Home জাতীয় যে বেশি ভোট পাবে সে বিজয়ী,এ পদ্ধতি সর্বস্তরের মানুষের মতের প্রতিফলন থাকে...

যে বেশি ভোট পাবে সে বিজয়ী,এ পদ্ধতি সর্বস্তরের মানুষের মতের প্রতিফলন থাকে না

30

সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের আলোচনা সভায় বক্তারা

স্টাফ রিপোটার: বর্তমানে প্রচলিত আসনভিত্তিক এবং আসনে যে বেশি ভোট পাবে সে বিজয়ী এ পদ্ধতিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতের প্রতিফলন থাকে না। বাংলাদেশে এতদিন ধরে এই পদ্ধতিতেই ভোট হচ্ছে। এবং এই ধরনের ভোটে জোরের সংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব ঘটছে। সৃষ্টি হচ্ছে আস্থাহীনতা। বাংলাদেশে প্রত্যেকবার ভোটের পরই বিজয়ী দল বাদে সবাই ওই নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছে, ধীরে ধীরে নির্বাচন পদ্ধতিকে হাস্যকর বানিয়ে যেন তেন উপায়ে ভোটে জিততে চলছাতুরির আশ্রয় নিতে বড় দলগুলো মোটেও কার্পণ্য করছে না। এই অবস্থার অবসান দরকার। দরকার সবার মতে প্রতিফলন, দরকার সুস্থ গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। দরকার নির্বাচন পদ্ধতির প্রতি মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরিয়ে আনা। সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে এর সূচনা হতে পারে।
১৬ জানুয়ারি সোমবার, বিকাল সোয়া ৪টায় সেগুনাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় বক্তারা এমনটাই বলেছেন।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের প্রাক্তন উন্নয়ন গবেষণা প্রধান ড. নজরুল ইসলাম। তিনি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ধরন ও বিভিন্ন দেশে এর প্রচলন এবং ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে বাংলাদেশের এখনকার অনাস্থার ও জোরের পরিবেশ বদলে ফেলতে নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন ও আনুপাতিক নির্বাচনই যে দৃশ্যত সবচেয়ে কার্যকর সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
তার প্রবন্ধ ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও কী কী করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জাতীয় পার্টির সাংসদ রানা মোহাম্মদ সোহেল, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী।
সাংবাদিক মীর মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তারা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, রাজনৈতিক দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করা, সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি ও শুরুতে সীমিত পরিসরে সংখানুপাতিক বা আনুপাতিক নির্বাচন চালু করে এর যদি কোথাও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, কিংবা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আরও কীভাবে একে কার্যকর করা সম্ভব হবে তা খতিয়ে দেখার সুপারিশ করেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, আনুপাতিক নির্বাচন নির্বাচন পদ্ধতি ঘিরে যে আস্থাহীনতা তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, কিন্তু মূল্যবোধ সার্বজনীন না হলে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র চালু না হলে, সাংসদদের কাজ সুনির্দিষ্ট না করে তাদের ব্যবসার পথ বন্ধ না করা হলে পদ্ধতি বদলে সুফল পাওয়া যাবে না।
রানা মো. সোহেল এমপি বলেন, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলে সাংসদদের সম্মান এখনকার চেয়ে অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে দল যেভাবে প্রার্থী বাছাই করবে, সেটা আরও কী করে জনঘনিষ্ঠ করা যায়, সেদিকেও নজর রাখার উপায় বের করা দরকার।
ব্রিগেডিয়ার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু নিয়ে আলোচনা তারা তাদের ইসিতে শুরু করলেও বড় দলগুলো এ কথা শুনতে নারাজ। তবে এই পদ্ধতি বিদ্যমান পদ্ধতির ত্রæটিগুলো থেকে মুক্ত হওয়ায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বদলের সম্ভাবনা তৈরি করবে। এই আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমে নারী, সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা যাবে। তবে এসব তখনই কাজে আসবে, যখন বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব বদল হবে, এবং তারা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে একত্রে বসে এ ধরনের পদ্ধতি কার্যকরে সম্মত হবে। তিনি এই আলোচনা সভাকে এই ধরনের প্রথম উদ্যোগ অভিহিত করে সমাজের বিভিন্ন ¯Íরে আনুপাতিক নির্বাচন ও সংশিøষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন।
বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গণতন্ত্র মানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সম অধিকার। সিদ্ধান্ত প্রণয়নে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা। তবে আনুপাতিক নির্বাচন এলেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উলøম্ফন ঘটবে না, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু এই ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি বর্তমানের নষ্ট হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিবেশ, একক ব্যক্তির প্রাধান্য সৃষ্টি হয় এমন নির্বাচন পদ্ধতি থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্তি দিতে পারে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স তার বক্তব্যে আনুপাতিক নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জাতীয় সংসদে নির্বাচিতদের কাছ থেকে স্থানীয় সরকারের হাতে যেসব ÿমতা দেওয়া যায়, সেগুলো তুলে নেওয়া দরকার বলেও জানান তিনি।
সিপিবির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, তার দল এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট দীর্ঘদিন ধরেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তিনি জনগণের ভোট দেওয়া ও ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন এবং সব রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
মনজুরুল আহসান খান তার বক্তব্যে বলেন, সবাই তত্ত্বাবধায়ক নাকি নির্দলীয় না দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা নিয়ে হুলেøাড করছে। অথচ পদ্ধতি নিয়ে কেউ কথা বলছে না। আমাদের উচিৎ এই সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির আলোচনা ছড়িয়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে যে সরকারই হবে, সে সরকার হবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার, সংখ্যালঘিষ্ঠের সরকার হবে না। তবে যে পদ্ধতিতেই নির্বাচন হোক না কেন, ভোট ডাকাতি, টাকার খেলা থাকলে কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে এম এম আকাশ আলোচক ও শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকের আলোচনা সভা সূচনা মাত্র, আনুপাতিক পদ্ধতির গুরুত্ব নিয়ে সমাজ গবেষণা কেন্দ্র আরও আলোচনা, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠকসহ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাবে। তিনি অন্যদেরও এই প্রচার প্রচারণায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।