Home জাতীয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংলাপ

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংলাপ

42

এশিয়া টুডেতে ভারতীয় সাংবাদিকের নিবন্ধ 

ডেস্ক রিপাের্ট: নিবন্ধের শিরোনাম, শেখ হাসিনার আগামী দিনের পথ। ভারতের খ্যাতনামা পত্রিকা দ্য হিন্দুর সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট এডিটর (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) কল্লোল ভট্টাচার্য্য তার লেখাটি শুরু করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নিউ ইয়র্ক সফর নিয়ে। গেলো আগস্টের ওই সফরে মন্ত্রী জাতিসংঘের চিফস অব পুলিশ সামিটে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই সফরটি তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়, কারণ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সে সময়কার আইজিপি বেনজীর আহমেদ; যার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে ইউএস ট্রেজারি র‌্যাবের মোট সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়, র‌্যাবের সাবেক ডিজি হিসেবে সে তালিকায় ছিলেন বেনজীর। র‌্যাবকে এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাস দমন অভিযানের সমার্থক হিসেবে।

নিবন্ধে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে আমলে নেননি শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সামিটে আইজিপির নাম অন্তর্ভুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত বেনজীর আহমেদকে ভিসা দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা এভাবে তার নিজের লোকদের সমর্থন দিয়ে আসছেন। কিন্তু তিনি আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের কোন পদক্ষেপ নেননি। আর প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বৈরিতা, তাতে করে বিশ্বাসযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়া যে কোন সমঝোতা কঠিন বলে মনে হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দল বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে মনে করে। আর বিএনপিও দেখাতে পারেনি যে তারা পরিপক্ক হয়েছে এবং পূর্বের ত্রুটিগুলি স্বীকার করতে প্রস্তুত।

কল্লোল ভট্টাচার্য্য লিখেছেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে একটা স্থবিরতা কাজ করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজের অপরিহার্যতা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সস্পর্কের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার দুটো বিষয় চিহ্নিত করেছেন নিবন্ধকার। তিনি বলেন, প্রথমটি হলো ভারতের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব। দেশটির সঙ্গে তিনি নিরাপত্তা এবং আর্থিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কে ততোটা উত্তাপ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্টতই শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচক, বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে।

নিবন্ধে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসার পর সঙ্গতকারণেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই করতে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফল করেছেন। নির্বাচন নিয়ে সংশয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৮ জুন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করেছেন এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।

নিবন্ধে পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গে এসেছে। এই সেতুকে উল্লেখ করা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সংযোগের কাজগুলির মধ্যে একটি হিসেবে। ২৫ জুন, ২০২২ ল্যান্ডমার্ক সেতুটির উদ্বোধনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সেতুর বিরোধিতাকারীদের কটাক্ষ করেন। এই আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন ড. ইউনূস। শেখ হাসিনার কটাক্ষের লেভেল দেখে মনে হয়েছিল যে, যারা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন দেশের উন্নয়নের বিরোধিতা করছে।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন, এটিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কৌশলগত দিক বলে মনে করছেন কল্লোল ভট্টাচার্য্য। তার মতে, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার পশ্চিমা সমালোচকদের কাছে উপযুক্ত বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।

নিবন্ধের শেষাংশে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামল একটি চমৎকার সামষ্টিক অর্থনীতির গল্প। এক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা রয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-টুয়েন্টি সম্মেলন, সেখানে বাংলাদেশকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক দেশ ভারত।

কল্লোল লিখেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে নেওয়া আর্থিক পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন হবে। আর এর প্রধান উপাদান বাক স্বাধীনতা ও ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা। বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ এবং আসন্ন নির্বাচনের একটি শান্তিপূর্ণ চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একটি বহু প্রতীক্ষিত সংলাপের ওপর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দলের বৈরি সম্পর্কের যে পরিবেশ, তাতে করে কি এমন সংলাপ হতে পারে?
আমাদের সময়.কম