Home মতামত দেখি ব্যাডারা কবে কি করে…

দেখি ব্যাডারা কবে কি করে…

44

অমি রহমান পিয়াল: আমাগো ছোটবেলায় টেইলরমেড জামাকাপড় পরারই চল ছিলো। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে রমনা ভবনে কয়েকটা দোকান ছিলো- ইব্রাহিম, পপুলার, বস ইত্যাদি। ভালো প্যান্ট শার্ট ওইখান থিকাই বানাইতো পোলাপাইন। বেলবটম, জিন্স, কড, লেদার। মাইকেল জ্যাকসনের থ্রিলার যখন রিলিজ পাইলো সে সময় সেমিলেদার রেক্সিনের প্যান্ট পরার ঝোক হইছিলো। লোকজন পলিথিন পইরা পচানোর আগে খুব অল্প কয়জন পরতো। ঢাকা কলেজে আমি আর সোহেলই (ডাঃ জাহিদ হোসেন) পরতাম, আর মগবাজারে আমি আর টোকন ভাই। ওইটাও পপুলার থিকা বানানো। ছয় নম্বর বাসে চইড়া কোচিংয়ে যাই, লোকে হাত দিয়া ধইরা দেখে, অবাক হয়। কেউ কেউ জিগায়, ভাই গরম লাগে না?
স্কুলে পড়ার সময় জুতাও মুচিরে দিয়া বানায়া পরছি। কালো চামড়ার জুতা। আমাদের সময় হাইপ বলতে আশির দশকের শুরুতে আসলো ডিস্কো জুতা। কাউবয় বুটের হিলের মতো হিল। চিকন ত্যাড়চা। এর আগে চলছে ফ্লাট হিল। বেলবটমের সঙ্গে ইয়া বিশাল হিল। ফুল সাইজ। লোকজন তার স্বাভাবিক উচ্চতার থিকা ছয় ইঞ্চি উচা হইয়া হাটতো। সেদিন ফেসবুকে একজন তার বাবা-মায়ের ছবি শেয়ার করছিলো। সেখানে স্টুডিওতে তোলা সেই ছবিতে দেখছিলাম তার বাবার পায়ে সেই হিল। কলেজ লাইফেই আসছিলো সিলসিলা শার্ট। সুপারহিট হিন্দি ছবির নামের সঙ্গে তাল মিলায়া জামার নাম রাখার সেই শুরু। কাপড়ের মধ্যে জরি লাগানো শার্ট। আমিও পরি, রিকশাওয়ালাও পরে।
শহরে শোরগোল ফেলায়া দিয়া আসছিলো জাস্ট জিন্স। একটা বড় জে, উপরের লাইনে ইউএসটি, নিচের লাইনে ইএএনএস। ইস্কাটনে বিশাল এই দোকানটায় দারুণ সব জিন্সের কাপড় পাওয়া যাইতো। নানা শেডের। ওরাই বানায়া দিতো। জিন্সের ব্র্যান্ডগুলার সঙ্গে পরিচয় ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। র‌্যাংলার, লিভাইস, লি। বাপে তখন ইরান থাকে, ইরানে তখন শাহের রাজত্ব, আমেরিকান জিনিসপত্র ভরপুর। বাপে পাঠাইতো আর সেগুলা সাইজ ঠিক করে পরতাম। এরপর মনসুর ভবন এই চর্চায় বাদ সাধলো। তখনও কালীগঞ্জে জিন্স বানানোর তাত বসে নাই, নদীর পাড়ে সার সার কইরা পইড়া থাকে না বিভিন্ন ব্র্যান্ড। বিদেশী চমৎকার সব জিন্স পাওয়া যাইতো মনসুরে। লিভাইসের প্রেমে পড়ার সেই শুরু। সঙ্গে দারুণ সব টিশার্ট। ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, লাকস্টে। তবে কমফোর্টেবল জিন্স একটাই পাইছিলাম, টমি হিলফিগার, একটু ঢোলা কিন্তু জোস, পাতলা ডেনিম। এই মাল আর পাইলাম না।
ক্লাস টেনে পড়ার সময় প্রথম দারুণ কেডস নিয়া আসলো পাওয়ার। জিন্সের সঙ্গে পরার মতো।এরপর ফার্মগেট সুপার মার্কেটে হঠাত ক্রেইজ লাগলো। ব্রুস লির কুংফু সু। কালো কাপড়ের পাতলা কনভার্স। একই সঙ্গে আসলো পোল্যান্ডের হকি বুট। কলেজে উইঠা পাইলাম সিন্ডোল। পুরা ব্ল্যাক। আর্মি বুটের মতো একটা, আরেকটা লো নেক। অ্যাডিডাস, নাইকির সঙ্গেও পরিচয় সেই সময়েই। উৎস এলিফেন্ট রোডের লংমার্চ। ছোট্ট একটা দোকান, আশে পাশে বিশাল বিশাল নাম। কিন্তু লংমার্চেই মিলতো পছন্দের সব জিনিস। দাম একটু বেশী হইলেও আসল জিনিস। ৮৫ সালের শেষ নাগাদ আফজাল হোসেন নিয়া আসলেন পিয়ারসন্স। দর্জির শার্ট পরার দিন শেষ হইলো আমাগো বয়সী পোলাপাইনের।
এত কাহিনী চারণ করলাম প্রসঙ্গক্রমে। বহুদিন পর দুইটা শার্ট বানাইতে দিলাম। গত দুইবছর ধইরা আমি একই শার্ট প্যান্ট জুতা পইরা চলি, ছবি তুলি এইটা আমারে বিচলিত করে না। আমার ওইটাইপের কামনা বাসনা নাই। তবে পুরান হইলেও ভালো জিনিস পরি। বড় ভাই ছোট ভাইরা লিভাইস পাঠাইছিলো, এক ছোটভাই দিছিলো অ্যাডিডাস, চন্দনা দিছিলো পুমা। সবই এখনও ঝাক্কাস আছে। আমার টিশার্ট অফুরন্ত। যদিও কলার টিশার্ট পড়ি এবং সেই মাল কম। সেদিন আ্ড্ডায় বলতেছিলাম হাফ শার্টের কথা। সুমন দুইটা কাপড় আইনা দিলো। সেগুলাই বানাইতে দিলাম। অনেক বছর পর দর্জির ফিতায় নিজেরে মাপা। আরেকবার যামু স্যুট বানাইতে ইনশাল্লাহ। জীবনে এই একটা হাউশই বাকি রয়া গেছে। দেখি ব্যাডারা কবে কি করে…
-লেখক: একজন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।

*মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখাই লেখকের নিজস্ব ব্যক্তিগত বক্তব্য বা মতামত।