Home মতামত সমতার মানবিক পৃথিবীর জন্য নারীকে যেভাবেই হোক পথে নামতে হবে

সমতার মানবিক পৃথিবীর জন্য নারীকে যেভাবেই হোক পথে নামতে হবে

220

সুজন বিপ্লব:

শোষণহীন সমাজদর্শনের মানব মুক্তির ধারায় নারীকে তার চিন্তার স্বাধীনতা ব্যতীত নারীর স্বাধীনতা পোষাকি হলে নারীর পোশাকের বিবর্তন বিষয়ক আলাপটা আসলে নারী মুক্তির তাগিদে কাজের আলাপ কতোটা হচ্ছে? আমার স্ত্রীকে বললাম, ঘোমটা-শাঁখা-সিঁদুর-গহণাদি নারীকে শোষণের শিকলে আটকে রেখেছে। প্রত্তুরে ”গৃহকর্মের বাইরে নারীর অবাধ বিচরণ যেখানে স্বীকৃত নয় সেই সমাজের শোষণ চিত্র হিসাবে এখন নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ কোন জরুরি কাজের ভাবনা হতে পারেনা। নারীর প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছিনা” জানিয়েছে। তার ছাত্রজীবন থেকে কাজ, উপার্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার দূর্বার আকাঙ্খা থেকে বে-সরকারি একটি সংস্হায় কাজে নিয়োজিত রয়েছে।আমি তাকে মোটর বাইক চালনা শিখিয়েছি। রাজনীতি-সংস্কৃতির তাত্ত্বিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক পাঠের জানাবোঝার সুযোগ আমাদের রয়েছে। আবার আমার জীবনসঙ্গী বলেই সবকিছু সহজভাবে রপ্ত করতে পেরেছে, এমনটা ভাবলে অবিবেচনাপ্রসূত হবে। সামাজিক সীমাবদ্ধতাকে কৌশলে মাড়িয়ে আমাদেরও চলতে হয়। বুর্জোয়া কালচারের বিরুদ্ধে প্রগতিমুখী লক্ষ্য ধারণে সচেতন বোধ লালন করে চলেছি। এই বাস্তবতা সব নারীর জীবনেও নেই। তো পোশাক-গহণাদির শোভণ ও শালীন ব্যবহার কিরুপ হবে তা প্রচল সমাজ নারীকে চাপিয়ে দিয়েছে।

ঘরে-বাইরে নির্যাতিত নারীর সর্বাঙ্গীন মুক্তির জন্য কোনরূপ সামাজিক বিধি-নিষেধ বাঞ্ছনীয় হতে পারেনা। কেউ ঘোমটা-শাঁখা-সিঁদূর-গহণাদি আবার কেউ হিজাব-বোরকা আর শুধু পর্দার জন্য কঠোর অবস্থান জানান দেয়। প্রচলিত বাস্তবতায় নারীর পরিধেয় নিয়ে আলাপটা জরুরি নয়। অতএব, সে যাতে স্বস্তি পায়, সেটা পরছে, ধর্মান্ধতাকে অস্বীকারের জগতে পূর্বতন পোষাক পরেই আসুক। তারা তো একটা সামাজিকতায় বাধ্য হয়ে শাঁখা-সিঁদূর ও হিজাব-বোরকা পরিধান করছে। এটা আমাদের প্রধান সমস্যা নয়। আসলে চিন্তার পরিবর্তন ঘটলে তখন দৃশ্যপট তো প্রগতিশীল পরিবেশের অনুকূলে চলে যাবে। এখনও শতভাগ নারী বোরকা পরেই হোক, কামিজ পরেই হোক আর শাড়ি পরেই হোক ঘরের বাইরে জীবিকার প্রশ্নে শত প্রতিবন্ধকতায় আসতেও পারছেনা, টেকা তো দূরবর্তী আলাপ। নারীর কর্মক্ষেত্রে কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই কোন নির্ধারিত শ্রমঘন্টা, উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নেই, নারীর সন্তানের নিরাপত্তা নেই, দেহের নিরাপত্তা নেই, শ্রম দিয়েও পরিবারে স্বস্তি নেই তখন এসব বড় সমস্যা না ভেবে মগজে ইউটোপীয় চিন্তন পুষে নারীকে অবরুদ্ধ করতে আমার ভেতরকার পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র অদম্য হয়ে ওঠে। তাই চিন্তার ক্ষেত্রেও যৌক্তিক অনুশীলন চাই।

নারী মুক্তি তথা মানব মুক্তির প্রধান অন্তরায় পুঁজিবাদী সামাজিক ব্যবস্হায় ধর্মকে আলোচনার বাইরে রাখা যাবেনা। তবে ভয়ের ব্যাপার যে, অনুভূতিতে আঘাত হানার মিথ্যা দায়ে রাষ্ট্র আমাদের আলোচনায় খড়গ চালাতে সিদ্ধহস্তে আগুয়ান হয়েছে। বিপরীত আলোচনায় যদিও প্রগতিশীল শিবিরের অনুভূতি কখনও আঘাত পায়নি। অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্তের বিষয় ক্ষমতার রাজনৈতিক কারসাজিতে চালান হয়ে থাকে। বিকল্প আলোচনা দিয়েই আমরা মুক্তি অন্বেষণের পথে থাকি। এই ধর্ম কীভাবে এসেছে? কেন মানুষ শেষ ভরসা ধর্মে পাচ্ছে? কেন মনে করছে সকল অন্যায়ের শেষ বিচার উপরওয়ালাই করবে? গোয়াল, রাখাল ও রাজদরবারের গল্পেভরা অলীক ধর্মকে পুঁজিবাদই ধর্মীয় রাজনীতির রূপ দিয়েছে, ধর্ম নারীকে গৃহলক্ষ্মী করে ঘর পর্যন্ত বিচরণের সীমানা নির্ধারণ দিয়েছে। পিতৃতন্ত্রী তথা পুরুষতান্ত্রিক নারীকে দেখে বা এলিট শ্রেণীর নারীকে দেখিয়ে নারীর অগ্রগতির সূচক ভাবনাতো আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ নারীর উচ্চাসনের আলাপকে মিশিয়ে নারীমুক্তি ভাবলে অপ্রকৃতিস্হ প্রলাপে পরিণতি পাবে। সামাজিক কাঠামো বিন্যাসের উঁচু স্তরের সুবিধাভোগী নারীর অবস্হানের বাইরে সর্বত্র নিগৃহীত নারী সমাজকে অন্তত নারীমুক্তির অন্যতম লিজেন্ড রোকেয়ার পর্দাঘেরা গাড়িতে স্কুলগামী প্রয়াসের মতো নারীকে আপাতত যেভাবেই হোক ঘরে-বাইরে চলাফেরা ও কর্মসংস্থানের গ্যারান্টির ইতিবাচক বিষয়টা এই মুহূর্তে আসলেই প্রধান কাজের আলোচ্য। দীর্ঘ প্রতিক্রিয়াশীলতায় ধেঁয়ে আসা ঘন আঁধার ঘোচাতে সলতের আলোকে পরিপূর্ণ আলোয় রুপান্তরিত করে ছড়িয়ে দিতে সজাগ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই সমতার মানবিক পৃথিবী গড়তে নারীকে যেভাবেই হোক পথে নামতে হবে। এই রাজনীতিটা না জেনে হটকারি আওয়াজ তুললে নারীপ্রগতি ও মানবিক সাম্যের সমাজের গোর খোড়ার সামিল হবে।

-লেখক: রাজনীতিক ও প্রাবন্ধিক