Home জাতীয় ষাটোর্ধ বয়স্কদের পেনশনসহ দশ দফা বাস্তবায়নের দাবি

ষাটোর্ধ বয়স্কদের পেনশনসহ দশ দফা বাস্তবায়নের দাবি

45

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির উদ্যোগে নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, ক্ষেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের জন্য অবিলম্বে পল্লী রেশন চালু করে ৫ টাকা কেজি দরে চাল-আটা-লবন, ১৫ টাকা দরে চিনি-কেরোসিন, ৩০ টাকা দরে ভোজ্যতেল ও মশুরের ডাল প্রদান, ষাটোর্ধ বয়স্কদের পেনশন ব্যবস্থা চালু, সরকারি বিভিন্ন গ্রামীণ কর্মসূচি ও প্রকল্পের বরাদ্দ লুটপাট বন্ধ, প্রধানমন্ত্রীর আগাম দুর্ভিক্ষের সর্তকতায় এখন থেকেই দেশের সকল উপজেলায় উপজেলায় প্রয়োজনে অস্থায়ী খাদ্য গুদাম তৈরি করে খাদ্য মজুদ করে দুর্ভিক্ষের সময় রেশন কার্ডের মাধ্যমে গরিব মানুষের মাঝে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, সারা বছর কাজ ও বেঁচে থাকার দাবিসহ ক্ষেতমজুর সমিতির দশ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ চলছে। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের জনগণের বৃহৎ অংশ এই ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুর। যারা মূলত ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ মানুষ। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কোন সরকারই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির ফলে এসব সাধারণ মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় এসকল মানুষকে অনেক সময় বেকার দিন পারতে হয়। অনেকে কাজের আশায় পরিবার-পরিজন ফেলে অন্যত্র চলে যায়। গ্রামে ক্ষেতে বছরে মাত্র তিন মাসের বেশী কাজ থাকে না। ফলে তাদের বাকী সময় অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এজন্য গ্রামে গ্রামে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। ‘১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি’ পুনরায় সকল উপজেলায় চালু ও মজুরি কমপক্ষে পাঁচশত টাকা নির্ধারণের দাবি করেন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে যে কর্মসৃজন কর্মসূচি চালু আছে তা দুর্নীতিতে ভরা। শ্রমিকদের কাগজে কলমে নাম লেখা থাকলেও কোন কাজ করিয়ে প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করিয়ে নিজেরা বেশিরভাগ নিয়ে নেয়। ফলে এ প্রকল্প গরিব মানুষের কোন কাজে আসছে না। গ্রামেরও কোন উন্নয়ন হচ্ছে না।
বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এখনও নারী শ্রমিকরা সমান কাজ করেও পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পায়। নেতৃবৃন্দ নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি দাবি করেন। এছাড়া ক্ষেতমজুরদের কর্মক্ষম সন্তানদের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও বড় বড় জেলায় ভোকেশনাল, আইটিসহ বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে রাষ্ট্রীয় খরচে ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্স থেকে সহজ কিস্তিতে টাকা কেটে রাখতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের বসত ভিটা নাই। তারা অন্যের জমিতে দয়ায় কোনরকমে ঘর বানিয়ে বাস করে। আবার অনেক মানুষ রেলস্টেশন, ফুটপাত, গাছতলা ও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে। সেই সমস্ত ভূমিহীন গরিব অসহায় মানুষের জন্য খাসজমি বন্দোবস্ত দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার যে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’ গরিব মানুষকে তৈরি করে দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বজনপ্রীতি-ঘুষের কারবার। প্রকৃত গরিব মানুষ খুব কমই এসব ঘর পেয়েছে। আবার অনেক জায়গায় নির্মিত ঘর হস্তান্তরের পূর্বেই ধ্বসে পড়ার ঘটনাও দেখা গেছে। প্রকৃত ভূমিহীন দরিদ্র মানুষকে ঘুষ ছাড়া এসব ঘর সঠিকভাবে নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর আজীবন পেনশন পেলেও খেটে খাওয়া মানুষগুলো বয়স হয়ে গেলে অসহায় হয়ে পড়ে। নেতৃবৃন্দ সকল ষাটোর্ধ বয়স্কদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত পেনশন প্রদানের ব্যবস্থার দাবি জানান। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুঃস্থ মাতা ভাতা সরকার প্রদান করলেও তার পরিমাণ এতই কম যে এই সামান্য টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে একজন মানুষের কয়েকদিনও চলেনা। নেতৃবৃন্দ এসব ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধিরও দাবি জানান। এছাড়াও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কোন স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। এসব কেন্দ্রে ডাক্তার, ঔষধ কোন কিছুই পাওয়া যায় না। অসুস্থ মানুষ এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বিনা চিকিৎসায় ফিরে আসে। অথচ সরকার প্রতিবছর বাজেটে কোটি কোটি টাকা স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব বরাদ্দ যায় কোথায়? নেতৃবৃন্দ ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের গ্রামে গ্রামে ক্ষেতমজুর সমিতির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলন করা ছাড়া অধিকার আদায় হবে না।
দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, হাটসভা, পথসভা, গ্রামবৈঠকের মাধ্যমে সরকারের কাছে এসব দাবি জানানো হচ্ছে। এসব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, সহ সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার বাপ্পী, সহ সভাপতি পরেশ কর, আব্দুল মান্নান, আশরাফুল আলম, সদস্য কল্লোল বণিক, লোকমান হোসেন, লিয়াকত আলী কাক্কু, হাফিজার রহমান, আব্দুর রউফ, সুশান্ত দেবনাথ খোকন, প্রদ্যুৎ ফৌজদার, এমদাদুল হক মিলন, গোলাম রাব্বানী, মীর খলিলুর রহমান বাঙালী, সুফিয়া খাতুন, আবদুল আউয়াল, সাহা সন্তোষ, শ্রীকান্ত মাহাতো, অ্যাড. চিত্তরঞ্জন গোলদার, অশোক সরকার, ডা. আবু তাহের ভুঞা, আমির হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।