Home জাতীয় ময়লার গাড়ি যেন মৃত্যুদূত

ময়লার গাড়ি যেন মৃত্যুদূত

30

ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার ( বর্জ্যবাহী ) গাড়ির অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের নিহতের রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) উত্তর সিটি করপোরেশনের ( ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও একজন। নিহতের নাম- আহসান কবীর খান। তিনি দীর্ঘ দিন প্রথম আলোর পেস্টিং বিভাগে কাজ করতেন। শুধু নাঈম হাসান বা আহসান কবীর খানই নয়।
এর আগেও এ ধরনের গাড়িতে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। চলতি বছরের মার্চে ডিএসসিসির একই ধরনের গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। পরের মাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন রিকশা চালক মো. মোস্তফা।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনতা ওই সময় ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর মিরপুরে ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় আবদুল খালেক হাওলাদার (৬৭) নামে একজন ভ্রাম্যমাণ পান বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর বংশালে ডিএসসিসি’র ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নূরজাহান বেগম (২১) এক গৃহবধূ নিহত হন। এ ঘটনায় তার স্বামী মো. আসিফ উল্লাহ আহত হয়েছেন। একের পর এক দুর্ঘটনা জানান দিচ্ছে ময়লার গাড়িগুলোর বেপরোয়া আচরণের। তাছাড়া চালকের অদক্ষতাকেও এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন অনেকে। তাদের এ খামখেয়ালিপনায় ঝরছে একের-পর এক প্রাণ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসির মোট যানবাহন ৫১৩টি হলেও সংস্থাটির নিবন্ধিত চালক মাত্র ১৪৭ জন। এছাড়া ২০০টি গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালকদের দিয়ে। তাদের অধিকাংশই ক্লিনার। এসব চালকের নেই প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স। বাকি ১৬৬টি গাড়ি কীভাবে চলে সেটার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ডিএসসিসি। ডিএসসিসির বাকি গাড়িগুলো চলে অদক্ষ ও অনিবন্ধিত চালক দিয়ে। ফলে গাড়িগুলো দিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
দক্ষিণ সিটির পরিবহন বিভাগ সূত্র বলছে, যে গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়েছেন সেটি ভারী যান। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহারের জন্য এমন ৩১৭টি ভারী যান আছে। কিন্তু চালক আছেন মাত্র ৮৬ জন। ফলে এমন দুর্ঘটনা সংখ্যা বাড়ছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী সব যানবাহনের রেজিট্রেশন থাকতে হবে। সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক। সিটি করপোরেশনের ময়লা গাড়ি যদি নিবন্ধন না থাকে অথবা চালকের লাইসেন্স না থাকে তাহলে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিবো বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্য একটি সূত্র বলছে, নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়িটি যে চালাচ্ছিলেন তিনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। রাসেল দৈনিক মজুরিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে আহ্বায়ক এবং মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
তিনি আরও বলেন, কমিটির কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে এ দুর্ঘটনা কীভাবে সংগঠিত হলো তা উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য সুপারিশ করা।
-ইত্তেফাক