Home রাজনীতি হঠাৎ করে আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন

হঠাৎ করে আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন

22

ডেস্ক রিপোর্ট: হঠাৎ করে সর্বত্র আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নাকি এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ জাতীয় নির্বাচন হবে—তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের যে কোনো সময় জাতীয় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সিইসি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আবার সংবিধানে ঐ সময়ের আগেও ভোট হতে পারে তার প্রভিশন রয়েছে। সংবিধান সামনে রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগে ভোট হলেও যেন প্রস্তুত থাকি। এরপরই আগাম নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় আগাম নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কেননা এখনো নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্তকরণ এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজ বাকি। এগুলো ছাড়া কীভাবে আগাম নির্বাচন সম্ভব তা জানি না। আগাম নির্বাচনের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
সচিব বলেন, কাল হোক আর পরশু হোক সবসময় আমাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখতে হয়। সভায় সিইসি মহোদয় সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি থাকতে হবে। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখা যাবে না।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর নতুন গঠিত আইনসভার প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩ (৩) (ক) অনুযায়ী মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আলোচনা আছে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। তপশিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরে তৃতীয় সপ্তাহে। সংবিধানে আগাম নির্বাচনের বিধানও আছে। তবে সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ কোনো কারণে যে দিন সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে, তার পরবর্তী ৯০ দিন নির্বাচন আয়োজনের সময় পাবে ইসি। অতত্রব প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ৯০ দিনের সময় পায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। যেহেতু সংবিধানে নির্বাচন আয়োজনের দুইটি বিধান আছে, সেই অনুযায়ী কর্মকর্তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন সিইসি। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, যদি কোনো কারণে জুন অথবা জুলাই মাসে সংসদ ভাঙা হয় সে ক্ষেত্রে আগামী আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আগাম নির্বাচন দিতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য উপদেশ দেবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশক্রমে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বহাল রাখতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী।
ইসির সূত্রমতে, গত বৃহস্পতিবার ছিল মাসিক সমন্বয় সভা। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। হঠাৎ প্রথাভেঙে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার নিজেদের আগ্রহ থেকেই অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নিয়ে সিইসি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেন। সিইসি বলেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে নির্বাচনি সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হয়ে থাকে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেন। সভায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা আধুনিকায়নের নির্দেশনা দেয় কমিশন। সভায় ইসির মাঠপর্যায়ের ১০টি অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্মকর্তা, ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের সভায় সিইসি এবং চার নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিত হওয়ার ঘটনায় তারা অবাক হন। একইসঙ্গে সভায় উপস্থিত হয়ে সিইসি দ্রুত সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা বলেন। সংবিধানে দুইভাবে নির্বাচন আয়োজনের কথা তুলে ধরায় কর্মকর্তারা আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত পান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজনেতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। বিএনপির আন্দোলন বা নির্বাচনে অপ্রস্তত রেখে নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন দেওয়ার চিন্তা থাকতে পারে। তবে সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

ইসির বৈঠক শেষে সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সচিবলায়কে নির্দেশনা দিয়েছে। ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক করেন। নির্বাচনের টপ টু বটম, যেমন মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সব বিষয়ের ওপর তারা রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের বলেছেন, কোন কোন বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি।
ইত্তেফাক