স্টাফ রিপোর্টার ।। আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ। প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। চলছে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণের কাজ। আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে বিরতিহীনভাবে। নির্বাচনে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারপরেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। ইতোমধ্যেই প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস, ভোটকেন্দ্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ করেছে নির্বাচন বিরোধী দুর্বৃত্তরা। তারা ট্রেনেও আগুন দিয়েছে। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী উৎসব।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ জন। নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৯ জন। তালিকায় নতুন ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৫৪ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য মোট ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ৪২ হাজার ১৪৮টি। মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। নির্বাচন ঘিরে বির্তক এড়াতে এবং ভোটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবারই প্রথম নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। তবে দুর্গম ও চরাঞ্চল এবং যাতায়াত সমস্যা রয়েছে এমন ২৯৭১ ভোটকেন্দ্রে আজই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ২৯৯ আসনে। সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগেই নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে আসনটির ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। এই নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে  ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এসব দল থেকে মোট প্রার্থী ১ হাজার ৫৩৪ জন। বিগত সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ৪৩৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী লড়ছেন এবারের ভোটযুদ্ধে। সব মিলিয়ে মোট প্রার্থী ১ হাজার ৯৭০ জন। এই নির্বাচনে ৯০ জন নারী প্রার্থী এবং ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী রয়েছেন ১ জন। নির্বাচনে বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬ রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করেছে। তারা রোববার ও সোমবার সারাদেশে ভোট প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে হরতালের ডাক দিয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নিয়েছে  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল) ও গণতন্ত্রী পার্টি ।

নির্বাচনে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী পোলিং কালেকশনের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকবেন। তারা ভোটগ্রহণ করবেন। আরো ১ লাখ স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। মাঠে থাকবেন ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত । মাঠে রয়েছেন ৬৫৩ জন বিচারিক হাকিম।

ভোটগ্রহণ ঘিরে এমন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হলেও মাঠ পর্যায়ে উত্তাপ ও সংশয় দুই-ই বিরাজ করছে। এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো, ক্যাম্প ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে আন্তঃনগর ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে দেওয়া আগুনে ঝরেছে প্রাণও। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কাল দেশের ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে।