Home জাতীয় আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যের সব রুটে ভাড়ার নৈরাজ্য

আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যের সব রুটে ভাড়ার নৈরাজ্য

35

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফের বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হতেই আকাশপথে ভাড়ার নৈরাজ্য চলছে। রুট বিশেষে কোথাও দ্বিগুণ, কোথাও তিন গুণের বেশি ভাড়া বাড়িয়েছে এসব রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইনসগুলো। যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির অজুহাত ও অতি মুনাফার জন্য এই পথে নেমেছে উড়োজাহাজগুলো। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমিক, সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী ও সৌদিগামী ওমরাহযাত্রীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার আগে ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ছিল ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। ঢাকা-দুবাইয়ের রিটার্ন ভাড়া ছিল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবেই বাহরাইন, কুয়েত, কাতার ও আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তুঘলকি কায়দায়। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপের রুটগুলোতেও ভাড়া নিয়ে চলছে অরাজকতা। ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে কানাডায় যেতে আগে ভাড়া ছিল ৭০ হাজার টাকা। বিদেশি টার্কিস এয়ারলাইনস এখন ভাড়া নিচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি। দুবাই যেতে কাতার এয়ারওয়েজের কাছে গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বেশি অর্থ। প্রায় প্রতিদিনই দাম বাড়ছে টিকিটের। সিট নেই, যাত্রীর চাপ বেশি এসব অজুহাত দেখিয়ে লাখ লাখ গরিব শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন অভিবাসী ব্যয় বেড়েছে, তেমনি অস্হিরতা ও নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে দেশের এভিয়েশন খাতে। মার্চ পর্যন্ত সৌদি আরবের টিকিট নেই ট্রাভেল এজেন্টগুলোর কাছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, ভাড়ায় হস্তক্ষেপ করা বা লাগাম টানার দায়িত্ব সরকারের নয়। এটি ঐ খাতের ব্যবসায়ীরাই ঠিক করবেন। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেছেন, তাদের তেমন কিছুই করার নেই। তবে এভাবে কোনো কারণ ছাড়া আকাশপথের ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা দুঃখজনক।

তিনি বলেন, এয়ারলাইনসগুলোকে ডেকে ভাড়া কমানোর নির্দেশ দিয়েছি। কারণ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ আশপাশের কোনো দেশের বিমান ভাড়া বাড়েনি। শুধু ঢাকা থেকে কেন এত ভাড়া বাড়বে এমন কৈফিয়ত চাওয়ার পরও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। উলটো এয়ারলাইনসগুলো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ বাড়িয়েছে, তাই ভাড়া বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বাংলাদেশে বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা, এমিরেটস এয়ারলাইনস, ইতিহাদ এয়ারলাইনস, ফ্লাই দুবাই, সৌদি অ্যারাবিয়ান, কাতার এয়ারলাইনস, কুয়েত এয়ারলাইনস ও ওমান এয়ারলাইনস। এই এয়ারলাইনসগুলো সিন্ডিকেট করে ভাড়া দুই-তিন গুণ বাড়িয়েছে। টিকিটের দাম কেন বাড়ানো হলো তার কোনো ব্যাখ্যা তারা দিচ্ছে না। এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, করোনাকালে উড়োজাহাজগুলো বসা ছিল। এখন সেই লোকসান সুদে-আসলে উসুল করছে ভাড়া বাড়িয়ে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশ (আটাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা), হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং সাধারণ যাত্রীরা এই ভাড়া নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আটাব এবং বায়রা পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবও দিয়েছে। বিমান ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে গত সপ্তাহে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে এর প্রতিকার চায়। এই ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যেসব কর্মজীবী যাচ্ছেন, তাদের কয়েকগুণ বাড়তি বিমান ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বিমানের ভাড়া ৪০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখেরও বেশি হয়েছে; এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে ইতিমধ্যে বিমান প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের বিমান ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চাই, ভাড়াটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে।

ইতিমধ্যে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে বসে ভাড়া সমন্বয় বিষয়ে আলোচনা করতে সিভিল এভিয়েশনকে বলা হয়েছে। আটাব সভাপতি ও আকাশ ভ্রমণ লিমিটেডের ব্যবস্হাপনা পরিচালক মনসুর আহমেদ কালাম বলেন, ক্রমাগত ভাড়া বৃদ্ধির জন্য এয়ারলাইনসগুলোর অতি মুনাফার মানসিকতাই দায়ী। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সাউদিয়া, এমিরেটস, এয়ার আরাবিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, ইতিহাদসহ কয়েকটি কোম্পানিকে আমরা ফ্লাইট বাড়াতে বলেছি। কিন্তু তারা ফ্লাইট বাড়াচ্ছে না। প্রতিদিন সৌদি আরব ৪ হাজার ভিসা ইস্যু করে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ আরো ১ হাজারের বেশি ভিসা দিচ্ছে। আছে বিপুল সংখ্যক ভ্রমণ ভিসা। এর বিপরীতে এয়ারলাইনসগুলো প্রতিদিন যাত্রী নিতে পারছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার। ফলে এক, দেড় হাজার যাত্রী প্রতিদিন কম যাচ্ছে। এতে টিকিটের সংকট তৈরি হচ্ছে। এয়ারলাইনসগুলো অতিরিক্ত ফ্লাইট দিলে এই সংকট হতো না। হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, গত ১৫ নভেম্বরের পর থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ভাড়া বেড়েই চলছে। ফলে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা। এয়ারলাইনসগুলো করোনায় স্বাস্হ্যবিধির অজুহাতে গলাকাটা ভাড়া হঁাকাছে। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্হাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ভাড়া বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, আসলে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বাড়তে বাড়তে অনেক বেড়েছে। আমরা এটা কমানোর চিন্তা করছি, যাতে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এমিরেটসের সেলস ম্যানেজার জাবেদ বলেন, করোনার পর হঠাত্ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ায় টিকিটের দামও কিছু বেড়েছে। আগে আসলে কম ভাড়া,পরে আসলে বেশি ভাড়া এটাই সিস্টেম হয়ে গেছে।-ইত্তেফাক