Home জাতীয় ২০ বছর পর জানা গেল পেটে অস্ত্রোপচারের কাঁচি

২০ বছর পর জানা গেল পেটে অস্ত্রোপচারের কাঁচি

34

ডেস্ক রিপোর্ট: অপারেশনের (অস্ত্রোপচারের) কুড়ি বছর পর জানা গেল রোগীর পেটে কাঁচি (স্টিলের লিডিল হোল্ডার) রয়েছে। হতদরিদ্র বাচেনা খাতুন সহায় সম্বল বিক্রি করে মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করিয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। এত বছর পেটের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণায় ছুটেছেন বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে। সব অর্থ-সম্পদ খুইয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। সম্প্রতি তার পেটে এক্স-রে করে দেখা যায় অপারেশনকালে চিকিৎসকের রেখে দেওয়া কাঁচি। পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই কাটাছেঁড়া জোড়া দিয়েছিলেন চিকিৎসক। বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভুক্তভোগী নারীর খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। তাদের ধারণা রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অপারেশনের জন্য কৌশলে গোপন স্থানে নিয়ে গেছে তাকে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে গাংনীর ‘রাজা ক্লিনিকে’ চিকিৎসা নিতে আসেন ওই নারী। ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা তাকে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার পরামর্শ দেন। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকা নেন ক্লিনিক মালিক। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন আবদুল হামিদ। ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তৎকালীন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসাবে ছিলেন ক্লিনিকের পরিচালক পারভিয়াস হোসেন রাজা ও এ্যানেস্থেসিয়া করেন ডাক্তার তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছাড়পত্র দেন। অপারেশন করানো হলেও বাচেনা খাতুনের অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। ফের চিকিৎসক রাজার শরণাপন্ন হলে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরৎ পাঠান তিনি। পরে সুস্থতার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিক্রি করতে হয় শেষ সম্বল হালের দুটি গরু। প্রতিবেশীদের সহায়তায় সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের কাছে যান। ওই চিকিৎসক বাচেনা খাতুনের পেটে এক্স-রে করে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান পান। এ ঘটনায় হতাশা ও কান্নায় ভেঙে পড়েন বাচেনা খাতুন। তিনি বলেন, গত ২০ বছর অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। চিকিৎসার খরচ বহন করতে টাকা-পয়সা সব হারিয়েছি। যারা আমার অপারেশনের সময় ভুল করেছে তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।

বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী। আবার কী দিয়ে তার অপারেশন করাব। আমার টাকা-পয়সা আর কিছুই নেই। কার কাছে গেলে সহযোগিতা পাব তাও জানি না। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজন আলী বলেন, সহায় সম্বল বিক্রি করেও যখন হয়নি তখন বাচেনার চিকিৎসার জন্য গ্রামের অনেক মানুষ তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জানতে পারলাম বাচেনার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রেখেই সেলাই দিয়েছে ডাক্তার। ডাক্তারের এমন ভুলে বাচেনার পরিবার শুধু নিঃস্বই হয়নি জীবনও বিপন্ন হতে চলেছে। ডাক্তারের কাছে বিষয়টি জানাব। যদি তিনি এর ক্ষতিপূরণে ব্যবস্থা না করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসাবে ছিলাম। মানুষমাত্রই ভুল হতে পারে। এটি ডা. মিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে রোগীর সব দায়িত্ব নেব।

অপারেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তিনি ২০০১ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি অবসর নিয়ে নিজ এলাকা খুলনাতে আছেন বলে একটি সূত্র জানায়।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন মো. জওয়াহেরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বিষিয়টি তিনি শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পেটের ভেতরে কাঁচির সন্ধান মেলার পর সোমবার বিকালে চুয়াডাঙ্গায় ভুক্তভোগীর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। প্রতিবেশীরা জানান, অভিযুক্ত রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সোমবার সন্ধ্যায় বাচেনা খাতুনের বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন বাচেনা খাতুন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জিক্যাল কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের তত্ত্বাবধানে পুনরায় অপারেশন হওয়ার কথা বলে যান গ্রামে। কিন্তু সকাল থেকে দিনভর খোঁজ করেও হদিস পাওয়া যায়নি বাচেনা খাতুনের। এ ব্যাপারে ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান, ‘রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সারা দিন বাচেনা খাতুন আমার কাছে আসেননি।’-যুগান্তর