স্টাফ রিপোটার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার ভোট চোরের চেয়ে বড় হলো , এরা সংবিধান চোর। এদের কোন ক্ষমা নাই।
সোমবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুবদল আয়োজিত এক বিশাল যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সোমবার দুপুর আড়াইটায় এ সমাবেশ শুরু হলেও বেলা ১০টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা দলীয় চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১টার মধ্যেই কাকরাইল, নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল মোড়ের রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য চলাকালে নেতাকর্মীরা ‘হটাও হাসিনা বাঁচাও দেশ, টেকব্যাক বাংলাদেশ’, টেকব্যাক বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি টিম এসেছিল। এই দলটি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দল নয়, এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি টিম। তারা এসেছিল, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কি না, এটা যাচাই এবং বাংলাদশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে বড় কোন টিম পাঠাবে কি না, এই হলো তাঁদের উদ্দেশ্য। তাঁরা বাংলাদেশের সকল নির্বাচনী স্টেক হোল্ডাদের সাথে কথা বলেছে, সাংবাদিক, রাজনীতিক দল, সুশীল সমাজ, সরকার সবার সাথে আলোচনা করেছে। তারা ৫ টি সুপাংশু দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সংলাপের কথা।
সরকারকে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সরকারে বসে আছেন, সেটি সাংবিধানিকভাবে বৈধ, এটা প্রমাণ করতে হবে। আমি প্রমাণ করেছি আপনারা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।
আজকের সমাবেশকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সমাবেশ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে, নিঃসন্দেহ অনেক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য এখন, জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বুকের ওপর যে জগদ্দল পাথর চেপে আছে, তাদেরকে সরাতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্লোগানে ভোট চোর চোর বলিনা? এরা ভোট চোরের চেয়ে বড় হলো , এরা সংবিধান চোর। এদের কোন ক্ষমা নাই।
ফখরুল বলেন, প্রশাসনের সদস্যদের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও জোর করে তাদেরকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য করছে সরকার। আর যে সকল বিচারকেরা মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছেন তাদেরকেও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, কথা একটাই আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি।অনেক মা সন্তান হারিয়েছে। আর পিছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ঘরে ফিরলে কোন যুবক চাকরি পাবেন না, এমন কি শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে যত যুবক, এতো যুবক আমাদের সময় ছিল না। সেই যুবকদের নিয়ে আমরা স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছিলাম।
যুবদলের তো এখন অনেক সংগঠিত, তোমরা কেন এই সরকারকে নাড়া দিতে পারছি না, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আন্দোলন কিন্তু অল্প দিনের মধ্যে শুরু হবে। তোমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এ দেশে চোরে জামিন মিললেও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিচ্ছে এই সরকার।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় পায়, সেজন্য ৪৩ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এই ৪৩ লাখ নেতাকর্মী যদি ঢাকায় আসে কিসের আইন, বিচার, কিছু টিকতে পারবে না আর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যখন পর্যন্ত এই সরকারের পতন ঘটাতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত সমাবেশ সফল হওয়ায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কোন লাভ নেই।
আমরা জানি, এই সরকার মরণ কামড় দিবে, কিভাবে উল্টা কামড় দেয়া যায় সেই কাজ আমাদের করতে হবে। বিনা কারনে আমরা তাদেরকে ছাড় দিতে পারি না। কোন অন্যায় অত্যাচার, নিপীড়ন করতে সংবিধান বলেনি। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ যে জুলুম করছে সেটা সংবিধান বলেনি।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন হাসান, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল আমিন আকিল আকিল, জাকির হোসেন নান্নু, গোলাম মোস্তফা সাগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হাসান স্বাধীন, সাইদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, যোগাযোগ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মামুন, গবেষণা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।