Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি পাঁচ বছরে চিনিকলে লোকসান ৪৩৫২ কোটি টাকা

পাঁচ বছরে চিনিকলে লোকসান ৪৩৫২ কোটি টাকা

45

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি খাতের চিনিকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ১৪টিই লোকসান গুনছে। লোকসানের শীর্ষে রয়েছে শ্যামপুর সুগার মিলস। লোকসানের দায়ে ইতোমধ্যে ছয়টি চিনিকলের উত্পাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনে থাকা চিনিকলগুলোকে লাভের মুখ দেখানো যায়নি। একটি কোম্পানি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লাভ করলেও সেটি অন্যান্য পণ্য উত্পাদন বাবদ লাভ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে অদক্ষতা, মাথাভারী প্রশাসন বড় সমস্যা। দুর্নীতি তো রয়েছেই। হালআমলে কাঁচামালের সংকট প্রকট হয়েছে। সবমিলিয়ে চিনিকলগুলো সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারখানার কাছে ব্যাংকের পাওনাও রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের সামর্থ্যও নেই সংস্থাটির—এমনই বলেছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

রাষ্ট্রায়ত্ত এসব চিনিকলে উত্পাদিত পণ্যের বিক্রিমূল্য থেকে উত্পাদন ব্যয় অনেক বেশি। যদিও কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ অর্থ পরিশোধ করছে। কিন্তু বেসরকারি চিনিকলগুলো যদি লাভে থাকে, তাহলে সরকারি কারখানাগুলো কেন লোকসানে থাকবে? এমন প্রশ্নও সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র মতে, পদায়ন, নিয়োগ, শীর্ষ নির্বাহী পছন্দে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি থাকায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নেই চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থায়। ফলে, চিনিকলগুলোর ওপরও যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। যে কারণে দিনের পর দিন লোকসান গুনছে চিনিকলগুলো। এ অবস্থায় ২০২০ সাল থেকে ছয়টি চিনিকলের উত্পাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।

কাঁচামাল সংকটে উত্পাদনে না থাকলেও সারা বছর ধরেই ভতু‌র্কি দিয়েই চালাতে হচ্ছে চিনিকলগুলো। শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া ছাড়াও এ এখাতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পাওনা রয়েছে।

চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীন চিনিকলগুলো হচ্ছে—পঞ্চগড় সুগার মিল, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল. শ্যামপুর সুগার মিল, জয়পুরহাট, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস, পাবনা সুগার মিল, মোবারকগঞ্জ সুগার মিল, ফরিদপুর সুগার মিল, রাজশাহী সুগার মিল, নাটোর সুগার মিল, কুষ্টিয়া সুগার মিল, ঝিলবাংলা, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।

এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থার সুযোগে বেসরকারি চিনি কোম্পানিগুলো মজুত ও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রায়শই তারা দেশে চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়। আমদানিকৃত চিনি দেশের বাজারে আসার আগেই চিনির দাম বেড়ে যায়। এর মূল কারণ, সরকারি খাত পিছিয়ে পড়ায় সুযোগটি নিচ্ছে বেসরকারি চিনিকলগুলো।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ও টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে চিনির মোট চাহিদা ১৫-১৭ লাখ টন। মোট চাহিদার ১ থেকে দেড় লাখ টন চিনির জোগান আসে সরকারি চিনিকলগুলো থেকে।

এছাড়া টিসিবির মাধ্যমেও কখনো কখনো সরকার চিনি আমদানি করে থাকে। তবে সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরকারিভাবে চিনির যোগান ১০ শতাংশেরও কম।-ইত্তেফাক