Home সারাদেশ ঘোড়া চড়িয়া সে করিল ভিক্ষা ।

ঘোড়া চড়িয়া সে করিল ভিক্ষা

23

নুসরাত জাহান ভোলা থেকে।
ঠিক সেরকম না হলেও- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষা করিতে চলিল-’ এ কথারই বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ভোলার বোরহানউদ্দিনের চরগঙ্গাপুর গ্রামের জালু মিয়া (৫৫)।

ভিক্ষুক জালু মিয়া প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করেন ৷ বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না বলে তাকে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে হয়। ৪ বছর আগে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার ঘোড়াটি কিনেন ৷ সেই ঘোড়ায় চড়েই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার আয় হয় ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো। এতে ঘোড়ার খাবার কিনার পর কোন রকম চলছে তার মানবেতর সংসার জীবন ।
সে সাচড়া ইউনিয়নের দরুন গ্রামের মৃত আঃ মতলেব এর ছেলে ৷ তার ৪ ভাই ও ১ বোন ৷ এক সময় সে ওই গ্রামের পৌত্রিক বাড়ীতে থাকতো ৷ কিন্তু কোনো জায়গা জমি না থাকায় একই ইউনিয়নের পাশের চর গঙ্গাপুর গ্রামে বোনের বাড়ীতে চলে আসেন ৷ সেখানে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন আর নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি করেন ঝুপড়ি ঘর ৷ বৃষ্টি হলে সারা ঘর দিয়ে পানি পড়ে ৷ রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই থাকেন ৷

জালু মিয়া জানান, অনেক আগে আমি বিয়ে করি ওই ঘরে একটা ছেলে ছিল ৷ কিছু দিন পর তার মা মারা যায় ৷ এর কয়েকদিন পর সেই ছেলেটিও মারা যায় ৷ পরে দ্বিতীয় বিয়ে করি ৷ সেই ঘরে কোনো সন্তান নাই ৷ তাই আমি আর স্ত্রী ভিক্ষা করে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি ৷ আমার কোনো জায়গা জমি নেই ৷ পরিবারেও সচ্ছল কেউ নাই ৷ তাই পাশের গ্রামে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি ৷ বৃষ্টি আসলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে ৷ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি ৷ ঘোড়াটাই আমার সম্বল । ঘোড়াটা আছে বলেই ঘরে চুলা জ্বলে।’
তিনি আরো জানান, আগে মানুষের কাজ করে খেতাম ৷ এই বয়সে এখন কেউ কাজ দেয় না ৷ তাছাড়া কাজ করার ক্ষমতাও তার শরীরে নেই। কোন সহায় সম্ভলও নেই ৷ তাই বাধ্য হয়েই এ পেশাতে আসতে হয়েছে আমার। শেষ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে থাকার জন্য তাকে যেন একটি সরকারি ঘর দেয়া হয় এমন দাবি করছেন তিনি ৷
তার প্রতিবেশী কালাম খাঁন, আমির হোসেন ও শাহানুর বেগম জানান, তাদের কোন জায়গা জমি ও সন্তান নাই ৷ সে তার স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় এখানে বাস করছেন ৷ তাই ভিক্ষা করেই ক্ষেতে হয় তাদের ৷ তারা যে ঘরে বসবাস করেন সেটা কোন মানুষ বসবাস করার মতো জায়গা না ৷
সাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মৃধা জানান, সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি তাকে সহযোগীতা করি ৷ সে যাতে একটি সরকারি ঘর পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।