Home জাতীয় সংসদীয় সীমানার খসড়া, সাত আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব ইসির

সংসদীয় সীমানার খসড়া, সাত আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব ইসির

42

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে সাতটি আসনে পরিবর্তন এসেছে। প্রকাশিত খসড়া নিয়ে ১৯ মার্চ পর্যন্ত দাবি, আপত্তি করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তা গেজেট আকারেও প্রকাশ করা হবে।
সেখানে বলা হয়েছে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের আবেদন পাওয়ার পর দাবি, আপত্তি, সুপারিশ ও মতামত নিয়ে প্রকাশ্যে শুনানি করার পর চূড়ান্ত সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক অখণ্ডতাকে প্রাধান্য দিয়ে সংসদীয় সীমানার খসড়া প্রকাশ করার কারণে সীমানায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিলে সংসদীয় আসনগুলো তছনছ হতো। ক্ষতিগ্রস্ত হতো গ্রামাঞ্চলের আসনগুলো। এ বছরের মাঝামাঝি পুনর্নির্ধারিত সীমানা গেজেটে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সীমানা দিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে এবার সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশন যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে তা হলো—প্রতিটি জেলার ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট আসনসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা, প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখা, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক আসনে বিভাজন না করা, যেসব নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা। সীমানা পুনর্নির্ধারণে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে যেসব উপজেলা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বর্তমানে কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে নতুন ডাসার উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর আসনের সঙ্গে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন যুক্ত করা হয়েছে। সিলেট-১ আসনে সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এবং তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে খসড়ায় সিলেট-১ আসনে সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ২৭ নম্বর এবং ৩১ থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলা, একই কারণে সিলেট-২ আসনে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের সঙ্গে নতুন করে মধ্যনগর যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে সরকার শান্তিগঞ্জ উপজেলা করার প্রস্তাব দিয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলা করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে ইসির খসড়া সীমানায়।
প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে অগ্রাধিকার :জানা গেছে, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে সর্বশেষ জনশুমারিকে যতদূর সম্ভব আমলে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা চূড়ান্ত না হওয়ায় এটি পুরোপুরি বিবেচনায় আনতে পারছে না ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে আরো বছরখানেক সময় লাগবে। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তাই আমরা প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবং ভৌগোলিক বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এটা প্রকাশ করার পর যদি জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয়রা সমস্যা মনে করেন, তারা আবেদন করতে পারবেন। ইতিমধ্যে যেসব আবেদন পড়েছে, বেশির ভাগই পরিবর্তন না করার জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানান মো. আলমগীর। তিনি জানান, প্রত্যেকটি আবেদনই শুনানি করা হবে। তাদের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, কেউ যদি বিরোধিতা না করেন এবং ইসির কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, তাদের বক্তব্য যৌক্তিক, তখন হয়তো পরিবর্তন আনা হতে পারে। এছাড়া কোনো পরিবর্তন হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগে একটা উপজেলা ছিল এখন দুইটা উপজেলা হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে আমরা নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। আর কোনো পরিবর্তন আনিনি। যে কেউ এই ক্ষেত্রে সীমানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন।

জনসংখ্যা গুরুত্ব দিলে ঢাকায় আসন বাড়বে : তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যার হিসেবে যদি আসনের সীমানা করি তাহলে দেখা যাবে যে, কোনো কোনো জেলায় একটা আসন হবে। আবার কোনো কোনো জেলা থেকে আসন কেটে এনে অন্য জেলায় দিতে হবে। যেমন ঢাকায় যদি ৫ লাখ ৫০ হাজারের ভিত্তিতে দিই, তাহলে আরো ১০টা আসন বাড়াতে হবে। গাজীপুরে পাঁচটা, চট্টগ্রামে দুইটা, খুলনায় মনে হয় দুইটা বাড়াতে হয়, রাজশাহীতে বাড়াতে হয়। এজন্যই প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আইনেও তাই বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে ১৩৩টি সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে ১০.৫টি সংসদীয় আসন কর্তন করা হয়। শহরাঞ্চলের সংসদীয় আসন বেড়ে যায়। এতে করে সারা দেশে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন ২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে। হুদা কমিশনের ভুল কিছুটা সংশোধন করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করেছিল ইসি।
ইত্তেফাক