Home স্বাস্থ্য মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনায় নীতিমালায় দুর্বল

মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনায় নীতিমালায় দুর্বল

31

সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি হাসপাতালে ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় নীতিমালায় দুর্বলতার কারণে পরবর্তী সময়ে মেরামত প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ১৫/২০ কোটি টাকা মূল্যের এসব মেশিন মাত্র তিন-চার বছরের ওয়ারেন্টি সার্ভিস মেয়াদ থাকে। ফলে পরবর্তী সময়ে ত্রুটি দেখা দিলে মেরামতের জন্য ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হয়রানির শিকার হতে হয়। মাসের পর মাস বন্ধ থাকে সেবা কার্যক্রম। চিকিৎসকরা জানান বিদেশ থেকে ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে দুর্বল চুক্তির কারণে পরবর্তী সময়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব মেশিন মেরামতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো দক্ষ জনবল ও ওয়ার্কশপ নেই। ফলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি হাসপাতালের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, রেডিওথেরাপির কোবাল্ড মেশিন, নারীদের জরায়ুর ক্যানসার থেরাপির জন্য ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন, হৃদরোগের এনজিওগ্রাম করার জন্য ক্যাথল্যাব মেশিন, ইটিটি মেশিনসহ নানা ধরনের ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। এসব মেশিন টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ থেকে এসব মেশিন আমদানি হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাইরে কোথাও মেশিনের উপকরণ পাওয়া যায় না। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। ওয়ারেন্টি শেষ হলে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাদের সার্ভিস পাওয়া যায় না। নানা অজুহাত তুলে বাড়তি মেরামত খরচও দাবি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, বেসরকারি হাসপাতালেও এসব মেশিন ক্রয় করা হয়। কিন্তু তাদের সার্ভিসে কোনো সমস্যা হয় না। যত সমস্যা সরকারি হাসপাতালের মেশিনে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ১০/১২ বছরের ওয়ারেন্টি সার্ভিস নিশ্চিত করে মেশিন ক্রয় করে থাকে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের মেশিনে ওয়ারেন্টি থাকে তিন-চার বছর। ফলে ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্বল চুক্তির কারণে ভারী মূল্যবান এসব মেশিনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। গত সাত মাস ধরে চমেক হাসপাতালে এমআরআই ও ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

২০১৬ সালে মেশিনটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় ক্রয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট রেডিওলজি বিভাগে এমআরআই মেশিনটি বসানো হয়। মেশিনটির ওয়ারেন্টি ছিল তিন বছর। ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে জানালে তারা মেরামতের জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাহিদাপত্র প্রেরণ করে। পরে মেডিটেল কোম্পানি মেশিনটি মেরামত করে। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য সিএমসি করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় বার চিঠি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৯ মার্চ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক বছরের সিএমসি বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার ডলার দাবি করেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন মেশিনটি মেরামত করতে ৭০/৮০ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বলছে আগে এক বছরের জন্য সিএমসি করতে হবে। তখন তারা মেরামতে উদ্যোগ নিবে। সিএমসি করতে গেলে প্রতি মাসে ৯ লাখ টাকা সিএমসি বাবদ পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব মেশিনটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে অচল অবস্থায় রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ক্যাথল্যাব মেশিনটি বসানো হয়েছে। এটি মেরামত করতে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এর পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিক বার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

রেডিওথেরাপি বিভাগের ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি গত ১৪ জুন থেকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এটি দিয়ে নারীদের জরায়ুর ক্যানসারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রকৌশলীরা মেশিনটি চালু করতে চেষ্টা করলেও মেশিনের পার্টস সরবরাহ না থাকায় সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে মেশিনটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হয়। জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায় জার্মানি থেকে এক সঙ্গে পাঁচটি মেশিন ক্রয় করা হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি মেশিনের ৩০ শতাংশ টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। বাকি টাকা পরিশোধ করা না হলে ওয়ারেন্টি সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। ফলে এখন মেশিনটি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২০১৫ সালে এমআরআই মেশিন বসানো হয়। দেড় বছর ধরে নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে মেশিন। চিনের এই মেশিনটির তিন বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। এ সময়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে মেরামত করে দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইত্তেফাক/