Home মতামত শোকাবহ আগস্টে বাঙালির চেতনায় বঙ্গবন্ধু

শোকাবহ আগস্টে বাঙালির চেতনায় বঙ্গবন্ধু

30

রিপন আল মামুন:

প্রতিবছর আগস্টের ১ তারিখের প্রথম প্রহর থেকেই রক্তঝরা এক বেদনাদায়ক স্মৃতি বাঙালির বিবেকে এসে ঠুকরে কাঁদে।
১৭ কোটি ভগ্ন হৃদয় এক নীল বিষ মাখা স্মৃতিকে পুরো আগস্ট জুড়ে স্মরণ করে। বাঙালি জাতির ইতিহাস কখনো মসৃণ নয়, শত সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আজকের এই বাঙালি ও বাংলাদেশ। আর এই ঘটনাগুলোর পেছনে যে মানুষগুলোর আত্মত্যাগ রয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে তারা প্রতিনিয়ত যেন জ্যান্ত হয়ে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। সেই দিক থেকে আগস্টে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের প্রতিটা মুহূর্তই বাঙালির হৃদয়কে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। এ যেন ফোরাত নদীর তীরে কারবালার পুনরাবৃত্তি।

বাঙালি হিসেবে বাংলা ও বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা করার সুযোগ আমাদের নেই। বাঙালির ইতিহাসে যেই মানুষটির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা, যার শত সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনভাবে মাথা গোজার ঠাই সেই মানুষটিকেই কিছু কুচক্রী ও কুলাঙ্গার বাঙালি উপেক্ষা করে বসলো। ৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো বাঙালির সূর্য সন্তানকে। কী নির্মম প্রতিদান পেল বঙ্গবন্ধু!
অথচ বঙ্গবন্ধু কখনো কল্পনাও করেননি যে বাঙালি তাকে এমন প্রতিদান দিতে পারে।

সারা জীবন তিনি বাঙালি ও বাংলার কথা বলে গেছেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সব সময় নির্ভীক আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জনমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে প্রস্তুত করেছেন। ১৯৪৭ সাল থেকে রাজনীতি করেছেন এ অঞ্চলের, পূর্ব বাংলার তথা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায়। বাঙালির বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর এ কাজের পুরস্কার হিসেবে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী ১৯৪৮ সালের মার্চে তাকে কারাবন্দি করেন। এটা বঙ্গবন্ধুর প্রথম কারাবাস। শেষ কারাবাস মার্চ, ১৯৭১-এ। এর মধ্যে তিনি থেমে থেমে প্রায় ১৩ বছর জেল খেটেছেন। দু’বার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমবার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়- বন্দি অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। শেষবার মুক্তিযুদ্ধের সময় লাহোরে ইয়াহিয়ার প্রহসনমূলক মামলায় মৃত্যুদণ্ড। দু’বার চেষ্টা করেও শাসকগোষ্ঠী তাঁকে মারতে পারেনি। রাখে আল্লাহ মারে কে? কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তার নিজের দেশের কতিপয় কুলাঙ্গার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। হত্যা করে একটি জাতির সুন্দর পথচলা ও ভবিষ্যৎকে।

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় যে মহাত্মার জন্ম হয়েছিল তখন কে ভেবেছিল যে এই শিশুটি একদিন চির জনমের মতো বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেবে আবার সেই বাঙালিই তার সাথে এমন নির্মম আচরণ করবে। অবশ্য স্রষ্টার ইচ্ছায় টুংগীপাড়ার অজপাড়া গায়ের সেই শিশুটা ক্রমে ক্রমে বাঙালির কান্ডারী হিসেবে তৈরি হতে লাগলো। স্কুল পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপটের সাথে বাঙালির স্বার্থে রাজনীতি করে গেছেন। পরবর্তীতে চল্লিশদশক থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজীতিবিদ হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ’৫১ ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক শাসন, ৬২’র শিক্ষাআন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭০-এর নির্বাচন ও ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম- প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর এই নেতৃত্ব ছিল- জাতির মুক্তির, স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা, ম্যাগনাকাটার।

বঙ্গবন্ধু সারা জীবন যে স্বপ্নকে বুকে লালন করেছিলেন বাঙালি প্রাণ খুলে হাসবে, বাঁচার মতো বাঁচবে সেই স্বপ্নকে অবশ্য কুচক্ররীরা নস্যাৎ করে দিতে পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধুকে তারা সমূলে উৎপাত করতে পারেনি। ৭৫ এ সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দুই কন্যা তার লালিত সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির স্বপ্ন পূরণে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ৭৫ এ ঘাতকরা হয়তো বঙ্গবন্ধুর হৃদয়যন্ত্র কে থামাতে পেরেছে কিন্তু তার আজন্ম লালিত স্বপ্নকে থামাতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বাঙালিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা আজও প্রতিটা বাঙালি স্মৃতিতে ধারণ করে। যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন বাঙালির চেতনায় বঙ্গবন্ধু থাকবেন। ৭৫ এর আগস্টের সেই শোকাবহ শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাঙালি জাতি আজন্য বঙ্গবন্ধুকে চেতনায় ধারণ করবে।

শোকাবহ আগস্টে বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।

-লেখক: শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ফোন : 01797945745
ইমেইল: riponalmamun899@gmail.com