Home জাতীয় একুশে পদক প্রাপ্ত একজন অনন‍্য অসাধারণ খ‍্যাতিমান অভিনেত্রী শিমূল ইউসুফ

একুশে পদক প্রাপ্ত একজন অনন‍্য অসাধারণ খ‍্যাতিমান অভিনেত্রী শিমূল ইউসুফ

29

জাকির হোসেন আজাদী: একুশে পদক প্রাপ্ত খ‍্যাতিমান অভিনেত্রী অনন‍্য অসাধারণ একজন শিমূল ইউসুফ দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সংস্কৃতিক অঙ্গনে আলো ছড়িয়ে আসছেন। তাঁর নন্দিত কাজের জন্য ইতিমধ্যে অনেক পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন। এবার পেলেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরষ্কার একুশে পদক। আজ এই গুণী অভিনেত্রীর সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরলাম।

শিমূল ইউসুফ একই সাথে শিল্পী, অভিনেত্রী ও অ্যাকটিভিস্ট। ৪ বছর বয়সে কবি সুফিয়া কামালের কোলে বসে শিমূল প্রথম মঞ্চে গান করেন। ৬১ বছর ধরে অভিনয় করছেন মঞ্চনাটকে, যার ৪৮ বছর ঢাকা থিয়েটারে। আর অ্যাকটিভিস্ট শিমূলকে পাওয়া গেছে গণ-অভ্যুত্থান থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সংগ্রামে।

১৯৫৭ সালে ঢাকায় জন্ম শিমূল ইউসুফের। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের সবার ছোট তিনি। তাঁরা সব ভাইবোন গান করতেন। চার বছর বয়সে বাবা হারানো শিমূলের মা ৮ ভাইবোনকে বড় করে তোলেন। মা বলতেন, যদি সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় না হও, তাহলে বুঝতেই পারবে না যে পৃথিবীটা কত সুন্দর।

কবি সুফিয়া কামালকে খালা বলে ডাকতেন শিমূল ইউসুফ। কবির দুই মেয়ে সুলতানা কামাল ও সাঈদা কামালদের সঙ্গেই কচিকাঁচার মেলা করতেন শিমূলের বড় তিন ভাইবোন। সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবি জসীমউদ্‌দীন, চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান, ছড়াকার রফিকুজ্জামান দাদাভাই, বেগম সম্পাদক নূরজাহান বেগমসহ আরও অনেকের সঙ্গে। সাংস্কৃতিক পরিবেশ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি শিমূলের। তাঁর পৃথিবীটা ছিল প্রকৃত অর্থেই সুন্দর।

১৯৬৩ সালে কচিকাঁচার মেলার পক্ষ থেকে বরিশাল গিয়েছিলেন শিমূলরা। সেখানে পরিচয় হয় সুরকার আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে। তারপর শিমূলের বড় বোনের সঙ্গে বিয়ে হয় আলতাফ মাহমুদের। পরিবারে যখন আলতাফ মাহমুদের মতো একজন মানুষ যুক্ত হন, তখন সাংস্কৃতিক পরিবেশে যেন ফাগুনের হাওয়া বয়ে যায়। সুরকার আলতাফ মাহমুদ হয়ে ওঠেন শিমূলের পিতাসম-শিক্ষক-গুরু। কোনো সকালে রেওয়াজ না করলে তাঁর সামনে পড়তেন না শিমূল।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দেশে যাত্রা করল প্রথম টেলিভিশন। প্রথম দিনই সেখানে গান করেছিলেন শিমূল ইউসুফ। প্রথম রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়ে সম্মানী পেয়েছিলেন ১০ টাকা। টেলিভিশনে গিয়ে সেই সম্মানী হয় ১৫ টাকা। কেবল গানই নয়, নাচ ও অভিনয়েও পারদর্শী হয়ে উঠছিলেন শিমূল। ঢাকা থিয়েটারের যাত্রালগ্নে ১৯৭৪ সালে ‘বিদায় মোনালিসা’ নাটকের সূর্য চরিত্রে অভিনয় করলেন তিনি। এরপর একে একে ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’র নার্স, ‘শকুন্তলা’র গৌতমী, ‘কীত্তনখোলা’র ডালিমন, ‘কেরামতমঙ্গলে’র শমলা, ‘হাতহদাই’-এ চুক্কুনি, ‘যৈবতী কন্যার মন’-এ কালিন্দি, ‘চাকা’য় কথক, ‘বনপাংশুল’-এ সুকি, ‘প্রাচ্য’তে আবারও কথক এবং ‘বিনোদিনী’র বিনোদিনী। প্রতিটি চরিত্রে তাঁর ছিল পরম নিষ্ঠা ও মমতা। মঞ্চের এই নিষ্ঠার প্রতিদান হিসেবে ঢাকার মঞ্চ থেকে তাঁকে ডাকা হয় ‘মঞ্চকুসুম’ নামে। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের এক প্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন শিমূল ইউসুফ। টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছিলেন শিমূল। ১৯৯১ সালে শেষ করেন টেলিভিশন যাত্রা। শেষ নাটক ‘গ্রন্থীকগণ কহে’।