Home জাতীয় শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে চালু হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে চালু হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

চ্যালেঞ্জে সফল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

101

এম এইচ নাহিদ ।। বিশ্ব ব্যাংকের মিথ্যা অজুহাত। ধপে টিকেনি কানাডার আদালতে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বপ্নের মিনার-পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। এ সেতু আমাদের আবেগ, জাতীয় অহংকার ও সাহসের প্রতীক। খরস্রোতা পদ্মার বুকে গড়ে উঠা এই সেতু প্রমাণ করলো বাংলাদেশ চাইলেই পারে। এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী  নেতৃত্বের কারণে। দৃপ্ত শপথে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বলেই পদ্ম সেতু আজ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক হয়েছে। এ সেতুর কারণে যেমন দক্ষিণ-পশিচম জনপদের ২১ জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে, তেমনি বদলে যাবে বাংলাদেশ।

জানাগেছে, আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাংলা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সাজ সাজ রব উঠেছে। রাজধানী ঢাকাও সাজছে নতুন রূপে। বের হবে বিশাল আনন্দর‌্যালি। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে প্রাণঢালা অভিনন্দন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সূত্রে তেমনটাই জানাগেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের উজ্জ্বল মাইলফলক এই সেতুর স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল যমুনা সেতু উদ্বোধনের সময়। নানা পরিকল্পনার পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মাওয়া ফেরিঘাটের কাছেই এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শুরুতে দেশি-বিদেশি অনেকেই এ সেতু নিয়ে তাচ্ছিল করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরি মেরে সেসব সমালোচনা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর যাত্রা শুরু করেন। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এ সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যুক্ত হয়। কিছুদিন পরেই মিথ্যা অজুহাত দিয়ে কেটে পরে। কানাডার আদালতে সেই অজুহাতের সত্যতা প্রমাণ করতে পারে না বিশ্বব্যাংক। সেদিন’ই বাংলাদেশের বিজয় হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সাথে একে একে কেটে পড়ে জাইকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আইডিবি।

নানা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেন সাহসী সিদ্ধান্ত-‘নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলা হবে পদ্মাসেতু।’ হয়েছেও তাই। তাতে বাংলাদেশের জিডিপ ‘র প্রবৃদ্ধি যেমন ফল্ট করেনি, তেমনি ফল্ট করেনি বার্ষিক প্রবৃদ্ধি। বরং মাথাপিছু আয় আরো বেড়েছে। একই সাথে দেশের মেগা প্রকল্পের কাজও চলেছে সমানতালে। সরকারের অনেক সমালোচনা থাকতে পারে, তবে উন্নয়নে যে বাংলাদেশ এগিয়েছে-তা আর কয়েকদিন পরেই টের পাবে সকলে। এক সাথে মানুষ চলবে পদ্মাসেতু, ফোর লেনের হাইওয়ে ও মেট্রোরেল দিয়ে। ইতোমধ্যে  ফোর লেনের হাইওয়েগুলোতে জার্নি করলে মনে হয় বিদেশি কোনো পথে চলছে মানুষ।  

দক্ষিণ বাংলার মানুষের মনে আজ আনন্দের ঢেউ। ২৫ জুনের পরেই তারা সকালে ঢাকায় এসে বিকালে বাড়ি ফিরবেন। এটি কেবল সেতু নয়, দক্ষিণ বাংলার সাথে রাজধানী ও সারাদেশের সেতুবন্ধন। এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ বাংলা হবে পর্যটনের এক উৎকৃষ্ট হাব। ছুটি পেলেই ঢাকা ও অন্যান্য নগরের বাসিন্দারা ছুটবেন দক্ষিণ বাংলার প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের সন্ধানে। তারা যাবেন কুয়াকাটা, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শনে, যাবেন পায়রা বন্দরে। পদ্মার চরগুলোয় গড়ে উঠবে নতুন নতুন রিসোর্ট ও পরিকল্পিত ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র। সরকারও এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে পদ্মাপারের পুরো এলাকাকে উন্নত করার লক্ষ্যে। শোনা যাচ্ছে, পদ্মার চরাঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র, বিমানবন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ভাবছে সরকার। পদ্মা সেতুর কাছেই দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি গড়ে উঠছে। এখানে থাকবে আধুনিক আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব সুযোগ-সুবিধা। পদ্মা সেতুর আশপাশে গার্মেন্ট ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটবে। খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে শিপ-বিল্ডিং শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

মোংলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা ইপিজেড, পায়রাবন্দর, রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা গেলে এসব প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থান ঘটবে। একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বছরে প্রায় বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ১.০৪ শতাংশের কর্মসংস্থান এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার ফি বছর ১.০১ শতাংশ হারে কমবে। এর প্রভাবে সারা দেশের দারিদ্র্য কমবে ০.৮৪ শতাংশ হারে।

দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি অন্তত ২.৫ শতাংশ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে তখন দেশের জিডিপি বাড়বে অন্তত আরও ১.২৩ শতাংশ। পদ্মা সেতু এ অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাসহ মানব উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বাংলাদেশের।