Home প্রচ্ছদ ইরেজারে বিষাক্ত রাসায়নিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

ইরেজারে বিষাক্ত রাসায়নিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

47

ডেস্ক রিপোর্ট: ইরেজারে (লেখা মোছার রাবার হিসেবে পরিচিত) বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে, যা ব্যবহারে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। একটি গবেষণার আওতায় দেশ থেকে পাঠানো ইরেজারের ৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০টিতে চার ধরনের ক্ষতিকর থ্যালেটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। থ্যালেটস হলো অনেকগুলো রাসায়নিক পদার্থের সমষ্টি, যা ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যা শিশু স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

‘টক্সিক কেমিক্যালস ইন কিডস স্টেশনারি: থ্যালেটস ইন ইরেজারস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার (১৪ মার্চ) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন— এসডো আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করে এসডো, ফাইন্যানশিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ—ডাব্লিওআইওইএইচ।

থ্যালেটস হলো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের একটি গ্রুপ, যা প্লাস্টিককে আরো টেকসই করতে ব্যবহার করা হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ অন্যান্য পদার্থকে একত্রে জোড়া লাগানোর কাজ করে এবং প্লাস্টিককে নমনীয় করে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শিশুদের মানসিক আচরণ বিকাশের ওপর থ্যালেটস প্রভাব ফেলে। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই স্কুল অব মেডিসিনের ৯ বছর ধরে চলা ঐ গবেষণায় শিশুদের মধ্যে আগ্রাসন, মানসিক অস্থিরতা, মনোযোগের ঘাটতি এবং বিষণ্ণতার প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছিল।

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানান হয়, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে ইরেজারের নমুনা সংগ্রহ করে থ্যালেটসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য ওনজিন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্থানীয় দোকান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও রঙের ৪৭টি ইরেজার সংগ্রহ করা হয়েছিল, এর মধ্যে ৩০টির নমুনাতেই থ্যালেটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসডোর সভাপতি ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ইরেজার শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্টেশনারি। দুর্ভাগ্যজনক যে, এই ইরেজারগুলো শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে থ্যালেটস এবং দৈনন্দিন পণ্যে এর উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তায় প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ সব শিশুই ইরেজার ব্যবহার করে, কিন্তু সেখানে যে ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে এই তথ্যটা আমরা অনেকেই জানি না।’

আইসিডিডিআর, বির এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কিছু থ্যালেটস এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষাক্ততার মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং এডিএইচডি সিনড্রোমের মতো বিকাশজনিত রোগ, মনোযোগে ঘাটতি এবং হাইপারঅ্যাক্টিভিটির মতো রোগ দেখা গিয়েছে। থ্যালেটস-এর প্রভাব ভালোভাবে বোঝার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন এবং থ্যালেটস আমদানি ও ইরেজার তৈরিতে তা ব্যবহার করার ওপর তাৎক্ষণিক বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত থ্যালেটসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার জন্য একটি যথাযথ আইন আরোপ করা। এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, থ্যালেটসকে ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার’ বলা হয়, কারণ এগুলো শরীরের ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রায় হস্তক্ষেপ করে।-ইত্তেফাক