Home বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাইকোর্টের রায় মানছেন না ডাক ও টেলি যোগাযোগ সচিব, হুমকীর মুখে হাজার...

হাইকোর্টের রায় মানছেন না ডাক ও টেলি যোগাযোগ সচিব, হুমকীর মুখে হাজার কোটির টাকার প্রকল্প

56

স্টাফ রিপোটার: হাইকোর্টেও রায় পেয়েও চেয়ারে বসতে পারছেন না বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। নিজের আধিপত্য বিস্তার ও নিজের লোকদের নিয়ে প্রকল্প পরিচালনা করতে হাইকোর্টের রায়ও মানছেন না ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান। এই কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিটিসিএল এর কর্মকর্তাকে অফিস করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই কর্মকর্তাকে বিটিসিএল কম্পাউন্ডে ঢুকতে নিষেধও করেছেন এই সচিব। বিটিসিএল এরিয়ার প্রবেশ করলেই জীবনাশের হুমকী রয়েছে।
জানা গেছে, ডিজিটাল যুগে ডাটার চাহিদা মেটাতে ইকো সিস্টেম দাঁড় করাতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫জির উপযোগী অবকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে ১ হাজার ৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
বিটিসিএল জানুয়ারি ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে সমগ্র দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এখনও ভেন্ডর নিয়োগ দিতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রকল্পের শুরুতেই ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেরা লাভবানের উদ্দেশ্যে কমদামী ইকুইপমেন্ট ক্রয়সহ কারিগরী বিনির্দেশ সঠিকভাবে প্রস্তুত না করায় এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে যাচ্ছে এবং বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ট্রান্সমিশন নেরওয়ার্ক স্থাপন করা হবে তাই কাজের ব্যাপকতা বিবেচনায় কাজের মান রক্ষার্থে সার্ভে, ডিজাইন, সুপারভিশন ও মনিটরিং কাজের জন্য ডিপিপিতে পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ৫ জন অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমেই প্রকল্পের নেটওয়ার্ক এর জন্য সার্ভে, নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার, কারিগরি বিনির্দেশ প্রস্তুত সহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক তা মানেননি।
আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রকল্প নেওয়া হয়। সেখানে ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের লক্ষ্যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার দূর্নীতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জড়িত। সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত ১৭ অক্টোবর সিপিটিইউ এর রিভিউ প্যানেল এর রায় এবং বিটিসিএলের ২১৫তম পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্তের অনুযায়ী ‘ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ প্রকল্প পরিচালক ও বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানে মোঃ আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিপিটিইউ এর রিভিউ প্যানেলও কারিগরি বিনির্দেশ নিয়ে কথা না বলে একটি একপক্ষীয় রায় দিয়েছেন অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্টে জনস্বার্থে রীট পিটিশন দায়ের করেন এডভোকেট সেলিম আশরাফ চৌধুরী। রীট এর পক্ষে শুনানী করেন সিনিয়র এডভোকেট মন্জুরুল হক ও ব্যারিষ্টার হারুনুর রশীদ।
হাইকোর্ট সিপিটিইউ এর রায় স্থগিত করেন এবং কেন উক্ত প্রকল্পের ইকুইপমেন্ট এর স্পেক্ট পরিবর্তন করে কাজটি পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে না; তা জানতে চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে রুল ইস্যু করেন। পরবর্তীতে ২৫ অক্টোবর বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরীও সিপিটিইউ এর রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট দায়ের করেন। সেই রিটেও হাইকোর্ট সিপিটিইউ এক রায় স্থগিত করেন। হাইকোর্টের উক্ত রায় পাওয়ার পর ২৬ অক্টোবর উল্লিখিত দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব খোলার নির্ধারিত তারিখ থাকলেও তা বাতিল করা হয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উল্টো আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে বিটিসিএল কমপাউন্ডে ঢুকতে নিষেধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামানকে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিসিএল এর সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বুয়েট কর্তৃক বিটিসিএলে প্রদত্ত গত ২১ সালের ৯ অক্টোবর রিপোর্টের ৪র্থ পাতায় ২০২১ সাল পর্যন্ত বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি ৭৭০ জিবিপিএস। তখন বিটিসিএল যে ডিডাব্লিউডিএম ক্রয় করে তা ছিল সিই ব্যান্ডের ও তা কেনা হয় ২০১৫ সালে এবং বিবেচনায় ছিল থ্রী জি। আবার বুয়েট এর একই রিপোর্টে আছে ২০৩০ সালে বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি লাগবে ৫৩৭০ জিবিপিএস এর। যদিও বিটিআরসির গত ১ আগস্ট ২০২২ তারিখের প্রক্ষেপণ পত্র মোতাবেক বিটিসিএল এর ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি লাগবে ৯০০০ জিবিপিএস এর। আর বর্তমানে বিবেচনায় নিতে হবে ৫জি। তাহলে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করে CE++ বা Super CE এবং আমাদের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির কারণে ও বর্তমান ইকুইপমেন্ট C ব্যান্ড এর সে ক্যাপাসিটি সার্ভিস না দেওয়ার কারণেই নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা যদি পুনরায় আবার একই ব্যান্ডের ইকুইপমেন্ট ক্রয় করলে এখানে রাষ্ট্রের টাকার অপচয় হবে এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে নিম্নমানের পুরানো প্রযুক্তি দিয়ে ২০৩০ সালে দেশের ৫জি অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর তখন দেশের সামাজিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সারাদেশ তো দূরের কথা; ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানেও ২০৩০ সালে এইসব পুরানো প্রযুক্তি দিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে না।