Home জাতীয় ১০৮৫ কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া

১০৮৫ কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া

19

ডেস্ক রিপোর্ট: গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে অগ্রগতি আনতে পারছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে চলমান জ্বালানি ঘাটতি ও ডলারসংকটের মধ্যেও গ্যাস বিল বকেয়া বাড়ছে। গত আগস্টে ছয়টি বিতরণ কোম্পানিতে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস বিল বকেয়া ছিল ৯৩৭ কোটি টাকা। অক্টোবরে এসে তা ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে তা আরো বেড়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ছয়টি বিতরণ কোম্পানির অনাদায়ি পাওনা ছিল ৯ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। বিদায়ি ২০২২ সালে বেসকারি খাতের বকেয়া বিপুল পরিমাণে আদায় করা হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেভাবে সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে পাইকারি বিদ্যুতের একক বিক্রেতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে এবং সার কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে বিপুলসংখ্যক অনাদায়ি পাওনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকির অর্থ ছাড় না করায় পিডিবির বকেয়া বেড়েছে। আর গত জুনে সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানাগুলো আগের মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করায় বিল আদায়ে ঘাটতি বেড়ে গেছে। সরকার সার উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি দেবে না বলেই সার কারখানার গ্যাসের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি বাড়ানো হয়েছিল। প্রশাসনের শীর্ষস্থান সচিবালয়েও গত ডিসেম্বর শেষে প্রায় ৯০ লাখ টাকা গ্যাস বিল বকেয়া রয়ে গেছে।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের বিদায়ি সিনিয়র সচিব (বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব) মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে গ্যাস খাতের সংস্থা-কোম্পানিগুলোর অনাদায়ি পাওনা সংক্রান্ত একটি সভা গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম বেনজামিন রিয়াজী জানান, গত বছরের আগস্টে ৯৩৭ কোটি টাকা বকেয়া ছিল, যা অক্টোবরে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এ সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। সার কারখানাগুলো নতুন মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পিডিবির বকেয়াও। তবে বেসরকারি খাতে আদায়ের পরিমাণ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। সভায় বিদায়ি জ্বালানি সচিব বকেয়া আদায়ের বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

দেশের সিংহভাগ গ্যাস ব্যবহার করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্রাহকরা। সংখ্যার বিচারেও বাকি সবগুলোর চেয়ে এর গ্রাহকসংখ্যা বেশি। এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ সভায় জানান, গত অক্টোবরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মূল্যের গ্যাস বিক্রির ৬০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায়ের হার ৬৩ শতাংশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার বিক্রির বিপরীতে আদায় ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আদায়ের হার ১০৮ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে বেসকারি খাত থেকে পুরোনো বকেয়া বিলও আদায় করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বকেয়া পরিশোধের জন্য সব গ্রাহককে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি-নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে যারা বিল পরিশোধ করছেন না, তাদের গ্যাস-সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, গ্যাস বিল বকেয়ার একটি বড় অংশ এখন পিডিবি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মামলার কারণে যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বিল বাকি রেখেছে সেগুলোও মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া কোন গ্রাহকের কাছে কত পরিমাণ বিল বাকি রয়েছে তার কারণসহ তালিকা দেওয়ার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হবে। শিগিগরই বকেয়া বিল আদায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, দেশে উৎপাদিত-বিক্রীত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪৩ শতাংশ, শিল্প কারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি স্টেশনে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাণিজ্যিকে দশমিক ৭৬ শতাংশ ও চা-বাগানে দশমিক ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়।
ইত্তেফাক