Home রাজনীতি সরগরম ইফতার রাজনীতি

সরগরম ইফতার রাজনীতি

44

ডেস্ক রিপোর্ট: করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড একপ্রকার বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ কেটে যাওয়ায় দেশে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতারা সক্রিয় হয়েছেন। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে ইফতার রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠেছে। আওয়ামী লীগ এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং বিএনপি নেতাদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা ইফতার ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনাসভা করছেন। ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে উঠতি নেতারাই এগিয়ে আছেন

চট্টগ্রামে মনোনয়ন পেতে সরব আ.লীগ এমপিরা

শহীদুল্লা শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইফতার আয়োজনসহ নানা কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের এমপিরা সরব হয়ে ওঠেছেন। পুনরায় মনোনয়ন পেতে বর্তমান এমপিরা ইফতার ও ঈদবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের অন্তত ১০টিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর হয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী ও ঈদবস্ত্র বিতরণের মধ্যদিয়ে তারা জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এমন তৎপরতায় কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য কোনো কোনো আসনে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে গিয়ে মনোনয়ন চাওয়া বা মাঠে নামার সাহস করছেন না কেউ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি অন্তত দেড় বছর। এ নির্বাচন অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে কঠিন হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ অবস্থায় দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই বিচার-বিবেচনা করা হবে। এমপিরা এলাকার কী উন্নয়ন করেছেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের তারা কতটুকু মূল্যায়ন করেছেন, অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী, ইয়াবা ব্যবসায়ী, দখলবাজ, ভূমিদস্যুদের কারা প্রশ্রয় দিয়েছেন এলাকায় কারা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে ‘এমপি লীগ’ কায়েম করেছেন-এমন সব বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিকূল সময়ে কারা এলাকায় কাজ করেছেন, জনগণের পাশে কারা ছিলেন-এমন নেতাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি রয়েছেন। বাকি দুটির একটিতে রয়েছেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং অপরটিতে রয়েছেন শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। চট্টগ্রামের আসনগুলো হলো-পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, চান্দগাঁও-বোয়ালখালী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া। চট্টগ্রাম নগরীর আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে-কোতোয়ালি, বন্দর-পতেঙ্গা ও ডবলমুরিং।

পটিয়ার বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী পরপর তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদে হুইপ হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ বছরে তিনি পটিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। রমজান মাসজুড়ে দলীয় ও সহযোগী সাংগঠনের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন নিজ নির্বাচনি এলাকার কোনো না কোনো স্থানে তিনি ইফতারের আয়োজন করছেন। কোনো কোনো ইফতারে তিনি সশরীরে উপস্থিত হন। ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী ও ঈদবস্ত্র বিতরণ করছেন তিনি। এদিকে, এ আসন (পটিয়া) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির, আওয়ামী যুব লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম। এরমধ্যে বদিউল আলম নানা সামাজিক সংগঠন ও দলীয় ব্যানারে ইফতারের আয়োজন করছেন। কোথাও কোথাও তার অনুসারীরা বাধার শিকার হচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। উপজেলা যুবলীগের সাবেক নেতা জমির উদ্দিনসহ তিন যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও এর অংশ বলে দাবি করেছেন তিনি। ইফতারের দাওয়াত দিতে গিয়ে ফেরার পথে তারা দলীয় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ।

বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সরকারি বরাদ্দের বাইরে এলাকার মানুষের জন্য তিনি তেমন কিছু করছেন না বলে অভিযোগ আছে। তবে দলীয় ও সংগঠনের ব্যানারে ইফতার আয়োজনে তিনি সরব রয়েছেন। পাশাপাশি গত নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান সিআইপি এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। রমজান মাসে তিনি আরও সক্রিয় হয়েছেন। অসহায় দরিদ্রদের মাঝে তিনি চাল-ডাল তেল চিনিসহ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার অসহায় দুস্থদের মাঝে তিনি ঈদবস্ত্র বিতরণ করছেন। উপজেলার সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মধ্যেও তিনি ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সাকিব বলেন, বাঁশখালীতে ‘এমপি লীগ’ কায়েম হয়েছে। তৃণমূল নেতারা এখানে কোণঠাসা।

চন্দনাইশের পরপর দুবার নির্বাচিত এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী দলীয় ও সাংগঠনিকভাবে ইফতার আয়োজনে বেশ সরব হয়েছেন। এছাড়া সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ চন্দনাইশে সরব হয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী আসিফ সংসদীয় এলাকায় দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

মিরসরাইয়ে বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বার্ধক্যের কারণে নির্বাচন করবেন না। এ আসনে তার ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল মনোনয়ন প্রত্যাশী। এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড ও ইফতার আয়োজন নিয়ে রুহেল পুরোদমে সক্রিয় রয়েছেন। সীতাকুন্ডে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন দিদারুল আলম। এমপি দিদারুল আলম এলাকার দুস্থ অসহায়দের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও ঈদবস্ত্র বিতরণ করছেন। নগরীর পাঁচতারকা হোটেলে ইফতার করিয়েছেন সীতাকুন্ডের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক থেকে শুরু করে অসহায় মানুষকে। এ আসনে সাবেক এমপি আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে সীতাকুন্ড উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আল মামুন মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় ব্যানারে তিনি ইফতার আয়োজনসহ নানা আয়োজনে বেশ সরব হয়ে ওঠেছেন। সন্দ্বীপে বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। তার পাশাপাশি এলাকায় ইফতার আয়োজন ও ঈদ সামগ্রী বিতরণে সরব রয়েছেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

চট্টগ্রাম নগরীর চারটি সংসদীয় আসনের এমপিরাও ইফতার আয়োজন ও ইফতার সামগ্রী বিতরণে সক্রিয় রয়েছেন। কোতোয়ালি আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি দলীয় ও নানা সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে ইফতার আয়োজন করছেন। কোনো কোনোটিতে তিনি উপস্থিত থাকেন। তার বাবার নামে গড়া এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের ব্যানারে শুধু নিজ নির্বাচনি এলাকায় নয়; পুরো মহানগরীর অসহায়-দুস্থ হতদরিদ্র ও বস্তিবাসীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হচ্ছে।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এমএ লতিফ মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন, ঈদবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে সরব আছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দলীয় ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ইফতার আয়োজনে সক্রিয় রয়েছেন। অসহায় দুস্থ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি ঈদবস্ত্র বিতরণ করছেন। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন না। তবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছেন। দল চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া আনোয়ারা আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রাঙ্গুনিয়া আসনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রাউজান আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ইফতার আয়োজনে সরব রয়েছেন। দলীয় ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তারা ঈদবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব আসনে দলের অন্য কোনো নেতা আলাদা কোনো কর্মসূচিতে সরব নেই বললেই চলে।

রাজশাহীতে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন নেতারা

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কেটে যাওয়ায় রাজশাহীতে সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আবার শুরু হয়েছে। এখন ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। ইফতার ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় ও আলোচনা করছেন। আগামী বছরের মাঝামাঝি রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই এসব আয়োজন করা হচ্ছে। মূলত ইফতার অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মঞ্চ। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ইফতার আয়োজনেও সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, এ বছর রোজার প্রথম দিন থেকে পথচারী ও এলাকাবাসীর মাঝে ইফতার বিতরণ করছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ইফতারের আগে আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানও করছেন। ডাবলু সরকার বলেন, আমরা সারা বছর মানুষের জন্য কাজ করি। রোজার মাসেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা থেকে প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করছি। ইফতারের আগে নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছি। এতে এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা বাড়ছে। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ডাবলু সরকার একজন প্রার্থী। অনেক আগে থেকে তিনি গণসংযোগ করছেন। রোজার মাসে একেকদিন একেক এলাকায় গিয়ে তিনি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।

১১ এপ্রিল রাজশাহী জেলা পুলিশের ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর সব আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। পরদিন রাজশাহী মহানগর পুলিশের ইফতার অনুষ্ঠানেও জেলার সব এমপি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সব অনুষ্ঠানে তারা পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন। এ সব অনুষ্ঠানেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন।

২১ এপ্রিল মোহনপুরে জমকালো ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এতে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দিন অংশ নেন। ইফতার পূর্ব আলোচনা সভায় নেতারা আগামী সব নির্বাচনে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের জোরালো আহ্বান জানান। পরদিন নগরীতে আলোচনা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। প্রতিদিনই প্রতিটি উপজেলার কোথাও না কোথাও ইফতারের আয়োজন করছেন রাজনৈতিক নেতারা। এতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকছেন। ইফতার অনুষ্ঠান হলেও এসব আয়োজন রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় রূপ নিচ্ছে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার বড় পরিসরে বসার সুযোগ হয়নি। তাই এবার ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে খোলামেলা কথা বলা ও মতবিনিময়ের সুযোগ হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মঞ্চ হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান হলেও ইফতার অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির নেতারাও ইফতারের আয়োজন করছেন। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ১৫ এপ্রিল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু রাজশাহীতে নগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরদিন তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিএনপি নেতা দুলু বলেন, ইফতারের মতো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াও কথা বলার সুযোগ হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এর মধ্যদিয়ে উজ্জীবিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, রোজার মাসই তিনি রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দলীয়ভাবে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে যাবেন।

নওগাঁর নিজ নির্বাচনি এলাকা নিয়ামতপুরে ইফতার আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। বৃহস্পতিবার শ্রীমন্তপুর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ ইফতারের আয়োজন করে। ইফতারের আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়ার বিকল্প নেই। জনগণকে এটাই বোঝাতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও দলীয় ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। শিমুল বলেন, চিকিৎসক হিসাবে আমি সারা বছরই নির্বাচনি এলাকায় থাকি। এখন করোনামুক্ত পরিবেশে আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে থাকছি। ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে।

দক্ষিণে পিছিয়ে বড় দুই দলের প্রভাবশালীরা

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

রমজানের ২১ দিন পার হয়ে গেলেও ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতি এখনো খুব একটা জমেনি বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে। এখনো এলাকায় আসেননি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রী। বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদেরও নেই তেমন আনাগোনা। ২৫ কিংবা ২৬ রোজার দিকে এলাকায় আসার কথা বলছেন সবাই। এমপি, মন্ত্রী আর প্রভাবশালীরা পিছিয়ে থাকলেও ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে এগিয়ে আছেন রাজনৈতিক দলগুলোর উঠতি নেতারা। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে থাকা নেতাদের ব্যাপক তৎপরতা প্রায় সব নির্বাচনি এলাকায়। বরাবরের মতো এবারও ঈদে এলাকায় থাকছেন না প্রধান দুই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জাতীয় নেতারা। তবে ঈদের আগে এসে নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে যাবেন তারা।

চিকিৎসার প্রয়োজনে বর্তমানে থাইল্যান্ডে আছেন ভোলা সদর আসনের এমপি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ। সুস্থ হয়ে উঠলে ঈদের আগেই দেশে ফিরে নির্বাচনি এলাকায় আসবেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠরা। দেশে ফিরলে ঈদে করবেন ঢাকায়। টানা দেড় মাস নির্বাচনি এলাকা বরিশালের গৌরনদীতে থাকার পর ৩ দিন আগে ঢাকায় গেছেন বরিশাল-১ আসনের এমপি-মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এলাকায় থাকাবস্থায় একাধিক ইফতার মাহফিল করাসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে করে গেছেন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়। ঈদে তার ঢাকায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বুধবার নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠীতে এসেছেন আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু। ৫-৬ দিন এলাকায় থাকবেন তিনি। ঈদ করবেন ঢাকায়। জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও আছেন তার নির্বাচনি এলাকা পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায়। এখনো এলাকায় আসেননি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী পিরোজপুর সদর আসনের এমপি অ্যাড. রেজাউল করিম। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী ২৫ এপ্রিল এলাকায় এসে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত থাকার কর্মসূচি রয়েছে তার। ঈদ করবেন ঢাকায়। এলাকায় নিয়মিত আসা-যাওয়া থাকলেও ইফতার বা ঈদকেন্দ্রিক কোনো কর্মকাণ্ডে এখন পর্যন্ত উপস্থিতি মেলেনি বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের। ঈদে এলাকায় নাকি ঢাকায় থাকবেন তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার নির্বাচনি এলাকায় এসেছেন ঝালকাঠী-১ আসনের এমপি বিএইচ হারুন। ২-৩ দিন এলাকায় থাকলেও ঈদে থাকবেন ঢাকায়। টানা ৭-৮ দিন এলাকায় থেকে ইফতার মাহফিলে যোগদান এবং আগাম ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছেন সাবেক উপমন্ত্রী ভোলা-৪ আসনের এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। বরিশালেই আছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ইফতার ও ঈদকেন্দ্রিক নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত।

দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার ছাড়া বিএনপির সাবেক মন্ত্রী এমপি এবং প্রভাবশালীদের প্রায় কেউই এখন পর্যন্ত আসেননি নির্বাচনি এলাকায়। বছরের পর বছর নির্বাচনি এলাকা ভোলার লালমোহন-তজুমদ্দিনে আসেন না সাবেক মন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ। কুরবানিতেও তাকে কাছে পাননা দলের সমর্থকসহ নেতাকর্মীরা। একই অবস্থা ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলমের। দলের অন্য দুই ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং শাহজাহান ওমরও খুব একটা আসেন না এলাকায়। এবারের রোজায় এখন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় আসেননি তারা। থাকেন না ঈদেও। এলাকায় আসেননি বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুদ্দিন স্বপন, সাবেক এমপি শহিদুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আইনজীবী নেতা অ্যাড. জয়নাল আবেদিন, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ এবং প্রভাবশালী বিএনপি নেতা সরফুদ্দিন সান্টু। এক কথায় বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে হাতেগোনা ২-১ জন বাদে প্রায় কারোরই সশরীরে বিচরণ নেই তাদের নির্বাচনি এলাকায়। রোজা কিংবা ঈদ নয়, বছরের পর বছর ধরেই চলছে এমন পরিস্থিতি।

ইফতার এবং ঈদকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রশ্নে মন্ত্রী, এমপিসহ প্রভাবশালীরা পিছিয়ে থাকলেও শূন্যতার সেই জায়গাটি পূরণ করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। সব সময়ই রোজার শেষ ১০ দিন সৌদি থাকেন বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। ঈদ আনন্দে এমপি রিমনের এ অনুপস্থিতির শূন্যতা পূরণ করেন সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুভাষ হালদার ও আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক এমপি আব্দুস সবুর টুলুর কন্যা ফারজানা সবুর। বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ইফতারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ঈদে দরিদ্র মানুষকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন সুভাষ। একইভাবে মঠবাড়িয়ার ১১ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার পাশাপাশি ভাণ্ডারিয়ার ৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা এবং ইন্দুরকানী ও কাউখালিতে ইফতারের আয়োজন করেছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। এখন পর্যন্ত ইফতারকেন্দ্রিক কোনো আয়োজন করেননি বরগুনা সদর আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তবে এলাকায় নানা আয়োজনে মাহে রমজান আর ঈদকেন্দ্রিক সহায়তা করছেন সেখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান শিহাব। এবার ঈদে শাড়ি, লুঙ্গি না দিয়ে অন্তত ৫শ পরিবারকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। একইভাবে মাঠে আছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার টুকু। ঝালকাঠী-১ আসনে করোনার ২ বছর দফায় দফায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির। এবার ঈদে সেই সব পরিবারকে ঈদ সহায়তা দিচ্ছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতি আর ঈদ সহায়তা নিয়ে আছেন মাঠে। বরিশাল-১ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ঝালকাঠী-২-এ আরেক সহসাংগঠনিক মাহবুবুল আলম নান্নু, পটুয়াখালী সদর আসনে স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও মঠবাড়িয়ায় রুহুল আমিন দুলালসহ প্রায় প্রতিটি নির্বাচনি এলাকাতেই দলের সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতাদের অনুপস্থিতির অভাব পূরণ করে চলেছেন মনোয়নয়নপ্রত্যাশীরা। বরিশাল মহানগর এবং জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসীন হওয়া নয়া নেতারাও করে চলেছেন একের পর এক ইফতার মাহফিল আর ঈদকেন্দ্রিক নানা আয়োজন। সবমিলিয়ে করোনার ২ বছর থেমে থাকা রাজনীতির মাঠ আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে।

বরিশাল অঞ্চলে থাকা জাতীয় পার্টির ৩ এমপির মধ্যে শুধু বরিশাল-৩ আসনের গোলাম কিবরিয়া টিপু এখন পর্যন্ত এসেছেন এলাকায়। গত ১৫-১৬ এপ্রিল বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর দুটি ইফতার মাহফিলে যোগ দেন তিনি। এখন পর্যন্ত এলাকায় আসেননি বরিশাল-৬ আসনের এমপি দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাসরিন জাহান রত্না আমিন। একই অবস্থা পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি রুস্তুম আলী ফরাজীর। তবে মান রাখছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব বরিশাল নগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস। বরিশালে ৩-৪ হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি বিভাগের বিভিন্ন জেলা সফর করে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতি জমিয়ে রেখেছেন তিনি। এসব কর্মসূচিতে প্রধান মেহমান হিসাবে যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব আহম্মেদ সোহেল রানা এমপি। তবে ঈদের আগে এমপি রত্না আমিন এলাকায় আসবেন বলে জানিয়েছেন তার নির্বাচনি এলাকা বাকেরগঞ্জ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।

খুলনায় বিএনপিতে গ্রুপিং, আ.লীগের এমপিরা মাঠে

খুলনা ব্যুরো

ইফতার আয়োজন ঘিরে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে আওয়ামী লীগের নেতারা একসঙ্গে বড় বড় ইফতারের আয়োজন করছেন। অপরদিকে বিএনপির নেতারা পৃথক ইফতার আয়োজন করায় দলটির মধ্যে গ্রুপিংয়ের প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ইফতার আয়োজনে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিও। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিনই থানা ও ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার আয়োজনে নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন।

১৪ এপ্রিল খুলনা ক্লাবে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ইফতারের আয়োজন করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ নগর ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইফতারের আগে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। অবশ্য একই দিন খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা ইফতারের আয়োজন করেন। হোটেল টাইগার গার্ডেনে সাবেক বিএনপির নেতাদের ব্যানারে আয়োজিত ইফতারে মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন না। একই দিনে পৃথকভাবে ইফতারের আয়োজন করাটাকে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল মনে করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। ২০ এপ্রিল খুলনা ক্লাবে জেলা বিএনপির ইফতার আয়োজনে আধিপত্য বিস্তার ও চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নাদিমুজ্জামান জনিসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ২১ এপ্রিল নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা ইফতারের আয়োজন করেন।

এ ব্যাপারে নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন যুগান্তরকে বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে একটি পক্ষ একইদিন ইফতারের আয়োজন করেছে। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যারা এ ধরনের অনুষ্ঠান করেন তারা দলের শুভাকাক্সক্ষী নন। তিনি আরও বলেন, মহানগর কমিটির অনুমতি ছাড়া ইফতারের আয়োজন করা নিষিদ্ধ। সেখানে সাবেক নেতাদের ব্যানারে যারা এসব আয়োজন করছেন তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী জানান, ইফতার আয়োজনে যুবদলের নেতাদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনায় নগর ও জেলা পর্যায়ে বিএনপি ইফতারের আয়োজন করলেও আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যক্তিপর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করছেন। ১৭ এপ্রিল সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে খুলনা-২ আসনের এমপি সেখ জুয়েল ইফতারের আয়োজন করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সুধীজনদের নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ইফতারের আয়োজন করেন। নিজ আসনের থানা ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনের ইফতার আয়োজনে খুলনা-৩ আসনের এমপি মন্নুজান সুফিয়ান নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। ২০ এপ্রিল খুলনা-৬ আসনের এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু নিজ আসন কয়রা-পাইকগাছা এলাকার মানুষের সম্মানে খুলনায় ইফতারের আয়োজন করেন। ২৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিজ আসনের নেতাদের নিয়ে খুলনা-৪ আসনের এমপি সালাম মুর্শেদী ইফতার করেন। এছাড়া খুলনা-১ এবং খুলনা-৫ আসনের এমপিরা নিজ নির্বাচনি এলাকায় উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করছেন।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ জানান, জেলার নেতাকর্মীরা শত কিলোমিটার দূর থেকে খুলনায় এসে ইফতারে উপস্থিত হওয়াটা কষ্টকর। এমপিদের ২/৩টি করে থানা। তাদের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ইফতার আয়োজন এখন সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দল গোছানোর কাজ করছেন। আওয়ামী লীগও থানা, ওয়ার্ড ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনুষ্ঠান করছে।-যুগান্তর