচালক বায়েজিদ জানান, এই পানি পার হতে আমরা ১০-২০ টাকা নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে গর্তে আমাদের রিকশাও আটকে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রিকশা। আমরাও এই সড়কে রিকশা চালিয়ে স্বস্তিতে নেই। এ বিষয়ে জানার জন্য ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাসুদকে কয়েক দিন ধরে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকারকে ফোন দিলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কাজ চলছে। আপনি আরো বিস্তারিত জানতে এ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, এখানে বহুদিন ধরে এই সমস্যা। আসলে পানি সড়ক থেকে অন্যত্র সরার কোনো জায়গা না থাকায় পানি সড়ক থেকে সরছে না। সড়ক থেকে পানি সরাতে হলে নতুন করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। সড়কও উঁচু করতে হবে। আর এর জন্য সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে নকশা তৈরি করেছে। খুব শিগ্গিরই আমরা এর জন্য ট্রেন্ডার দেব। তবে কবে নাগাদ মানুষ এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী বর্ষার আগেই আমরা এর কাজ শেষ করতে পারব, বলে আশা করছি।
-ইত্তেফাক