Home জাতীয় শব্দদূষণে কানের সমস্যায় রিকশাচালক-ট্রাফিক পুলিশ

শব্দদূষণে কানের সমস্যায় রিকশাচালক-ট্রাফিক পুলিশ

23

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে বেড়েই চলেছে শব্দদূষণের মাত্রা। যা ক্রমান্বয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে প্রায় ৪২ ভাগ রিকশাচলকই এই শব্দদূষণের শিকার। এরপরই ট্রাফিক পুলিশ, যা শতকরা ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে লেগুনাচালকরা, যা ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের ইব্রাহিম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ নিয়ে করা এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেসের ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক ড. সাইকা নিজাম। তিনি বলেন, ‘রাজপথে শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয় এবং রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণশক্তির ওপর সেই শব্দদূষণের প্রভাব নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ (উত্তর ও দক্ষিণ) রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে এবং এ সব সিটি করপোরেশন রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর (ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাসচালক ও হেলপার, পিকআপচালক, সিএনজিচালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরসাইকেল চালক, রিকশাচালক এবং প্রাইভেট কার চালক) শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়াদের প্রতি চার জনে এক জন কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪২ শতাংশই রিকশাচালক। এছাড়া প্রায় ৩১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ, প্রায় ২৪ শতাংশ লেগুনাচালক, ২৪ শতাংশ দোকানদার, ১৬ শতাংশ বাসচালক, ১৫ শতাংশ প্রাইভেট কারচালক এবং ১৩ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক। এসব সমস্যায় ভোগাদের ৭ শতাংশের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট) ব্যবহার জরুরি।
সমস্যায় ভোগা এসব মানুষের সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে। ঢাকার কাছের এই বিভাগের ৫৫ শতাংশ মানুষ শব্দদূষণের শিকার। সিলেটে প্রায় ৩১ শতাংশ, ঢাকায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, রাজশাহীতে প্রায় ১৪ শতাংশ রাজপথে কর্মরত পেশাজীবী শব্দদূষণে ভুগছেন। এ সময় প্রতিকারে শব্দদূষণের উৎস এবং মাত্রা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। রাজপথে পেশাজীবীদের কর্মঘণ্টা কমানো, যেখানে প্রয়োজন সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা, রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশের প্রতি বিশেষ নজর, নিয়মিত শ্রবণ পরীক্ষার তাগিদ দেওয়া হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, শব্দদূষণকে আমরা তেমনটা গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এটাও বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে তা ভাবিনি। বয়স বাড়লেই মানুষ ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে শুরু করে। কানে না শোনার নানা কারণও থাকতে পারে। শুধু রাস্তায় নয়, বাসাবাড়ির আশপাশে গড়ে ওঠা ভবনেরও দায় রয়েছে। এ জন্য আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ কানে কম শোনা থেকে শুরু করে স্থায়ী বধিরতা তৈরি করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪৩২ মিলিয়ন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কানে শোনার সমস্যায় ভুগছেন, যাদের চিকিৎসার পাশাপাশি হেয়ারিং এইড ব্যবহার করা প্রয়োজন। এদের ৮০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে এবং এর অর্ধেকের ক্ষেত্রেই এ সমস্যা এড়ানো যেত।
ইত্তেফাক