Home রাজনীতি এখন দেশ চলছে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে–জি এম কাদের

এখন দেশ চলছে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে–জি এম কাদের

35

মাহবুবুর রহমান : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে দুটি জোট হবে। একটির নেতৃত্বে থাকবে সরকারি দল, সাথে থাকবে তাদের সমর্থকরা। অপর জোটের নেতৃত্ব দেবে জাতীয় পার্টি। দেশের বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষ জাতীয় পার্টির পতাকা তলে যোগ দেবেন। দেয়ালে দেশের মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে, তাদের বাঁচাতে হলে সামনে চলতে হবে। তারা জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে বিএনপি কোন জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবে না। কারণ, বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে আছে, দেশের মানুষও বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।

আজ দুপুরে কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র একই। আওয়ামী লীগ একবার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে, পরে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতিতে চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার বিএনপি গণতন্ত্র ধংসের কাজ শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র পুরোপুরি ধংস করেছে। তিনি বলেন, দেশে এখন আর গণতন্ত্র নেই। ১৯৯১ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র শেষ করে দিয়েছে। দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে, দেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে গণতন্ত্র থাকে না, জবাবদিহিতা থাকে না কোথাও। তাই দুর্নীতি ও দুঃশাসন বেড়ে গেছে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্বৈরতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এখন দেশ চলছে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে মানুষ ভয় পাচ্ছে, সরকারের সমালোচনা শুনতেও মানুষ ভয় পায়। মানুষের আতংক দেখেই বোঝা যায়, দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের মাঝে আতংকই গণতন্ত্র না থাকার প্রমাণ।

এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা শেষ করে দিয়েছে। স্বাধীনতার চেতনা ছিলো দেশের মালিক হবে জনগণ। তাই দেশের নাম দেয়া হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না, কোন বিভেদ থাকবে না। এখন স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি বলে মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের মানুষ। স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা হতো, এখন আমাদের দেশের সম্পদ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে বিদেশী বিভিন্ন জরিপে আমরা জানতে পারছি।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘ হলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে টাকার দাম কমে যাচ্ছে। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের গণমাধ্যমগুলো বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে, কর্মীদের চালিয়ে রাখতে পারছে না । তিনি বলেন, অনেকেই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর শাসনামলকে অবৈধ বলে, কিন্তু কোর্টের রায় অনুযায়ী ৮৬ সাল থেকে পল্লীবন্ধুর দেশ পরিচালনা অবৈধ নয়।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তখনই জাতীয় পার্টির সাথে জোট করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট না করে নির্মমভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারো জাতীয় পার্টির সাথে জোট করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টির সাথে অন্যায় আচরণ করেছে। গেলো ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম আচরণ করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে থাকবে। জাতীয় পার্টির পতাকা তলে থেকে কেউ অন্য দলের দালালি করলে তাদের ক্ষমা করা হবে না।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য- সাহিদুর রহমান টেপা, লেঃ জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি , এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, নাজমা আক্তার এমপি, এমরান হোসেন মিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, এডভোকেট রবিউল হক রবি, শাহারিয়ার ইকবাল। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট মোঃ আবু তৈয়ব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ স্বপন, আলমগীর হোসেন, জোছনা আক্তার, শারমিন সহ প্রমুখ।