Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে টাকা, জাগছে পুঁজিবাজার

শক্তিশালী হচ্ছে টাকা, জাগছে পুঁজিবাজার

28

ডেস্ক রিপোর্ট: তেজ হারাতে শুরু করেছে ডলার। এখন প্রতি ডলার ১২০ টাকার নিচে নেমে ১০০ টাকার দিকে ছুঁটছে। অন্যদিকে এর প্রভাবে জাগতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজার। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ডলারের বিপরীতে অব্যাহতভাবে কমতে থাকে টাকার মান। এতে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চাহিদা বাড়ার কারণে খোলাবাজারে তা ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

জানা যায়, ৭ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ কর্মদিবসে ১৬৩ পয়েন্টের পতন হয় ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত দরপতন ইস্যুতে। তবে পরের সপ্তাহে তিন কর্মদিবসেই সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন সূচকে আরও যোগ হয়েছে পয়েন্ট। সূচক খুব একটা লাফ দিয়েছে এমন নয়, দরপতনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেলা শেষে ১৮ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

পুঁজিবাজারে ধসের কারণে জুলাইয়ের শেষে দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা গণনা নিয়ে এক যুগের দাবি পূরণ হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দেয়, শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য ধরে হিসাব হবে এই বিনিয়োগসীমা।

গত সপ্তাহে দুটি সরকারি ছুটির কারণে লেনদেন হয় তিন দিন। এই তিন দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৯২ পয়েন্ট। আর লেনদেন ৫৮৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকায়। রোববার দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৬ লাখ ২ হাজার টাকা। বেশির ভাগ শেয়ারের দর অবশ্য কমেছে। ১৪৩টির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৩৬টির দর। ১০২টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দিনের সমান দামে।

একক কোম্পানি হিসেবে আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। শেয়ার সংখ্যা ও টাকার অঙ্কে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে এ কোম্পানির। বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ১৯৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার। দর বেড়েছে ২৩টি কোম্পানির। অন্যদিকে ১৬টি বা ২৭ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। আর দর কমে লেনদেন হয়েছে ২০টির, অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৯০ শতাংশ কোম্পানির।

লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, মার্কেটে পড়েছিল সেখান থেকে উঠছে। এটার একটা কারণ হতে পারে ফ্লোর প্রাইস, যা মানুষের মনোবল বাড়িয়েছে যে, এর নিচে দর নামতে পারবে না। এ ছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজারবান্ধব মনোভাব হয়তো কিছুটা আস্থা ফেরাতে পেরেছে।

রাজধানীর ফকিরাপুলের বিজয় মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রশিদ ফকির বলেন, শেয়রবাজারের মতো দাম আরও বাড়বে মনে করে অনেকেই ডলার কিনে ধরে রাখার কারণে লাগামহীন দর বাড়তে থাকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ও ব্যবসায়ীদের ডলার বাজারে ছাড়ার কারণে দর এখন কমে আসছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডলার পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও নজরদারী বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, অনেকেই ডলারের ইনফরমাল ব্যবসা করছে। যেমন কোনো প্রবাসী দেশে এসে বা অন্য যে কেউ ৫০০-১০০০ ডলার কোনো মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ভাঙিয়ে নিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিয়ম নেই। এতে অবৈধ ব্যবসা বাড়ছে। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্য কোনো ফরমেট দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যবাধকতা করলে তাতে সরকারের রিজার্ভ বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি দাবি তুলে ধরে হাফিজুর রশিদ ফকির বলেন, ‘আমরা যারা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করছি, তারা যদি ১০ হাজার ডলার কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা রাখে এবং এর বিপরীতে যদি আমাদেরকে ওই সমপরিমাণ ডলার মুল্য ৩-৪% সূদে লোন দেওয়া হয়, তাহলে এ সেক্টর আরও এগিয়ে যাবে। এতে এ সেক্টরে অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এর আগে জানান, ‘আমদানি কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা কার্যকর হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ৩১ শতাংশ আমদানি কমেছে। ফলে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে ডলার বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে যাবে।’
আমাদের সময়.কম